নির্বাচনের প্রচারে ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার কাজ করবে, প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির
Published: 27th, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে, এমন ভয়ভীতি ও আতঙ্কহীন পরিবেশ নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের নেতারা। একই সঙ্গে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
রোববার রাতে গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এক জরুরি প্রেসিডিয়াম সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা এ প্রত্যাশা জানান। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে। চার ঘণ্টা ধরে চলা ওই সভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশল নির্ধারণ এবং সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মসূচি বিস্তার নিয়ে আলোচনা করেন দলটির নেতারা।
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, সাহিদুর রহমান, লিয়াকত হোসেন, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ বক্তব্য দেন। দলটির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সভায় সূচনা বক্তব্য দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টি প্রত্যাশা করে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করবে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগ পায়, সে ধরনের ভয়ভীতি ও আতঙ্কহীন পরিবেশ নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।
প্রশাসনে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়নের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রশাসনে দলীয় সমর্থক কোনো কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকলে তাঁকে সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদে বসাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে জাতীয় পার্টি। বর্তমান সরকার আন্তরিক হলে অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আগামীতে একটি ভোট উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা শুরু হতে পারে।
জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখার জন্য জাতীয় পার্টি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। সেই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আগামী নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করতে চায়। তবে কোন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটি আরও কিছুদিন পর জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। তার আগে জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ ন শ চ ত ক জ করব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা রয়েছে, সংশয়ও আছে
প্রথম আলোর জনমত জরিপে সার্বিকভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে যে মতামত উঠে এসেছে, তা আমার বিবেচনায় বাস্তবতার প্রতিফলন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। নির্বাচিত সরকারের সময়ে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা আশা করছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নারীর চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রাখার ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার সফল হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৬ বছর পর মানুষ ভোট দিতে পারবেন, সেই প্রত্যাশা তো রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা সেভাবে আশা রাখতে পারছেন না। একই সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সংশয়ও রয়েছে। তাঁরা দুর্নীতি দমন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের ওপর আশাবাদী হতে পারছেন না। ফলে জরিপে মানুষের ভাবনার একধরনের মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৭৩ শতাংশ আশা করছেন, নির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফল হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝায়, তাদের নৈতিকভাবে বড় ধরনের অধঃপতন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলেও দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচিত সরকার আসার পর চট করে এই বাহিনীর মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে, সেটা ভাবাটা খুব যৌক্তিক মনে করি না। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুনর্গঠন হতে হবে।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেভাবে চলে আসছে, তাতে নির্বাচনের পর যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার মানসিকতা দেখাতে পারবেন, সেই আস্থা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচিত সরকার সফল হবে বলে আশা করছেন ৬৯ শতাংশের বেশি মানুষ। এই আশা করাটা খুব অযৌক্তিক না বলে আমি মনে করি। এই যে দেড় বছর পার হয়ে গেল, এর মধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্যব্যবস্থায় তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এটার অন্যতম কারণ, যখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে, অনিশ্চয়তা থাকে, তখন বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ে না। ফলে সবাই আশা করছে যে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। একই ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও ভাবা হচ্ছে।
প্রথম আলো গ্রাফিকস