গবি রেজিস্টারের ফেরা নিয়ে দুই গ্রুপে উত্তেজনা
Published: 19th, October 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে স্বপদ ফিরে পেয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন। তিনি তার পদে যোগ দিতে এলে একপক্ষ স্বাগত জানালেও আরেকপক্ষ বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় অবস্থিত গবি ক্যাম্পাসে আসেন দেলোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে তার আইনজীবী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতসহ অন্তত ৩০-৪০ জন ছিলেন।
আরো পড়ুন:
গকসুর নবনির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ
গবিতে ডা.
এ সময় অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী তাকে স্বাগত জানিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এরপর তিনি ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান নেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে তিনি ২০-২৫ জন সঙ্গীসহ গবি উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি উপাচার্যের কাছে স্বপদে (রেজিস্টার) ফিরতে আদালতের রায় ও চাকরিতে পুনর্বহালসহ যোগদানের জন্য আবেদনপত্র দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।
এদিকে, খবর পেয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সেখানে আসেন গবি ছাত্র সংসদের (গকসু) ভিপি, কোষাধ্যক্ষসহ একাংশ নেতৃবৃন্দ এবং তারা উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে দেলোয়ার হোসেনের স্বপদে (রেজিস্টার) যোগদানের বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। এরই জেরে ওই যোগদানপত্র নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরে তিনি যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
দেলোয়ার হোসেনের পুনর্বাহলের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবি, আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরে এই রায় পেয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্থ ও চারিত্রিকভাবে অসৎ।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী কৃষ্ণ বলেন, “আদালতের রায়ের ভিত্তিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন দিতে এসেছি আমরা। তবে কিছু শিক্ষার্থী এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে উপাচার্য চাকরিতে বহালের আবেদন গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।” এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই আইনজীবী।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন জানান, আদালতের রায়ে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের রায়ে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। আদালত তার অব্যাহতিকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে বিগত সময়ের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। চাকরিতে যোগ দিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার কথা জানান তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আবুল হোসেন জানান, আদালতের রায়ে দেলোয়ার হোসেনের চাকরি পুণর্বহালে কোনো বাধা নেই। শিক্ষার্থীরা তাকে পুনর্বহালের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর কারণে আপাতত তার আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা আবেদন গ্রহণ না করার জন্য চাপ দিয়েছে। পুণর্বহালের বিষয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “আপাতত নথি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতি দেয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। পরের বছর ৪ এপ্রিল ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার নবম সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন তিনি। ৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর তার পক্ষে রায় দেন আদালত।
গত ৮ অক্টোবর ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ (সাভার) মো. হাবিবুর রহমানের আদালতের রায়ে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তার চাকরি পুণর্বহাল ও চাকরিচ্যুত সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আদেশ দেন।
ঢাকা/আরিফুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য র ক স বপদ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল ও সুব্রত চৌধুরী
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী। এ–সংক্রান্ত আপিলে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হতে তাঁদের করা পৃথক আবেদন মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস এবং সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠনের আবেদনও মঞ্জুর করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধে তিনটি আপিল এদিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক, দুই ও তিন নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
এর আগে হাইকোর্ট পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তা বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন, যা কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে ছিল। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে করা পৃথক আপিল যথাক্রমে কার্যতালিকার দুই ও তিন নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ইন্টারভেনার হওয়ার আবেদন দাখিল করেন। নিজে ইন্টারভেনার হতে আবেদন দাখিল করছেন উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিএনপির পক্ষেও তিনি বলবেন। বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে ইন্টারভেনার হতে আবেদন দাখিল করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ ছাড়া সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠনের ইন্টারভেনার হওয়ার আবেদন দাখিল করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। আবেদন দাখিলের পর আদালত বলেন, আবেদন মঞ্জুর করা হলো।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, আপিলগুলো মঙ্গলবার শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে ছিল। তবে সামনে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ রয়েছে, যা ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে আপিলগুলোর শুনানি শেষ হবে কি না—এমন প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। আপিলকারী পক্ষের আইনজীবীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুনানি শেষ করা ও লিখিত আকারে তাঁদের বক্তব্য দাখিল করবেন বলে আদালতকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ বুধবার আপিল শুনানির জন্য দিন রেখেছেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।