স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘হল অব প্রাইডে’ বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার ঘোষণা’

আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ দেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সবার প্রত্যাশা-বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”

উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়।’

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচনী মাঠে আপনারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।”

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণ এবং নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবে না।”

উপদেষ্টা বলেন,“ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। তাছাড়া অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেপ্তার বাড়াতে হবে। তবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।”

ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারিত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারিত্ব নাই, শৃঙ্খলা নাই, কমান্ড মানতে চায় না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায়; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

উপদেষ্টা বলেন, “জেলা পর্যায়ে ঘনঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।”

তিনি বলেন, “পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরো সক্রিয় করতে হবে। জেলার সকল বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।”

“থানা থেকে লুট হওয়া বা হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে হবে। জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,“পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক অপর ধ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু কয়েকটি সিট পাওয়ার জন্য এনসিপি কোনো জোট করবে না: সারজিস আলম

জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এক পাশে রেখে শুধু কয়েকটি সিট পাওয়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোনো জোট করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আজ রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্প একাডেমি মিলনায়তনে এনসিপি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘এনসিপি শুধু কয়েকটি আসনকে সামনে রেখে সংসদে যাওয়ার জন্য জোট করার কোনো চিন্তা করছে না। এনসিপি মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের জায়গা থেকে জুলাই সনদের প্রতিটা সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতি কমিটমেন্ট থাকে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কমিটেড থাকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কমিটেড থাকে, তাহলে এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে তাদের সাথে জোট হতে পারে। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এক পাশে রেখে শুধু সিট পাওয়ার জন্য কোনোরকম জোট এনসিপি করবে না। আর যদি এনসিপি এসব কমিটমেন্টের ভিত্তিতে জোট করেও তাহলে জাতীয় নাগরিক পার্টির নামে করবে এবং সরকার গঠন করবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল যখন জুলাই সনদের প্রশ্নে নিশ্চয়তার যে প্রয়োজন ছিল, সেই নিশ্চয়তা কীভাবে হবে, কবে হবে নিশ্চিত না হয়ে শুধু নির্বাচনমুখী আচরণ করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল, তখন এনসিপি তাদের জায়গা থেকে মেরুদণ্ড সোজা করে সেই নিশ্চয়তা চেয়েছে এবং জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। আমরা মনে করি, যেদিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে, যেদিন এই আদেশ জারি করা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এবং গণভোটে যদি জুলাই সনদের পক্ষে রায় আসে, তখন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে এনসিপি নির্দ্বিধায় দেশের মানুষের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। তার পূর্বে কোনো নিশ্চয়তা ছাড়া শুধু একটা কাগজে এনসিপি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করতে পারে না।’

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, আগামীর বাংলাদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এককভাবে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব দিতে পারবে না। সেই জায়গায় তরুণ প্রজন্মের এনসিপির অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা আবশ্যক। আগামী নির্বাচনে তরুণদের কণ্ঠস্বর ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সারজিস আলম আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, ওই আকাঙ্ক্ষার কাছাকাছিও বাস্তবায়ন হয়নি। গত এক বছরে বাংলাদেশের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রত্যেক স্টেকহোল্ডার তাদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করেনি। প্রশাসনে এখন হয় বিএনপি-জামায়াতের লোক, না হয় আগের স্বৈরাচারের লোকজন রয়েছে। সচিব, ডিসি, ইউএনও ও থানার ওসিদের দলীয় না হয়ে বাংলাদেশের হতে হবে। না হয় পরবর্তী সময়ে দেশে আবারও একটা কিছু হলে কেউ ছাড় পাবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃতীয় শক্তিশালী দল হলেও তার আগে যে শক্তিশালী দুটি দল রয়েছে, তাদেরও এই জায়গা থেকে বড় দায়িত্ব পালন করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অসহযোগিতা করতে দেখেছি। দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখেছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় ও এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আহনাফ সাঈদ খানের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ হায়দার, কেন্দ্রীয় সংগঠক খাইরুল কবির, সংগঠক সাঈদ উজ্জ্বল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিদার শাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীলফামারীর ইপিজেডে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • নির্বাচনের প্রচারে ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার কাজ করবে, প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির
  • এবার জনগণই ভোট পাহারা দেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে: আমীর খসরু
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যাকাণ্ডের ১০০ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
  • শুধু কয়েকটি সিট পাওয়ার জন্য এনসিপি কোনো জোট করবে না: সারজিস আলম
  • জনগণের সেবা নিশ্চিত করতেই মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বয় করছি : ডিসি
  • আরপিও সংশোধনীতে কার ক্ষতি, কার লাভ
  • কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের ভূমিকা হতাশাজনক