প্রখ্যাত নির্মাতা-সাহিত্যিক শহীদ জহির রায়হান ও কিংবদন্তি অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ছেলে তপু রায়হান আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। 

রবিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তপু রায়হানের পাশে ছিলেন তার মা সুচন্দা। সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে সুচন্দা ফিরে যান জীবনের দুঃসহ সময়ে—সংগ্রাম, ত্যাগ আর অভাবের দিনে। আবেগভরা কণ্ঠে বললেন, “নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আমার ছেলে, জহির রায়হানের ছেলে যেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করে—এটাই আমার কামনা। আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই খুশি হতেন। আমি মা হয়ে বলতে পারি, তপুর ভেতরে মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আছে।” 

আরো পড়ুন:

বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে জুবিন গার্গের শেষ সিনেমা

বাবার নির্বাচনি প্রচারে নেহা শর্মা

স্বাধীনতার স্মৃতি টেনে সুচন্দা বলেন, “স্বাধীনতার জন্য যখন মাঠে নেমেছিলাম, তখন পায়ে জুতা ছিল কি না, সেটা ভাবিনি। শুধু জানতাম, এই দেশ স্বাধীন হতে হবে, মানুষকে মুক্ত করতে হবে। সংসদ বা রাষ্ট্রপতি কে, সেটা আমাদের জানার প্রয়োজন ছিল না—আমরা জানতাম কেবল দেশ আর দেশের মানুষ।” 

জহির রায়হানকে স্মরণ করে সুচন্দা বলেন, “তিনি রাজনীতি করতেন না, কিন্তু রাজনীতিকে লালন করতেন। তার লেখনি ও চলচ্চিত্রে দেশ ও মানুষের কথা ছিল। নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের পাশে ছিলেন সবসময়।” 

এরপর তিনি উঠে এলেন জীবনের কঠিনতম সময়ের দিকে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমন সময়ও গেছে, যখন অভাবের কারণে গাছের পাতা খেয়েছি। তখন প্রায়ই খাবার জুটত না। তবু হাল ছাড়িনি। সন্তানদের মানুষ করেছি। বিশ্বাস ছিল, তারা তাদের বাবার মতো মানবিক ও দেশপ্রেমিক হবে।” 

ছোট ছেলে তপু রায়হান কখনো তার বাবাকে দেখেনি, তবু তার মধ্যেই জহির রায়হানের ছায়া দেখতে  পান বলেও জানান সুচন্দা। 

“মানুষের জন্য কাজ করতে ওর এক অদ্ভুত টান আছে। তাই সে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হার–জিত যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি মানুষ তার পাশে থাকবে।” বলেন সুচন্দা। 

ঢাকা–১৭ আসনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সুচন্দা বলেন, “গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, শাহজাদপুর, ভাসানটেক, মহাখালী এলাকার সমস্যা আমি জানি। বিশেষ করে নিম্ন–আয়ের মানুষের সমস্যাগুলো যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধান করা যায়, তবে এটি দেশের জন্য কার্যকর একটি মডেল হতে পারে।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিবার

জীবনের শেষ সম্বল ১৬ লাখ টাকা দিয়ে নগরীতে মাত্র ২ শতক জমি কিনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু)। সেখানে একটি ছোট্র দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রেতা সেলিম ও শামীম- এ দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের বলি হন তিনি।

বিক্রেতা সেলিম টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেও খুলনায় থাকা শামীম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কাউন্সিলর ডনকে দিয়ে ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে আটকে দোকান-ঘর ভাঙচুর করে রাতারাতি ক্রয়কৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে।

আরো পড়ুন:

খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর

খাবার ও পানি সমস্যায় খুবির ছাত্রী হলে ভোগান্তি চরমে

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা দেনদরবার করেও নিজের জমির দখল না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কালু ও তার স্ত্রী ক্রয়কৃত জমিতে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ঘর না থাকায় পরিবারটির রাত-দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। দিনে প্রখর রোদ এবং রাতের ঠান্ডায় তারা ঝুঁকির মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন।

এমনকি প্রতিনিয়ত জমি বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামীম আহমেদ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ ঘটনায় রবিবার (৯ নভেম্বর) খুলনা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পরিচিত কেউ এ বিষয়ে কালুর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও শামীমের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবি তুলে এবং ভিডিও করে রাখছে। এমনকি দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কালু ও তার পরিবারকে সেখান থেকে তুলে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন কালু খুলনা মহানগরীর দোলখোলার ৪৫/১ ইসলামপুর রোড এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী মেরি বেগম ও দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।

ভুক্তভোগী কালু অভিযোগ করে জানান, ২০১৭ সালে নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে শেখ মো. সেলিমের কাছ থেকে ৩ বছরের চুক্তি করে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে গ্যাসের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চুক্তির ২ বছর হতে না হতেই সেলিম তার দোকানের জায়গা বিক্রির জন্য কালুকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সেলিমের কাছ থেকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর ২ শতক জমি ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করে কবলা দলিল করে নেন (দলিল নং-৪২৯৫), যা পরবর্তীতে নিজের নামে রেকর্ডও করেন তিনি। যথারীতি তিনি খাজনাও পরিশোধ করেছেন।

তিনি জানান, তিনি জমি কেনার পর বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামিম থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে পুলিশ এসে কালুর কাগজ সঠিক দেখে সেখান থেকে চলে যায়। ২০২১ সালে সেলিমের ভাই শামিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জেডএ মাহমুদ ডনকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কালুর দোকানঘর ভাঙচুর করে বিপুল অংকের অর্থের মালামাল লুট করে এবং বাইরে ফেলে দেয়। 

তিনি আরো জানান, ওইদিন শামিমের কথামতো ডনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের তুলে তার কাউন্সিলর অফিসে তুলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে কালুকে ডন প্রশ্ন করে ‘কেন তুমি এ জমি কিনেছো’ এ কথা বলে তাকে হুমকি-ধামকি দেন। এভাবে তাদের জোরপূর্বক নিজস্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

এদিকে, জমির দখল বুঝে পেতে গত ৫ নভেম্বর থেকে অসহায় কালুর পরিবারটি ওই জমিতে উঠে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে গেলে অসহায় কালুর প্রতিপক্ষরা বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি সাংবাদিকরা সেখান থেকে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী শামিম তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজানসহ ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল চাপাতি হাতে নিয়ে গেটে তালা মেরে কালুর ওপর হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের বসবাসের তাবুও কেটে ফেলে দেয় এবং ওই জমি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে।

ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দীন কালুর স্ত্রী মেরি বেগম বলেন, “সাংবাদিকরা আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শামিম, তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজান সহ ৬-৭ জন একত্রিত হয়ে দা হাতে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে এবং আমাদের মালামাল সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলে। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেবে কে?” তিনি তাদের জমি বুঝে পেতে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জমি বিক্রেতা শেখ মো. সেলিমের ভাই মো. শামিম আহমেদ বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে।”

চাপাতি হাতে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, “ওদের অত্যাচারে আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।”

লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা সদর থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ