সরকারের অনুমতি নিয়ে কাঁচা পাট রপ্তানির বাধ্যবাধকতা শিথিলের অনুরোধ জানিয়েছে নেপাল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ অনুরোধ জানান ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার সময় নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি বাণিজ্য উপদেষ্টাকে জানান, নেপালে ১১টি পাটকল রয়েছে। তারা মূলত বাংলাদেশি কাঁচা পাট আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত ৮ সেপ্টেম্বর কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকারি অনুমতি আরোপ করায় তাদের পাটকলগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়েছে।

জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নেপালের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের পাটপণ্য ও কাঁচা পাটের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ উচ্চমানের ও পরিবেশবান্ধব আধা প্রক্রিয়াজাত পাটপণ্য উৎপাদন করছে এবং বাংলাদেশ চায় কাঁচা পাট রপ্তানির বদলে বরং আধা প্রক্রিয়াজাত পাটপণ্য বেশি রপ্তানি করতে। নেপাল বাংলাদেশ থেকে এই পণ্যগুলো আমদানি করলে উভয় দেশই লাভবান হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও নেপালের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি, যা বাংলাদেশের অনুকূলে। বাংলাদেশ দেশটিতে রপ্তানি করে ৪ কোটি ডলারের মতো পণ্য, আর দেশটি থেকে আমদানি করে ১ কোটি ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশ নেপালে রপ্তানি করে প্রধানত তৈরি পোশাক, কাঁচা পাট, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাব, ব্যাটারি, হাঁস-মুরগির খাবার, প্রসাধনী, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, কাগজ, কাচ এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও পানীয়। নেপাল থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে মসুর ডাল, আদা, সয়াবিন তেল, মরিচ, কৃষিপণ্য ইত্যাদি।

এদিকে বাংলাদেশের পাটকলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাঁচা পাট রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার শুধু অনুমতি নেওয়ার শর্ত দিয়েছে, পুরোপুরি রপ্তানি বন্ধ করেনি। পাটকলমালিকেরা কাঁচা পাট রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে। তাঁদের মতে, তা না করলে দেশের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। পাট রপ্তানি উন্মুক্ত হতে পারে এবং তখন দাম আরও বাড়তে পারে—এমন চিন্তা থেকে একটি শ্রেণি পাট মজুত করছে। ফলে এখনই অনেক পাটকল কাঁচা পাট কিনতে পারছে না।

নেপালে প্রাণ, আকিজ ও কয়েকটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি কাজ করছে। দেশটি থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই চূড়ান্ত হয়ে আছে। আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালও রয়েছে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো মুক্তবাণিজ্যচুক্তি (এফটিএ) নেই। তবে অগ্রাধিকার বাণিজ্যচুক্তি (পিটিএ) হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলমান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নানা আয়োজনে মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন

প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ উপলক্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।

এর আগে মোংলা বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দর ভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেরা কর্মীদেরও সম্মানিত করা হয়।

১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা এলাকায় যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় বাগেরহাটের মোংলায়। মূলত ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘দ্য সিটি অব লিয়নস’ নামের ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ‍সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল ওই জাহাজ।

৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় নানা সংকটের মাঝেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভূমিকা রেখে চলেছে মোংলা বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দর ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোংলা বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন উপব্যবস্থাপক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, এটি প্রথমে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই বন্দর। ১৯৮৭ সালের মার্চে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থবছর শেষে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বা ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস)। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ বা ৭.২৮ শতাংশ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৮৩ শতাংশ বেশি আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরের নিট মুনাফা হয় ৬২ কোটি ১০ লখ টাকা।

অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৫৬টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইইউজ এবং গাড়ি আমদানি ৪ হাজার ১৩৯টি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টির বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ ও রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ