অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে: আইএমএফের বিবৃতি
Published: 13th, November 2025 GMT
অর্থনীতিতে এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো হলো দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
আইএমএফ বলেছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
আইএমএফ আজ সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব কথা বলা হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করেছে। এই দলের নেতৃত্ব দেন ক্রিস পাপাজর্জিও। সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিনিধিদলটি।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সমস্যা মোকাবিলায় সাহসী নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা যায়। ঝুঁকিও এখনো প্রবল। বিশেষ করে যদি নীতি প্রণয়নে বিলম্ব হয় কিংবা অপর্যাপ্ত নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকবে।
আইএমএফ মনে করে, মধ্য মেয়াদে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, যুব বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে বাড়াবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। তবে দুর্বল কর রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের মূলধন ঘাটতির কারণে এখনো আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। কারণ, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে উৎপাদনে বিঘ্ন হয়। অন্যদিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। যাতে সহজ, ন্যায্য ও কার্যকর রাজস্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধান করা যায়। এসব নীতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
ব্যাংক খাত সংস্কার জরুরি
ব্যাংক খাত নিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে মূলধন ঘাটতি, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, আইনি কাঠামোয় পুনর্গঠন এবং অর্থের উৎস নির্ধারণ করা থাকবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ মান পর্যালোচনা প্রয়োজন। ব্যাংক পরিচালনা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আইএমএফের সহায়তা কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা আলোচনা ভবিষ্যতেও চলবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য টেকসই সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়াসে আইএমএফ অংশীদার হিসেবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আইএমএফের দলটি সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর থ ক খ ত র আইএমএফ র প রব দ ধ দ র বল
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশ থেকে ১৯৬ প্রাণী কিনতে চায় জাতীয় চিড়িয়াখানা, কী কী থাকছে
ঢাকার মিরপুরের বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পাঁচ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ৩৫ প্রজাতির ১৯৬টি প্রাণী কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনাটি অনুমোদন দিয়েছে। চিড়িয়াখানাটিতে থাকা নিঃসঙ্গ প্রাণীদের সঙ্গী দেওয়া, আন্তপ্রজনন ঠেকানো, আয়ুষ্কাল অতিক্রম করা প্রাণী প্রতিস্থাপন, নতুন প্রজাতি সংযোজন, প্রদর্শনীর আকর্ষণ বাড়ানোর মতো বিষয় বিবেচনায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে প্রাণী কেনার মহাপরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। চলতি বছর যেসব প্রাণী কেনা হবে, তার জন্য দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
আগামী পাঁচ বছরে প্রাণী কেনার মহাপরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। চলতি বছর যেসব প্রাণী কেনা হবে, তার জন্য দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করা হবে।মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার, পরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাজাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন অর্থবছরে এলসি (আমদানির ঋণপত্র) সংকট, প্রশাসনিক জটিলতার মতো কারণে কোনো প্রাণী কেনা সম্ভব হয়নি। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এখন এলসি খুলে আবার প্রাণী সংগ্রহের পথ সৃষ্টি হয়েছে।
যে ৩৫ প্রজাতির পশুপাখি কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো—জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, আফ্রিকান সিংহ, উল্লুক, হনুমান লেঙ্গুর, কুলু বানর, সারস ক্রেন, লোনাপানির কুমির, কমন ইল্যান্ড, ওয়াটারবাক, কেশোয়ারি, আলেকজান্দ্রিন প্যারাকিট, টারকুইজ প্যারাকিট, এশীয় কালো ভালুক, গিনি বেবুন, হামাদ্রিয়াস বেবুন, সালফার ক্রেস্টেড কাকাতুয়া, মিঠাপানির কুমির, রেড ক্যাঙারু, রেড অ্যান্ড গ্রিন ম্যাকাও, হলুদ টিয়া, ধূসর ককাটেইল, লাভ বার্ড লুটিনো ফিশার, গ্রেটার কুডু, অরিক্স, ডোরাকাটা হায়েনা, হায়েনা চিত্রা, রিং-টেইলড লেমুর, গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, কালো গলা বক, অলিভ বেবুন, জিরাফ, চিতাবাঘ, আফ্রিকান গন্ডার ও ওরাংওটাং।
চলতি বছর কেনা হবে ১৪ প্রজাতির প্রাণীপরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ১৪ প্রজাতির ৭৮টি প্রাণী কিনতে চায় জাতীয় চিড়িয়াখানা।
প্রজাতিগুলো হলো—জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, আফ্রিকান সিংহ, উল্লুক, হনুমান লেঙ্গুর, কুলু বানর, সারস ক্রেন, লোনাপানির কুমির, কমন ইল্যান্ড, ওয়াটারবাক, কেশোয়ারি, আলেকজান্দ্রিন প্যারাকিট, টারকুইজ প্যারাকিট ও এশীয় কালো ভালুক।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাণীগুলো কিনতে দরকার সাত কোটি টাকা। বরাদ্দ আছে দুই কোটি। এখন এই অর্থ দিয়ে কিছু প্রাণী কেনার জন্য শিগগির দরপত্র প্রকাশ করা হবে। বাকি প্রাণীগুলো কেনার জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ পেলে পরবর্তী দরপত্র প্রকাশ করা হবে। এ অর্থবছরে যেসব প্রাণী কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য অবকাঠামো আছে। অল্পকিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন হবে।
জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন অর্থবছরে এলসি (আমদানির ঋণপত্র) সংকট, প্রশাসনিক জটিলতার মতো কারণে কোনো প্রাণী কেনা সম্ভব হয়নি। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এখন এলসি খুলে আবার প্রাণী সংগ্রহের পথ সৃষ্টি হয়েছে।কেন প্রাণী কেনার পরিকল্পনাবর্তমানে জাতীয় চিড়িয়াখানায় জেব্রা আছে পাঁচটি। একটি পুরুষ, চারটি স্ত্রী। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জেব্রাগুলোর পূর্বপুরুষ একই। তাই আন্তপ্রজনন ঠেকাতে বাইরে থেকে তিনটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী জেব্রা আনতে হবে।
স্ত্রী ওয়াইল্ডবিস্ট আছে দুটি। কোনো পুরুষ ওয়াইল্ডবিস্ট নেই। কর্তৃপক্ষ বলছে, সঙ্গী দেওয়ার জন্য তারা তিনটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী ওয়াইল্ডবিস্ট কিনতে চায়।
একটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী আফ্রিকান সিংহ আছে চিড়িয়াখানায়। প্রজননের জন্য আরও তিনটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী আফ্রিকান সিংহ কেনার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের।
চিড়িয়াখানায় স্ত্রী উল্লুক আছে একটি। সঙ্গী দেওয়াসহ বংশবৃদ্ধির জন্য চারটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী উল্লুক কিনতে চায় কর্তৃপক্ষ।
তিনটি পুরুষ হনুমান লেঙ্গুর আছে চিড়িয়াখানায়। তাদের কোনো স্ত্রী সঙ্গী নেই। সঙ্গী দেওয়ার জন্য এখন তিনটি স্ত্রী হনুমান লেঙ্গুর কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
চিড়িয়াখানায় একটি পুরুষ কুলু বানর আছে। কর্তৃপক্ষ এখন তিনটি কুলু বানর (একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী) কিনতে চায়।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা স্ত্রী কমন ইল্যান্ডটি বয়স্ক হয়ে গেছে