নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্
Published: 27th, October 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘হল অব প্রাইডে’ বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‘কারাগার ঘোষণা’
আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ দেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সবার প্রত্যাশা-বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়।’
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচনী মাঠে আপনারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণ এবং নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবে না।”
উপদেষ্টা বলেন,“ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। তাছাড়া অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেপ্তার বাড়াতে হবে। তবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।”
ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারিত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারিত্ব নাই, শৃঙ্খলা নাই, কমান্ড মানতে চায় না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায়; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “জেলা পর্যায়ে ঘনঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরো সক্রিয় করতে হবে। জেলার সকল বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।”
“থানা থেকে লুট হওয়া বা হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে হবে। জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,“পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক অপর ধ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
‘১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফেরত চাই’
‘আমার ছেলেকে আমার সামনে থেকে ১০ বছর আগে তুলে নিয়ে যায় একটি বাহিনী। এরপর ১০ বছর ধরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছি। কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। মামলাও নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ আমি শয্যাশায়ী। মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে যারা গুম করেছে, তাদের বিচার দেখে যেতে চাই।’
ফেনীতে আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আলোচনা সভায় গুমের শিকার যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনের মা রওশন আরা বেগম এ কথা বলেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফেনী ইউনিটের আয়োজনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধিকারের সংগঠক শাহজালাল ভূঁইয়া। অধিকারের কর্মী আবদুস সালাম ফরায়জীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রবিউল হক, মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, সুজনের ফেনী শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহি উদ্দিন খোন্দকার, জাসাস ফেনী শাখার সভাপতি সাংস্কৃতিক সংগঠক কাজি ইকবাল আহমেদ, প্রথম আলোর ফেনী প্রতিনিধি নাজমুল হক, ফেনী বন্ধুসভার উপদেষ্টা শেখ নুর উদ্দিন চৌধুরী।
অধিকারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন শাহজালাল ভূঁইয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র জনতা একটি রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ গুমের ঘটনা বর্তমানে বন্ধ হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতন এখনো চলছে।
শাহজালাল ভূঁইয়া বলেন, অনলাইনে নারীদের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।