ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও ক্যাপ্টেন সাজিদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ
Published: 31st, January 2025 GMT
আদালত অবমাননা এবং নিয়ম বহির্ভূত কাজের জন্য ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এবং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমান সূত্রে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ বিধিবহির্ভূতভাবে বিমানের চাকরি থেকে পদত্যাগ না করে এবং বিমান থেকে ছাড়পত্র/এনওসি না নিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের চাকরিতে যোগদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে বিমান চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৭৯-এর বিধান মতে বিভাগীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ফলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা এবং বিধিবহির্ভূত কাজের দায়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বিগত ২০১৬ সালে এনওসি ব্যতীত পাইলট নিয়োগের বিরোধিতা করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন (নম্বর ১২৬৪০/২০১৬) দায়ের করে। এই রিট পিটিশনে সরকারসহ বিমানকে বিবাদী করা হয়।
রিট পিটিশন শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ এনওসি ব্যতীত এক এয়ারলাইন্সের পাইলট অন্য এয়ারলাইন্সের চাকরিতে যোগদান করতে পারবে না বলে রায় দেন। পরবর্তী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ওই রায় মেনে চলার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে পত্র পাঠায়। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বেলায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আদালতের রায় লঙ্ঘন করে এনওসি ব্যতীত চাকরিতে যোগদান করে।
বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান খান স্বাক্ষরিত লিগ্যাল নোটিশে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে এনওসি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের নিয়োগ বাতিল/স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদকে বিমান থেকে বিধিমোতাবেক পদত্যাগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই লিগ্যাল নোটিশে নির্দেশনা না মানা হলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল এবং সিভিল উভয় ধরনের মামলা করার কথা বলা হয়।
উল্লেখ্য, ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে তার স্ত্রী সাদিয়া আহমেদকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ ছিল। তার স্ত্রী জাল সনদের মাধ্যমে পাইলট ফ্লাইং লাইসেন্স নেন, ফলে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ পাইলট সাদিয়ার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা দায়ের করেছে। এবার সে পথেই হাঁটতে চলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাপ্টেন সাজিদ তার স্ত্রীর জাল সনদের মাধ্যমে বিমানে চাকরিতে যোগদান করিয়ে ক্রিমিনাল আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে বেবিবচ কর্তৃক প্রায় বছরখানেক সময় সাসপেন্ড ছিল ক্যাপ্টেন সাজিদের ফ্লাইং লাইসেন্স। সেই লাইসেন্স ফেরত পেয়েই বিমান থেকে বিধিমালা লঙ্ঘন করে এনওসি ছাড়াই ইউএস-বাংলায় চাকরিতে যোগদান করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক য প ট ন স জ দ আহম দ র ব র দ ধ চ কর ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’