বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে জন্য বলি, সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। বলিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। যারা জয়লাভ করবে, তারাই সরকার গঠন করবে।’

রোববার বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালামের (পিন্টু) গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর উচ্চ আদালতের রায়ে আবদুস সালামের মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা লড়াই করেছেন। এখনো লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকের কারাগারে বা গুম অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ৫ আগস্ট তিনি জেলখানায় ছিলেন। তাঁদের ৫১৮ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেক লড়াই-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দেশে পরিবর্তন এসেছে। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আবদুস সালাম (পিন্টু) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ মাথায় নিয়ে কারাগারে অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন। শত শত নেতা-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। আপনারা এমন কিছু করবেন না, যেন বিএনপির বদনাম হয়। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যদি কেউ অত্যাচার-নির্যাতন করে, তার ফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে। কারও কারণে যদি আমাদের বদনাম হয়, তিনি আমাদের দলের কেউ নন।’

সংস্কারের প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল আছে। কিছু নতুন, কিছু পুরোনো। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। সংস্কার কি খায়, না মাথায় দেয়। বাংলাদেশের সব কল্যাণকর সংস্কার করেছে বিএনপি। বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে, তার পুরোটাই সংস্কার কর্মসূচি। সংস্কারের প্রতিটা বিষয় ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।’

এদিকে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর আবদুস সালাম নিজ জেলা টাঙ্গাইলে পৌঁছালে শহরের প্রবেশদ্বার নগর জলফৈ এলাকায় তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতা-কর্মীরা। বিকেলে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত সংবর্ধনাস্থলে তাঁকে দেখতে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

গণসংবর্ধনায় আবদুস সালাম বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। এক রাতে সারা রাত নির্যাতন করা হয়েছিল। সকালে আমাকে অর্ধমৃত অবস্থায় কোর্টে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। পাঁচ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অনেকে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন। ’১৮ সাল থেকে কনডেমড সেলে রাখা হয়েছিল। সেখানেও নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’

আবদুস সালাম বলেন, ‘আজ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল গড়তে চাই। স্বৈরাচারী সরকার আমাকে ফাঁসি দিয়েছিল। কোনো দিন ভাবিনি আপনাদের মধ্যে ফিরে আসব। টাঙ্গাইলের মানুষের দেখা পাব। আমার পরিবার আমাকে ফিরে পাবে। আজ যে সালাম পিন্টু বেঁচে আছে, তা শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আশীর্বাদ।’

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের সঞ্চালনায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। এতে অন্যান্যের মধ্যে দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু), সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম খ ন আবদ স স ল ম ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।

শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি