ভারত কি সত্যিই রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করছে, মোদি সরকার কী বলছে
Published: 16th, October 2025 GMT
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে নানাবিধ মন্তব্যের পর ফের বোমা ফাটালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনছে বলে আমি অসন্তুষ্ট। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার) আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা তাঁরা বন্ধ করে দেবেন। তবে খুব দ্রুত তা হবে না। একটু সময় লাগবে। তবে শিগগিরই তেল কেনা বন্ধ হবে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘এটা এক বিরাট পদক্ষেপ। এবার আমরা চীনকেও বাধ্য করব এই ব্যবস্থা নিতে। পশ্চিম এশিয়ায় (যুদ্ধ থামাতে) আমরা যা করেছি, তার তুলনায় এটা করা (চীনকে রাজি) সহজতর।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ভারত তেল কেনা বন্ধ করে দিলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। ওরা (ভারত) আমাকে আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যেই তেল কেনা বন্ধ করে দেবে। যুদ্ধ শেষ হলে ফের রাশিয়ার দ্বারস্থ হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে ভারতে শোরগোল পড়ে যায়। প্রথম কারণ, ট্রাম্পের বয়ানে মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন ‘আজই’। অর্থাৎ, ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার রাতে। তাঁর কথায় মনে হওয়া স্বাভাবিক যে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর ফোনালাপ হয়েছে। কে কাকে ফোন করেছিলেন তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।ট্রাম্প এই ঘোষণাকে ‘ব্রেকিং হেডলাইন’ বলে মন্তব্য করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে ভারতে শোরগোল পড়ে যায়। প্রথম কারণ, ট্রাম্পের বয়ানে মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন ‘আজই’। অর্থাৎ, ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার রাতে। তাঁর কথায় মনে হওয়া স্বাভাবিক যে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর ফোনালাপ হয়েছে। কে কাকে ফোন করেছিলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। গণমাধ্যম থেকে বারবার এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করা হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (ভারতীয় সময়) বেলা পৌনে ১১টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে যা বলেন, তাতে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখাই যে সরকারের অগ্রাধিকার, সেটাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ট্রাম্পের তোলা মূল প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। এ কথাও জানানো হয়নি, বুধবার রাতে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির কথা হয়েছিল কি না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের দেওয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত তেল ও গ্যাসের এক গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক। অস্থির জ্বালানি–বাজারে দেশের উপভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা করাই দেশের অগ্রাধিকার। সেই স্বার্থের বিষয় মাথায় রেখেই দেশের আমদানি নীতি রচিত।’
বিবৃতিতে মূল দুই প্রশ্নের উত্তর অনুচ্চারিত। প্রথমত, মোদি-ট্রাম্প আলোচনা হয়েছে কি না। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পকে মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার বিষয়ে কোনো আশ্বাস দিয়েছেন কি না। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই দুই বিষয় স্পষ্ট করার ব্যাপারে বারবার অনুরোধ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাড়তি কিছু জানাননি।বিবৃতিতে জয়সোয়াল বলেন, ‘জ্বালানি নীতির লক্ষ্য দুটি। দাম ঠিক রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা। বাজারের অবস্থা বুঝে আমরা জ্বালানি উৎসে বৈচিত্র্য আনতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে বলা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা তাদের থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এক দশকে তার পরিমাণও বেড়েছে। মার্কিন সরকার ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।’
বিবৃতিতে মূল দুই প্রশ্নের উত্তর অনুচ্চারিত। প্রথমত, মোদি–ট্রাম্প আলোচনা হয়েছে কি না। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পকে মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার বিষয়ে কোনো আশ্বাস দিয়েছেন কি না। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই দুই বিষয় স্পষ্ট করার ব্যাপারে বারবার অনুরোধ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাড়তি কিছু জানাননি।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ জ্বালানি আমদানি নিয়ে ভারতীয় নীতির ব্যাখ্যা সংবলিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি আসার এক ঘণ্টা আগে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এ নিয়ে সরকারকে বিদ্ধ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক্স’ মারফত তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ জ্বালানি আমদানি নিয়ে ভারতীয় নীতির ব্যাখ্যা সংবলিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি আসার এক ঘণ্টা আগে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এ নিয়ে সরকারকে বিদ্ধ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক্স’ মারফত তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের লক্ষ্য করে রাহুল ‘এক্স’ বার্তায় লেখেন, ‘ট্রাম্পের ভয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভীত।’ কেন ভীত এবং ভয় পেয়ে কী কী করছেন, সেই কারণগুলো এরপর তিনি একে একে ব্যাখ্যা করেন। তিনি লেখেন, ‘১.
রাহুলের সমালোচনা নিয়ে বিজেপিও নীরব।
বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানেই তিনি মোদির আশ্বাস দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ভারতের পর চীনকেও তিনি ঠিক পথে চলতে বাধ্য করবেন।
ওই আলাপচারিতায় মোদির প্রশংসাও করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘মোদি মহান। তিনি ট্রাম্পকে ভালোবাসেন।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি চাই না, আপনারা ভালোবাসা শব্দের অন্য কোনো অর্থ করুন। আমি ওঁর রাজনৈতিক জীবন নষ্ট করতে চাই না।’
ট্রাম্প এরপর বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই ভারতের ওপর নজর রাখছি। দেশটা অবিশ্বাস্য। প্রত্যেক বছর দেশটায় নতুন একজন নেতা আসতেন। কেউ কেউ আসতেন কয়েক মাসের জন্য। আমার বন্ধু (মোদি) অবশ্য অনেক দিন ধরেই রয়েছেন।’ট্রাম্প এরপর বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই ভারতের ওপর নজর রাখছি। দেশটা অবিশ্বাস্য। প্রত্যেক বছর দেশটায় নতুন একজন নেতা আসতেন। কেউ কেউ আসতেন কয়েক মাসের জন্য। আমার বন্ধু (মোদি) অবশ্য অনেক দিন ধরেই রয়েছেন।’
ভারতের দিক থেকে সরকারিভাবে মোদি–ট্রাম্প আলাপ–আলোচনা হয়েছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। তারপর ৯ অক্টোবর। এবার ট্রাম্পের এই দাবির পিঠে ভারত কী বলে তা গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ তিনিই থামিয়েছেন। ভারত যদিও আজ পর্যন্ত তা স্বীকার করেনি। ট্রাম্প যে অসত্য দাবি করছেন, সরকারিভাবে তাও বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কিছু বলেননি। এবার শুরু নতুন বিতর্কের।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র কর র ব কর ছ ন ব রব র আসত ন অবশ য য় সময় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের দাব
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।
পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান প্ল্যাটফর্মটির নেতারা। এ সময় তারা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যান্য দাবিগুলো হলো-চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা এবং কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর সংবিধানে পরিচয় অস্বীকারের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিকার ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠনের পথ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।”
তিনি বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন আশা জাগালেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতকরণ এবং টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থমকে যাওয়া গভীর উদ্বেগের। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাকেও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার ফল বলে উল্লেখ করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের জন্য গৌরবের, যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার শপথ তৈরি করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংস্কার কমিশনগুলোতে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়েছে। ভূমি, কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না করা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটাতে এখনো সময় আছে। এ কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।”
এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর গঠনমূলক ভূমিকা, জাতীয় সংলাপ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি হলে পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথ সুদৃঢ় হবে আশা প্রকাশ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নটি কখনোই দেশের মূলধারার গণতান্ত্রিক আলোচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে।”
তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো অঞ্চলের নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।”
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ, জাতীয় সংলাপ এবং নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ