পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে থেকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তিন বোন আলিমা খান, নওরিন নিয়াজি ও উজমা খানকে আটক করেছে পুলিশ। কারাবন্দী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ায় তাঁরা আদিয়ালা কারাগারের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন।

ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইমরান খানের তিন বোনকে আটক করার আগে পুলিশ তাঁদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে এবং জোরজবরদস্তি করে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে গেছে।

ইমরান বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। কারা কর্তৃপক্ষ দলীয় নেতা-কর্মী বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ইমরানকে দেখা করতে দিচ্ছে না। এর প্রতিবাদে গতকাল পিটিআই নেতা-কর্মী ও ইমরানের পরিবারের সদস্যরা কারাগার প্রাঙ্গণের বাইরে অবস্থান নেন। তাঁরা কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার অভিযোগ করেন।

গতকাল মধ্যরাতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে পিটিআই থেকে বলা হয়, যখন পুলিশ অভিযানে নামে, তখন আলিমা খান, নওরিন নিয়াজি ও উজমা খান আদিয়ালা কারাগারের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলেন।

পোস্টে আরও বলা হয়, খাইবার পাখতুনখাওয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মীনা খান আফ্রিদি, এম এন এ শাহিদ খট্টক এবং অন্যান্য দলীয় কর্মী, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছেন, তাঁরা সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং পুলিশ তাঁদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

আদালতের আদেশ থাকার পরও কেন ইমরান খানের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে তাঁর পরিবারকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই পোস্টে আরও বলা হয়, ‘আদালতের নির্দেশে একজন কারাবন্দীর অধিকার অনুযায়ী ইমরান খানকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে দেওয়া উচিত নয় কি? তাঁর পরিবারের সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন ও সহিংসতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’।

ইমরান বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। কারা কর্তৃপক্ষ দলীয় নেতা-কর্মী বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ইমরানকে দেখা করতে দিচ্ছে না। এর প্রতিবাদে গতকাল পিটিআই নেতা-কর্মী ও ইমরানের পরিবারের সদস্যরা কারাগার প্রাঙ্গণের বাইরে অবস্থান নেন।

পিটিআই কর্মীরা ঘটনার কিছু ভিডিও এক্সে পোস্ট করেছেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলিমা ও উসমা বোন নওরিনকে ধরে বসে আছেন। তাঁদের চারপাশ ঘিরে আছেন দলীয় কর্মীরা। ভিডিওতেই বোঝা যাচ্ছিল যে নওরিন রীতিমতো কাঁপছেন। তাঁদের ঘিরে রাখা নারী কর্মীরা নওরিনকে সুস্থ ও শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

পরে পোস্ট করা আরেকটি ভিডিওতে নওরিনকে বলতে শোনা যায়, নারী পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে জোর করে মাটিতে ফেলে দেয়ন তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। এখনো বুঝতে পারছি না, এখানে ঠিক কী ঘটেছে।’

একসময় আলিমা বলে ওঠেন, যখন নওরিনকে মেঝেতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমরা দেখে ফেলেছিলাম এবং কোনোভাবে তাকে ছাড়িয়ে আনতে পেরেছি।’

আলিমা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, এভাবে তাঁদের ভয় দেখানো যাবে না।

আলিমা আরও অভিযোগ করেন, তাঁকে আর তাঁর বোনদের ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ ‘আসিম মুনিরের নোটিফিকেশন এখনো স্বাক্ষরিত হয়নি’।

আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। এখনো বুঝতে পারছি না, এখানে ঠিক কী ঘটেছে। .

..নওরিন নিয়াজি, ইমরান খানের বোন

ইমরান খানের বোনেরা, তাঁর আইনজীবী দলের সঙ্গে গতকাল কারা ফটকে যান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ করে পিটিআই।

পিটিআইয়ের পোস্টে বলা হয়, ‘তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর রাত ১০টার দিকে পাঞ্জাব সরকার এমন এক নিন্দনীয় অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, কোনো সভ্য বা গণতান্ত্রিক সমাজ কখনো কোনোভাবে এর যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে পারবে না।

দলটির অভিযোগ, ইমরান খানের বোনেরা যেখানে বসে ছিলেন, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ঢেলে পুরো এলাকা ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

তাঁদের অভিযোগ, ইমরান খানের বোনেরা যেখানে বসে ছিলেন, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ঢেলে পুরো এলাকা ভাসিয়ে দেওয়া হয়।আরও পড়ুনপিটিআই ইমরানের মুক্তি দাবিতে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ করবে ২৬ মার্চ ২০২৫

পিটিআই নেতারা বলেন, লাইটগুলো বন্ধ করে পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়। পরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পুলিশ ইমরান খানের তিন বোন আলিমা খান, নওরিন খান ও উসমা খানের ওপর হামলা করে।

এক বোনকে সড়কের ওপর ফেলে দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, জোরজবরদস্তি করা হয় এবং তাঁর চিৎকার ও উপস্থিত মানুষের অনুনয় সত্ত্বেও জোরপূর্বক তাঁকে আটক করা হয়।

যদিও রাওয়ালপিন্ডি পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডনকে বলেছেন, পিটিআইয়ের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। শুধু তাঁরা যে সড়ক দখল করে ছিলেন, সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনআদিয়ালা কারাগারে ইমরান খান ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন র ব ন পর ব র র সদস য র পর ব র র ইমর ন র প ট আই গতক ল নওর ন

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সদরের আংশিক) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন দলের একটি পক্ষের নেতা–কর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় পল্লি উন্নয়ন সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরীর সমর্থকেরা আজ বুধবার বিকেলে কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজারে এ কর্মসূচি পালন করেন।

কর্মসূচি ঘিরে ওই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ফখরুল ইসলামের সমর্থকদের কেউ কেউ কবিরহাট বাজারে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে নোয়াখালী-৫ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। এরপর প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বজলুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা।

আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বজলুল করিমের অনুসারীরা কবিরহাট সরকারি কলেজের সামনে থেকে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কবিরহাট বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরফাত হোসেন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফসহ স্থানীয় কয়েকজন নেতা। বক্তারা অবিলম্বে নোয়াখালী-৫ আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করে বজলুল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বজলুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দল করতে গিয়ে অনেক হামলা–মামলা, জেল–জুলুমের শিকার হয়েছেন। কিন্তু যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর কোনো অবদান নেই। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন।

জানতে চাইলে কবিরহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ধানের শীষের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমরা সবাই তাঁর পক্ষে রয়েছি। কিছু লোক কর্মসূচি পালন করেছেন, যার সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ