দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকটি সংগঠন গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিকল্পনায় দেশটির ‘নির্যাতিত’ শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া ও পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত শুক্রবার ট্রাম্প তাঁর সই করা এক নির্বাহী আদেশে বিস্তারিত তুলে ধরেন। নির্বাহী আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের বিরুদ্ধে সেদেশের কিছু শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের ‘অধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ অভিযোগের শাস্তিস্বরূপ দেশটিকে সব ধরনের ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার দেশটির শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংস হামলা চালাতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সরকার এমন একটি ভূমি বাজেয়াপ্তকরণ আইন প্রণয়ন করছে, যার অধীনে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ‘জাতিগত সংখ্যালঘু আফ্রিকানদের কৃষিসম্পত্তি জব্দ’ করা যাবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার দেশটির শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংস হামলা চালাতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সরকার এমন একটি ভূমি বাজেয়াপ্তকরণ আইন প্রণয়ন করছে, যার অধীনে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ‘জাতিগত সংখ্যালঘু আফ্রিকানদের কৃষিসম্পত্তি জব্দ’ করা যাবে।

তবে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সমন্বিত হামলা চালানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সরকার বলেছে, নতুন ভূমি আইন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণনা ভুল তথ্যে ভরা ও বিকৃত।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ।

আমাদের সদস্যরা এখানে কাজ করেন। তাঁরা এখানে থাকতে চান। তাঁরা এখানে থেকে যাবেন। আমরা এখানে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।ডার্ক হারম্যান, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের সংগঠন ‘সলিডারিটি’র প্রধান নির্বাহী‘আমরা কোথাও যাচ্ছি না’

গতকাল শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি সংগঠন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের পুনর্বাসনের যে প্রস্তাব ট্রাম্প দিয়েছেন, তারা তা গ্রহণ করছে না।

এ দুই সংগঠনের একটি ‘সলিডারিটি’র প্রধান নির্বাহী ডার্ক হারম্যান বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা এখানে কাজ করেন। তাঁরা এখানে থাকতে চান। তাঁরা এখানে থেকে যাবেন।’ তাঁদের এ গোষ্ঠী ২০ লাখ লোকের প্রতিনিধিত্ব করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

একই সংবাদ সম্মেলনে আরেক সংগঠন ‘আফ্রিফোরাম’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যালি কারিয়েল বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই: আমরা কোথাও যেতে চাই না।’

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমির বণ্টন নিয়ে বিভেদ দীর্ঘদিনের। সেখানে শ্বেতাঙ্গ শাসনামলে হওয়া বৈষম্য দূর করার যে প্রচেষ্টা, রক্ষণশীল ডানপন্থীরা তার তীব্র সমালোচনা করেন।

ওই সমালোচনাকারীদের দলের একজন ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ এ ধনীর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাস্ক এখন ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একজন।

শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সমন্বিত হামলা চালানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সরকার বলেছে, নতুন ভূমি আইন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণনা ভুল তথ্যে ভরা ও বিকৃত।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত মাসে একটি বিলে সই করেন। বিলে বলা আছে, জনস্বার্থে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার চাইলে শূন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে।

ওই বিলের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার যুক্তি, বিলটি সরকারকে ইচ্ছেমতো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয় না; বরং প্রথমে (সম্পত্তির) মালিকের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ২ ফেব্রুয়ারি এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভবিষ্যৎ সব তহবিল বন্ধ রাখব।’

এ পোস্ট দেওয়ার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা ভয়ংকর কিছু করছেন, ভয়ানক কিছু। এখন সেসব নিয়ে তদন্ত হবে। আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কী করছে, আমরা সেটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত.

..তারা জমি কেড়ে নিচ্ছে, জমি বাজেয়াপ্ত করছে এবং তারা আসলে যা করছে, সেটা হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু।’

আরও পড়ুনএবার দক্ষিণ আফ্রিকায় তহবিল স্থগিতের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলেছে, বর্ণবাদী শাসন আমলে ১৯১৩ সালের আদিবাসী ভূমি আইন (নেটিভস ল্যান্ড অ্যাক্ট ১৯১৩)–এর মাধ্যমে হাজারো কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারকে জোর করে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

ভূমির মালিকানা নিয়ে এ বিরোধ দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ সংবেদনশীল বিষয়। এ নিয়ে অধিকারের প্রশ্নে দেশটির ডানপন্থীরা এক বিন্দুতে জড়ো হয়েছেন। মাস্ক ও ডানপন্থী সাংবাদিক কেটি হপকিন্স শ্বেতাঙ্গ ভূমিমালিকদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ব ত ঙ গ ক ষকদ র ওপর ব ত ঙ গ ক ষকদ র ওপর স স গঠন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ