ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’। 

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তার (মুহাম্মদ ইউনূস) চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো নেতা নন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ইউনূসের উচিত পদত্যাগ করা এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে দেওয়া। এটাই একমাত্র উপায়।’

আওয়ামী লীগের পতনের প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১০ বছর ৬ মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। আমি এই সময়ের মধ্যে অনেক ঘটনা দেখেছি। এখন সব ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। গত বছরের ৩-৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র পুলিশ স্টেশন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন, সেই গণভবন থেকে এসএসএফের অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়। আমি নিজেও ৫-৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম এবং ৭ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়েছি।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘটনার আঁচ করতে পেরেছিলেন না কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন থানা জ্বলছে এবং পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, তখন জাতি কেবল সাক্ষী হওয়া এবং মৃতদের গণনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। পুলিশ সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে, কিন্তু পুলিশ যদি হামলার শিকার হয়, তাহলে কী হবে? আমি বলব এটি একটি যৌথ অভ্যুত্থান ছিল। জঙ্গি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান ছিল এটি।’

গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আমি একমত যে, একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, তা ইচ্ছাকৃত বা অন্যভাবে হোক। তবে এটিও একটি সামরিক অভ্যুত্থান ছিল। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে- ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এনএসআইও (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। শুধু গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।’

আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে কী এই অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, এমন প্রশ্নে  আসাদুজ্জামান খান বলেন,  ‘আমি ভুল বলব না, তবে হ্যাঁ, আমাদের দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমরা দীর্ঘ সময় নিয়েছি। এটাই হলো সমস্যা। দুই বছর পর নতুন নেতা আসতে হবে। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতাদের নির্বাচন করতে পারিনি।’

ভারত কীভাবে এই সংকটে সাহায্য করতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ভারত সর্বদাই পাশে রয়েছে। এখন ভারত কূটনৈতিক উপায়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমাদের আদালতগুলো অচল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারেন না। সব বিচারককে পুনরায় নিয়োগ করা হয়েছে। তাই প্রথমত, কূটনৈতিক চাপ এবং উচ্চস্বরে আওয়াজ তোলা উচিত, যেন আদালতগুলো আবার কাজ শুরু করতে পারে। ভারত এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।’ 

নির্বাচনে লড়ার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি ফিরে যেতে ভয় পাই না। কিন্তু সেটা তখনই হবে যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারপতিরা (স্বাধীনভাবে এবং নির্ভয়ে) মামলাগুলো শুনতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়ব, যদি আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি।’ 

শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনার সঙ্গে দেখা করতে পারি না। তবে ফোনে কথা বলতে পারি, সমস্যা সম্পর্কে বলতে পারি এবং দিকনির্দেশনা চাইতে পারি। তিন দিন আগে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, আপনারা সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন এবং আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে অবশ্যই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া

 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

শেয়ার ক্যাপশনে প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতি আমার কিছুটা শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু এটি যখন বাংলাদেশের খুনিকে প্ল্যাটফর্ম দেয়, তখন কি কেউ এই পত্রিকার ওপর আস্থা রাখতে পারে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের জানা উচিত, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই-আগস্ট গণহত্যার রূপকার। দেশের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে নিখোঁজ করা হয়েছিল, হাজার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় ৬০ লাখ বিরোধী কর্মীকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ য য কর ইউন স আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ