ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার তেল বেচাকেনা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ কাজে দিচ্ছে। রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনার পরিমাণ যেমন কমতে শুরু করেছে, তেমনই ভারতীয় সংস্থাগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি শুরু হয়েছে।

ভারতীয় জ্বালানি শোধনকারী সংস্থা ‘নায়ারা’র ওপর যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর পাশাপাশি তারা বিশ্বের আরও ৪৪টি তেল সরবরাহকারী ট্যাংকার সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। অভিযোগ, এই সংস্থাগুলো নানাভাবে লুকিয়ে ও আড়াল করে ইরান ও রাশিয়ার মতো ‘নিষিদ্ধ’ দেশের তেল রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এই ট্যাংকার সংস্থাগুলোকে বলা হয় ‘শ্যাডো ফ্লিট’।

নায়ারা এনার্জি লিমিটেড সংস্থাটি ভারতীয় হলেও সেটির ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা রসনেফ্ট। যুক্তরাজ্য সেটিকে নিষিদ্ধ করার এ সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সফল ভারত সফরের ঠিক পরপরই।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নায়ারা এনার্জিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করেছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার নায়ারাকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নও হয়েছিল। জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছিলেন, জ্বালানির প্রশ্নে কোনো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত নয়।

জয়সোয়াল বলেছিলেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য যে নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি করেছে, ভারত সেদিকে দৃষ্টি রেখেছে। নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার বদ্ধপরিকর। জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য, গুরুত্বপূর্ণও। ভারতীয় সংস্থাগুলো বাজারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ভারত কোনো ধরনের একতরফা নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নয়।

নায়ারার তেল শোধনাগার গুজরাটের ভাদিনারে। ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি তেল শোধনাগার মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স রিফাইনারিজের অবস্থানও গুজরাটে, জামনগরে। ট্রাম্প অনেক দিন থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে ভারত সরকার ও দেশটির বেসরকারি সংস্থাগুলো। সস্তার তেল শোধনের পর তারা উৎপাদিত পেট্রল, ডিজেল ও বিমানের জ্বালানি বিক্রি করছে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং প্রভূত লাভ করছে। ট্রাম্প ও তাঁর সরকারের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ভারত এভাবে রাশিয়ার অর্থনীতি সচল রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

গত বুধবার ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বন্ধ করার পর তিনি চীনকেও সেই রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করবেন। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে ভারত আবারও পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারে।

রাশিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে তেল কেনা কমিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ করে দেওয়া এবং সেই বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তাঁকে দেওয়া ‘আশ্বাস’ নিয়ে যে দাবি ট্রাম্প বুধবার করেছিলেন, জয়সোয়াল সরাসরি সে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন, বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির কোনো কথা হয়নি। তেল কেনা কমানো বা বন্ধ করা নিয়ে গণমাধ্যমের নানা ধরনের প্রশ্ন সত্ত্বেও জয়সোয়াল সেদিন সকালে প্রচারিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতির বাইরে কিছু বলতে রাজি হননি। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মারফত, বিশেষ করে কমোডিটি ট্র্যাকার সংস্থা কেপলারের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে রাশিয়ার ক্রুড কেনার পরিমাণ ভারত কমাচ্ছে। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তেল কেনাবেচার বাড়া–কমা নির্ভর করে বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতির ওপর। অর্থনীতি ও শোধনাগারের প্রয়োজনই সে সিদ্ধান্তের নিয়ামক। কোনো চাপ বা নিষেধাজ্ঞা নয়।

হোয়াইট হাউসের এক কর্তার বরাতে রয়টার্স গতকাল জানায়, ভারতীয় শোধনাগারগুলো ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। শোধনাগারগুলো তার প্রভাব টের পাবে ডিসেম্বর মাস থেকে। রয়টার্স জানায়, হোয়াইট হাউসের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় তেল ও গ্যাস মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা কিংবা তেল শোধনাগারগুলো তাদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দাম কমলে ভারত তা ব্যাপক হারে কিনতে থাকে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালে জুন মাস পর্যন্ত রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ৩৪ শতাংশ। আগে যা ছিল ৪ শতাংশের কম। সরকারি বয়ানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর সাশ্রয়ের পরিমাণ ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য ওই সাশ্রয় সত্ত্বেও দেশের খুচরো বাজারে পেট্রল, ডিজেলের দাম কমানো হয়নি। এ সময়ের মধ্যে পেট্রলের সঙ্গে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবু ব্যবহারকারীদের সুরাহা দেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল আমদ ন পর স থ ত র পর ম ণ জয়স য় ল ন র পর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড কি ব্যর্থ, কী বললেন স্যামি

প্রশ্নটা বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলেন ড্যারেন স্যামি। তবু শুরুতে বললেন, ‘আপনার প্রশ্নটা বোঝার চেষ্টা করছি…।’

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে স্যামি যে প্রশ্নটা ‘বোঝার চেষ্টা’ করছিলেন, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে। এটি আইসিসির একমাত্র পূর্ণ সদস্য, যা একক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ নিয়ে গড়ে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠে ও মাঠের বাইরের বিষয়ে যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণা’টা ব্যর্থ কি না—এমন প্রশ্নই ছিল স্যামির কাছে।

৪১ বছর বয়সী স্যামি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন এক দশক, অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এখন একই দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। এই সময়ে এসে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের’ ধারণাটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আবেগাপ্লুত স্যামি উত্তর দিলেন এভাবে—‘আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধারণাটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এটারই (সাফল্যের) প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আগেও বলেছি, যখন আমরা আধিপত্য দেখিয়েছি, সবাই চেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলুক। সব দলই একটা (ভালো ও খারাপ) সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, আমরা এখন যাচ্ছি (খারাপটা)।’

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ১০টি দেশ ও ৫টি অঞ্চলের ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নামে খেলেন। এখন দেশগুলোকে ভাগ করে দিয়ে আইসিসির সদস্য করার কথা উঠছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে যাওয়া ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা নাকি ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ নামের প্রতি ‘টান’ অনুভব করেন না।

আরও পড়ুনছবির গল্পে লালবাগ কেল্লায় ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন৫ ঘণ্টা আগে

এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই ওয়ানডে সংস্করণের প্রথম দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, দুবার জিতেছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ’৭০ থেকে ’৯০ এর দশকে এই দলটি ছিল টেস্ট ও ওয়ানডের প্রতাপশালী দল।

আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্যামির কথায় উঠে এল ক্যারিবীয় দলের ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণাটা কখনো ব্যর্থ হবে না। আমি জানি, খেলাটাতে আমরা কত ইতিহাস গড়েছি। একটা সফল ব্র্যান্ড হতে গেলে কী লাগে তা আমি বুঝি। সেটাই এই প্রজন্ম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ফেরানোর চেষ্টা করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি ও অধিনায়ক শাই হোপ

সম্পর্কিত নিবন্ধ