ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেবেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে যে খবর বের হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির কোনো কথাই হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে গতকাল (বুধবার) টেলিফোনে কোনো আলোচনা হয়নি।’

এর আগে এক বিবৃতিতে ভারত জানিয়েছিল, তাদের আমদানি নীতি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করেই তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে অস্থিতিশীল জ্বালানি পরিস্থিতির মধ্যে এটি আরও জরুরি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ভারত তেল–গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক দেশ। অস্থিতিশীল জ্বালানি পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের আমদানি নীতিগুলো সম্পূর্ণভাবে এই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।’

২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জয়সোয়াল। তিনি বলেন, ‘জ্বালানির স্থিতিশীল মূল্য ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের জ্বালানি নীতির দুটি প্রধান লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের জ্বালানি উৎস বিস্তৃত করা এবং বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী বৈচিত্র্য আনা।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরেই জ্বালানি সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। গত দশকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বর্তমান (যুক্তরাষ্ট্র) প্রশাসন ভারতের সঙ্গে আরও গভীরভাবে জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

গতকাল হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনছে বলে আমি অসন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার) আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা তাঁরা বন্ধ করে দেবেন। তবে খুব দ্রুত তা হবে না। একটু সময় লাগবে। তবে শিগগিরই তেল কেনা বন্ধ হবে।’

ট্রাম্প বলেন, ‘এটা এক বিরাট পদক্ষেপ। এবার আমরা চীনকেও বাধ্য করব এই ব্যবস্থা নিতে। পশ্চিম এশিয়ায় (যুদ্ধ থামাতে) আমরা যা করেছি, তার তুলনায় এটা করা (চীনকে রাজি) সহজতর। ভারত তেল কেনা বন্ধ করে দিলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। ওরা (ভারত) আমাকে আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যেই তেল কেনা বন্ধ করে দেবে। যুদ্ধ শেষ হলে ফের রাশিয়ার দ্বারস্থ হবে।’

আরও পড়ুনভারত কি সত্যিই রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করছে, মোদি সরকার কী বলছে৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের দাব

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।

পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান প্ল্যাটফর্মটির নেতারা। এ সময় তারা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন।

অন্যান্য দাবিগুলো হলো-চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা এবং কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর সংবিধানে পরিচয় অস্বীকারের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিকার ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠনের পথ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।”

তিনি বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন আশা জাগালেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতকরণ এবং টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থমকে যাওয়া গভীর উদ্বেগের। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাকেও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার ফল বলে উল্লেখ করা হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের জন্য গৌরবের, যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার শপথ তৈরি করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংস্কার কমিশনগুলোতে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়েছে। ভূমি, কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না করা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটাতে এখনো সময় আছে। এ কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।”

এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর গঠনমূলক ভূমিকা, জাতীয় সংলাপ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি হলে পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথ সুদৃঢ় হবে আশা প্রকাশ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নটি কখনোই দেশের মূলধারার গণতান্ত্রিক আলোচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে।”

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো অঞ্চলের নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।”

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ, জাতীয় সংলাপ এবং নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ