আফগানিস্তান এবার কি পাকিস্তানি ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ হবে
Published: 19th, October 2025 GMT
পাকিস্তান আবারও আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস যেন নিজেই নিজের পুনরাবৃত্তি করছে। পুরোনো সাম্রাজ্যের লেখা সেই একই নাটক। শুধু অভিনেতা বদলেছে, কিন্তু সেই একই রক্তে ভেজা মঞ্চ।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত আবারও জ্বলছে। গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান আফগান ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিশোধে তালেবান পাকিস্তানের সীমান্তচৌকিতে আক্রমণ চালিয়েছে। দুই সাবেক মিত্র এখন খোলাখুলি যুদ্ধের দোরগোড়ায়। সাধারণ মানুষ গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য পালাচ্ছে; প্রতিটি ‘নির্ভুল হামলা’র পর নিহতদের জানাজা হচ্ছে। কাবুল অভিযোগ তুলছে এটি পাকিস্তানের আগ্রাসন, আর ইসলামাবাদ দাবি করছে—এটা সন্ত্রাসীদের ঘাঁটির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা।
এখানে প্রহসনটা অনেকটাই শেক্সপিয়ারের নাটকের সমতুল্য। একসময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা, অর্থ ও অস্ত্র পাওয়া তালেবানকে এখন তাদের ‘নম্বর এক শত্রু’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের যে জেনারেলরা একসময় ডুরান্ড লাইন সীমান্তের ওপারে প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাঁরাই আজ অভিযোগ করছেন—তাদের সাবেক শিক্ষানবিশেরা এখন সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। শিকারি হয়ে গেছে শিকার, শিষ্য হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী।
কিন্তু এটা নতুন কোনো কাহিনি নয়। ওয়াশিংটন আর ইসলামাবাদের সম্পর্ক আসলে পুরোনো স্নায়ুযুদ্ধকেন্দ্রিক সিনেমারই পুনঃপ্রচার। একই চিত্রনাট্যকার, একই পৃষ্ঠপোষকতার যন্ত্র, শুধু নতুন ভুক্তভোগী। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দুর্বল করার জন্য ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ ও রিয়াদ মিলে জন্ম দিয়েছিল একটি জঙ্গি ইকোসিস্টেমের। এই অবকাঠামো (প্রশিক্ষণশিবির, চোরাচালানের পথ, মতাদর্শের পাইপলাইন) সোভিয়েত পতনের সঙ্গে বিলীন হয়নি, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছিল নানা দিকে।
পাকিস্তানের জেনারেলরা ‘কৌশলগত গভীরতা’র মোহে মত্ত হয়ে ভেবেছিলেন, নিয়ন্ত্রণটা তাঁদের হাতেই রয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তাঁরা ভুল ভেবেছিলেন। ওয়াশিংটনের কাছে ইসলামাবাদ ছিল কেবল সাম্রাজ্যের ঠিকাদার। অথচ একবার মতাদর্শকে অস্ত্রে রূপ দেওয়া হলে সেটা পৃষ্ঠপোষকদেরও ছাড় দেয় না।
সেই পুরোনো চিত্রনাট্যটি আবার সামনে এসেছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। সে সময় পাকিস্তানে সংসদীয় প্রক্রিয়ার ছদ্মবেশে সরকার পরিবর্তন ঘটেছিল। চিত্রনাট্য রচিত হয়েছিল ওয়াশিংটনে, বাস্তবায়ন হয়েছিল পাকিস্তানের জেনারেলদের হাতে। ইমরান খানের ‘অপরাধ’ দুর্নীতি বা অযোগ্যতা নয়—বরং সেটা ছিল অবাধ্যতা। তিনি পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন সেনাঘাঁটির অধিকার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।
সার্বভৌমত্বকে কেবল স্লোগান নয়, বাস্তব বিষয় হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনের জন্য এমন স্বাধীনতা শোধরানোর প্রয়োজন ছিল। রাওয়ালপিন্ডির জন্য এর অর্থ ছিল ইমরান খানের সরকারকে উৎখাত। ফলশ্রুতিতে জন্ম নিল সাংবিধানিক পোশাকের এক অভ্যুত্থান। ভোটের ফলাফল ছিল আগে থেকেই নির্ধারিত। তাই পুরোনো বিদেশিদের স্বার্থরক্ষক শ্রেণিই আবার ক্ষমতায় ফিরল।
পাকিস্তানের জেনারেলরা যদি ভাবেন, তাঁরা বাইরে যুদ্ধ চালিয়ে দেশে শান্তিতে থাকতে পারবেন, তবে তাঁরা ভুল ভাবছেন। প্রতিটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নতুন বিদ্রোহের জন্ম দেয়। যখন রাষ্ট্র পশতুনদের সন্ত্রাসবাদের দোসর হিসেবে তুলে ধরে, তখন আরেকটি নতুন বিদ্রোহের জন্ম হয়। আফগানিস্তান সব সময় ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ বলে পরিচিত। এরপর সেখানে কার কবর হতে যাচ্ছে, সেই মুখটা সম্ভবত খুব শিগগিরই আয়নায় ভেসে উঠবে।কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা মুহূর্তটি চিনতে ভুল করে। ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ম্লান হওয়ার বদলে দেশব্যাপী বিদ্রোহে রূপ নেয়। দুই বছরের কারাবন্দী, সেন্সরশিপ এবং প্রহসনের বিচার তাঁকে কেবল অবাধ্যতার প্রতীক হিসেবে পবিত্র করেছে। করাচি থেকে শুরু করে খাইবারের পাহাড় পর্যন্ত মানুষের মনোভাব খুবই স্পষ্ট। পাকিস্তান রাষ্ট্র বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে, সার্বভৌমত্ব নিলামে বিক্রি হচ্ছে, শাসকেরা বিক্রি হয়ে গেছেন।
জেনারেলরা হয়তো ইমরান খানের কণ্ঠ চেপে ধরতে পেরেছেন, কিন্তু তাঁর প্রতিধ্বনিকে তারা স্তব্ধ করে দিতে পারেননি। প্রতিটি দমন অভিযানে সে প্রতিধ্বনিটা আরও জোরালো হচ্ছে।
নিজেদের দেশে কোণঠাসা হয়ে পাকিস্তানের জেনারেলরা এখন দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য তাঁদের সবচেয়ে পুরোনো মোহযুদ্ধে ফিরে গেছেন। আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ কোনো ভৌগোলিক দুর্ঘটনা নয়, বরং জেনারেলদের রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। সংঘাত দেশপ্রেমকে চাগিয়ে তোলে, দমন-নির্যাতন থেকে মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে সরায় এবং দেশপ্রেমের আড়ালে স্বৈরশাসনকে ঢেকে রাখে। তবে এই কৌশল আত্মঘাতী। খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উপজাতি এলাকায় ‘নির্ভুল হামলার’ মানে হলো জানাজার মিছিল।
সন্ত্রাস দমনের আড়ালে পশতুনদের পুরো অঞ্চলে হামলা করা হচ্ছে। প্রতিটি হামলা ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরও গভীর করছে। ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ তালেবানের সেই পুরোনো পার্থক্য—যা পাকিস্তানের নিরাপত্তানীতির মূল স্তম্ভ, এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি হামলা এখন প্রতিশোধের চক্রকে আরও শক্তিশালী করছে।
এদিকে সামরিক বাহিনী আবারও পশতুন ও আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সেই একই ক্লান্তিকর ও বর্ণবাদী ধারণা ছড়াচ্ছে। তাদেরকে ‘গোপন সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানো। পাকিস্তানের জেনারেলরা ক্ষমতার মুঠোকে আরও শক্ত করে একতাবোধের বিভ্রম তৈরি করছে।
পাকিস্তানের এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ওয়াশিংটন সুযোগ খুঁজে পাচ্ছে। পাকিস্তানের নতুন নির্ভরতা আবারও সেখানে ওয়াশিংটনের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। ভারত ও চীনকে চাপ দিতে পাকিস্তানকে দাবার বোর্ডের একটি ‘চাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংঘাতে নিহত একজন পাকিস্তানি সেনার কফিন নিয়ে মিছিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন র আফগ ন স ত ন ইসল ম ব দ সন ত র স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তান এবার কি পাকিস্তানি ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ হবে
পাকিস্তান আবারও আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস যেন নিজেই নিজের পুনরাবৃত্তি করছে। পুরোনো সাম্রাজ্যের লেখা সেই একই নাটক। শুধু অভিনেতা বদলেছে, কিন্তু সেই একই রক্তে ভেজা মঞ্চ।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত আবারও জ্বলছে। গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান আফগান ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিশোধে তালেবান পাকিস্তানের সীমান্তচৌকিতে আক্রমণ চালিয়েছে। দুই সাবেক মিত্র এখন খোলাখুলি যুদ্ধের দোরগোড়ায়। সাধারণ মানুষ গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য পালাচ্ছে; প্রতিটি ‘নির্ভুল হামলা’র পর নিহতদের জানাজা হচ্ছে। কাবুল অভিযোগ তুলছে এটি পাকিস্তানের আগ্রাসন, আর ইসলামাবাদ দাবি করছে—এটা সন্ত্রাসীদের ঘাঁটির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা।
এখানে প্রহসনটা অনেকটাই শেক্সপিয়ারের নাটকের সমতুল্য। একসময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা, অর্থ ও অস্ত্র পাওয়া তালেবানকে এখন তাদের ‘নম্বর এক শত্রু’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের যে জেনারেলরা একসময় ডুরান্ড লাইন সীমান্তের ওপারে প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাঁরাই আজ অভিযোগ করছেন—তাদের সাবেক শিক্ষানবিশেরা এখন সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। শিকারি হয়ে গেছে শিকার, শিষ্য হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী।
কিন্তু এটা নতুন কোনো কাহিনি নয়। ওয়াশিংটন আর ইসলামাবাদের সম্পর্ক আসলে পুরোনো স্নায়ুযুদ্ধকেন্দ্রিক সিনেমারই পুনঃপ্রচার। একই চিত্রনাট্যকার, একই পৃষ্ঠপোষকতার যন্ত্র, শুধু নতুন ভুক্তভোগী। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দুর্বল করার জন্য ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ ও রিয়াদ মিলে জন্ম দিয়েছিল একটি জঙ্গি ইকোসিস্টেমের। এই অবকাঠামো (প্রশিক্ষণশিবির, চোরাচালানের পথ, মতাদর্শের পাইপলাইন) সোভিয়েত পতনের সঙ্গে বিলীন হয়নি, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছিল নানা দিকে।
পাকিস্তানের জেনারেলরা ‘কৌশলগত গভীরতা’র মোহে মত্ত হয়ে ভেবেছিলেন, নিয়ন্ত্রণটা তাঁদের হাতেই রয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তাঁরা ভুল ভেবেছিলেন। ওয়াশিংটনের কাছে ইসলামাবাদ ছিল কেবল সাম্রাজ্যের ঠিকাদার। অথচ একবার মতাদর্শকে অস্ত্রে রূপ দেওয়া হলে সেটা পৃষ্ঠপোষকদেরও ছাড় দেয় না।
সেই পুরোনো চিত্রনাট্যটি আবার সামনে এসেছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। সে সময় পাকিস্তানে সংসদীয় প্রক্রিয়ার ছদ্মবেশে সরকার পরিবর্তন ঘটেছিল। চিত্রনাট্য রচিত হয়েছিল ওয়াশিংটনে, বাস্তবায়ন হয়েছিল পাকিস্তানের জেনারেলদের হাতে। ইমরান খানের ‘অপরাধ’ দুর্নীতি বা অযোগ্যতা নয়—বরং সেটা ছিল অবাধ্যতা। তিনি পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন সেনাঘাঁটির অধিকার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।
সার্বভৌমত্বকে কেবল স্লোগান নয়, বাস্তব বিষয় হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনের জন্য এমন স্বাধীনতা শোধরানোর প্রয়োজন ছিল। রাওয়ালপিন্ডির জন্য এর অর্থ ছিল ইমরান খানের সরকারকে উৎখাত। ফলশ্রুতিতে জন্ম নিল সাংবিধানিক পোশাকের এক অভ্যুত্থান। ভোটের ফলাফল ছিল আগে থেকেই নির্ধারিত। তাই পুরোনো বিদেশিদের স্বার্থরক্ষক শ্রেণিই আবার ক্ষমতায় ফিরল।
পাকিস্তানের জেনারেলরা যদি ভাবেন, তাঁরা বাইরে যুদ্ধ চালিয়ে দেশে শান্তিতে থাকতে পারবেন, তবে তাঁরা ভুল ভাবছেন। প্রতিটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নতুন বিদ্রোহের জন্ম দেয়। যখন রাষ্ট্র পশতুনদের সন্ত্রাসবাদের দোসর হিসেবে তুলে ধরে, তখন আরেকটি নতুন বিদ্রোহের জন্ম হয়। আফগানিস্তান সব সময় ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ বলে পরিচিত। এরপর সেখানে কার কবর হতে যাচ্ছে, সেই মুখটা সম্ভবত খুব শিগগিরই আয়নায় ভেসে উঠবে।কিন্তু এই অভ্যুত্থানকারীরা মুহূর্তটি চিনতে ভুল করে। ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ম্লান হওয়ার বদলে দেশব্যাপী বিদ্রোহে রূপ নেয়। দুই বছরের কারাবন্দী, সেন্সরশিপ এবং প্রহসনের বিচার তাঁকে কেবল অবাধ্যতার প্রতীক হিসেবে পবিত্র করেছে। করাচি থেকে শুরু করে খাইবারের পাহাড় পর্যন্ত মানুষের মনোভাব খুবই স্পষ্ট। পাকিস্তান রাষ্ট্র বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে, সার্বভৌমত্ব নিলামে বিক্রি হচ্ছে, শাসকেরা বিক্রি হয়ে গেছেন।
জেনারেলরা হয়তো ইমরান খানের কণ্ঠ চেপে ধরতে পেরেছেন, কিন্তু তাঁর প্রতিধ্বনিকে তারা স্তব্ধ করে দিতে পারেননি। প্রতিটি দমন অভিযানে সে প্রতিধ্বনিটা আরও জোরালো হচ্ছে।
নিজেদের দেশে কোণঠাসা হয়ে পাকিস্তানের জেনারেলরা এখন দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য তাঁদের সবচেয়ে পুরোনো মোহযুদ্ধে ফিরে গেছেন। আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ কোনো ভৌগোলিক দুর্ঘটনা নয়, বরং জেনারেলদের রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। সংঘাত দেশপ্রেমকে চাগিয়ে তোলে, দমন-নির্যাতন থেকে মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে সরায় এবং দেশপ্রেমের আড়ালে স্বৈরশাসনকে ঢেকে রাখে। তবে এই কৌশল আত্মঘাতী। খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উপজাতি এলাকায় ‘নির্ভুল হামলার’ মানে হলো জানাজার মিছিল।
সন্ত্রাস দমনের আড়ালে পশতুনদের পুরো অঞ্চলে হামলা করা হচ্ছে। প্রতিটি হামলা ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরও গভীর করছে। ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ তালেবানের সেই পুরোনো পার্থক্য—যা পাকিস্তানের নিরাপত্তানীতির মূল স্তম্ভ, এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি হামলা এখন প্রতিশোধের চক্রকে আরও শক্তিশালী করছে।
এদিকে সামরিক বাহিনী আবারও পশতুন ও আফগান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সেই একই ক্লান্তিকর ও বর্ণবাদী ধারণা ছড়াচ্ছে। তাদেরকে ‘গোপন সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানো। পাকিস্তানের জেনারেলরা ক্ষমতার মুঠোকে আরও শক্ত করে একতাবোধের বিভ্রম তৈরি করছে।
পাকিস্তানের এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ওয়াশিংটন সুযোগ খুঁজে পাচ্ছে। পাকিস্তানের নতুন নির্ভরতা আবারও সেখানে ওয়াশিংটনের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। ভারত ও চীনকে চাপ দিতে পাকিস্তানকে দাবার বোর্ডের একটি ‘চাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংঘাতে নিহত একজন পাকিস্তানি সেনার কফিন নিয়ে মিছিল