ট্রাম্পের চাপ কাজে দিচ্ছে, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি কমছে
Published: 17th, October 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার তেল বেচাকেনা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ কাজে দিচ্ছে। রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনার পরিমাণ যেমন কমতে শুরু করেছে, তেমনই ভারতীয় সংস্থাগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি শুরু হয়েছে।
ভারতীয় জ্বালানি শোধনকারী সংস্থা ‘নায়ারা’র ওপর যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর পাশাপাশি তারা বিশ্বের আরও ৪৪টি তেল সরবরাহকারী ট্যাংকার সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। অভিযোগ, এই সংস্থাগুলো নানাভাবে লুকিয়ে ও আড়াল করে ইরান ও রাশিয়ার মতো ‘নিষিদ্ধ’ দেশের তেল রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এই ট্যাংকার সংস্থাগুলোকে বলা হয় ‘শ্যাডো ফ্লিট’।
নায়ারা এনার্জি লিমিটেড সংস্থাটি ভারতীয় হলেও সেটির ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা রসনেফ্ট। যুক্তরাজ্য সেটিকে নিষিদ্ধ করার এ সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সফল ভারত সফরের ঠিক পরপরই।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নায়ারা এনার্জিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করেছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার নায়ারাকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নও হয়েছিল। জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছিলেন, জ্বালানির প্রশ্নে কোনো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত নয়।
জয়সোয়াল বলেছিলেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য যে নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি করেছে, ভারত সেদিকে দৃষ্টি রেখেছে। নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার বদ্ধপরিকর। জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য, গুরুত্বপূর্ণও। ভারতীয় সংস্থাগুলো বাজারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ভারত কোনো ধরনের একতরফা নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নয়।
নায়ারার তেল শোধনাগার গুজরাটের ভাদিনারে। ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি তেল শোধনাগার মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স রিফাইনারিজের অবস্থানও গুজরাটে, জামনগরে। ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে ভারত সরকার ও দেশটির বেসরকারি সংস্থাগুলো। সস্তার তেল শোধনের পর তারা উৎপাদিত পেট্রল, ডিজেল ও বিমানের জ্বালানি বিক্রি করছে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং প্রভূত লাভ করছে। ট্রাম্প ও তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ভারত এভাবে রাশিয়ার অর্থনীতি সচল রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।
গত বুধবার ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বন্ধ করার পর তিনি চীনকেও সেই রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করবেন। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে ভারত আবারও পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
রাশিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে তেল কেনা কমিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ করে দেওয়া এবং সেই বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তাঁকে দেওয়া ‘আশ্বাস’ নিয়ে যে দাবি ট্রাম্প বুধবার করেছিলেন, জয়সোয়াল সরাসরি সে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন, বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির কোনো কথা হয়নি। তেল কেনা কমানো বা বন্ধ করা নিয়ে গণমাধ্যমের নানা ধরনের প্রশ্ন সত্ত্বেও জয়সোয়াল সেদিন সকালে প্রচারিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতির বাইরে কিছু বলতে রাজি হননি। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মারফত, বিশেষ করে কমোডিটি ট্র্যাকার সংস্থা কেপলারের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে রাশিয়ার ক্রুড কেনার পরিমাণ ভারত কমাচ্ছে। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তেল কেনাবেচার বাড়া–কমা নির্ভর করে বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতির ওপর। অর্থনীতি ও শোধনাগারের প্রয়োজনই সে সিদ্ধান্তের নিয়ামক। কোনো চাপ বা নিষেধাজ্ঞা নয়।
হোয়াইট হাউসের এক কর্তার বরাতে রয়টার্স গতকাল জানায়, ভারতীয় শোধনাগারগুলো ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। শোধনাগারগুলো তার প্রভাব টের পাবে ডিসেম্বর মাস থেকে। রয়টার্স জানায়, হোয়াইট হাউসের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় তেল ও গ্যাস মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা কিংবা তেল শোধনাগারগুলো তাদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দাম কমলে ভারত তা ব্যাপক হারে কিনতে থাকে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালে জুন মাস পর্যন্ত রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ৩৪ শতাংশ। আগে যা ছিল ৪ শতাংশের কম। সরকারি বয়ানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর সাশ্রয়ের পরিমাণ ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য ওই সাশ্রয় সত্ত্বেও দেশের খুচরো বাজারে পেট্রল, ডিজেলের দাম কমানো হয়নি। এ সময়ের মধ্যে পেট্রলের সঙ্গে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবু ব্যবহারকারীদের সুরাহা দেওয়া হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল আমদ ন পর স থ ত র পর ম ণ জয়স য় ল ন র পর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের দাব
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে অগ্রাধিকার হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।
পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান প্ল্যাটফর্মটির নেতারা। এ সময় তারা চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যান্য দাবিগুলো হলো-চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করা এবং কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর সংবিধানে পরিচয় অস্বীকারের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তি আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিকার ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠনের পথ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৮ বছর পরও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।”
তিনি বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন আশা জাগালেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিতকরণ এবং টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থমকে যাওয়া গভীর উদ্বেগের। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাকেও চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার ফল বলে উল্লেখ করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের জন্য গৌরবের, যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ার শপথ তৈরি করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংস্কার কমিশনগুলোতে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়েছে। ভূমি, কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না করা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা কাটাতে এখনো সময় আছে। এ কারণেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।”
এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর গঠনমূলক ভূমিকা, জাতীয় সংলাপ এবং সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি হলে পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথ সুদৃঢ় হবে আশা প্রকাশ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নটি কখনোই দেশের মূলধারার গণতান্ত্রিক আলোচনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে।”
তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো অঞ্চলের নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।”
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ, জাতীয় সংলাপ এবং নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ