এবার সার্বিয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, চাপে প্রেসিডেন্ট
Published: 3rd, February 2025 GMT
দুর্নীতি বন্ধে সার্বিয়ায় হাজারো শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর নোভি সাদে গত শনিবারও সড়ক ও সেতু অবরোধ করে বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তিন মাস আগে রেলস্টেশনের ছাদ ধসে মারাত্মক দুর্ঘটনার পর এ বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে এ বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার ছিল তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সমাবেশ। খবর এএফপি, আল জাজিরার
ইতিমধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুসিচের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ। ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচসহ উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেলস্টেশনের ছাদধসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির দাবি জানান। এর পেছনে সরকারের দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হন। এর আগে বিক্ষোভে দেশটির স্কুল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত নভেম্বরে সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর নোভি সাদে একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জন নিহত হন, এর জেরে শুরু হয় বিক্ষোভ। একপর্যায়ে তা দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয় এবং পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতিদিনই দেশটিতে বিক্ষোভ হচ্ছিল। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভে বেশি যুক্ত হয়েছিলেন। বিক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচের পদত্যাগের দাবি জানান তারা।
শনিবার বিক্ষোভকারীরা সমাবেশের জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হলে সেখানে থাকা দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জেলেনা ভুকসানোভিচ বলেন, ‘ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ভীত নই। আমরা ছেড়ে দেব না।’
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের আগে নোভি সাদ শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ শুরু হলে হাজারো শিক্ষার্থী নোভি সাদের সড়কে পতাকা নিয়ে হাজির হন এবং দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দেন। এ সময় তারা সড়ক ও শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু অবরোধ করেন। পরে তারা ফ্রিডম ব্রিজের কাছে জড়ো হন। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভে শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকেরাও যুক্ত হন।
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ও অন্য সরকারি কর্মকর্তারা বিক্ষোভ থামাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছেন। তারা এ বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি শক্তির মদদের কথা বলছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।