স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় না, হয় সংসদ নির্বাচনে: নজরুল ইসলাম খান
Published: 23rd, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে জন্য বলি, সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। বলিনি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। যারা জয়লাভ করবে, তারাই সরকার গঠন করবে।’
রোববার বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালামের (পিন্টু) গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর উচ্চ আদালতের রায়ে আবদুস সালামের মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা লড়াই করেছেন। এখনো লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকের কারাগারে বা গুম অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ৫ আগস্ট তিনি জেলখানায় ছিলেন। তাঁদের ৫১৮ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেক লড়াই-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দেশে পরিবর্তন এসেছে। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আবদুস সালাম (পিন্টু) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ মাথায় নিয়ে কারাগারে অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন। শত শত নেতা-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। আপনারা এমন কিছু করবেন না, যেন বিএনপির বদনাম হয়। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যদি কেউ অত্যাচার-নির্যাতন করে, তার ফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে। কারও কারণে যদি আমাদের বদনাম হয়, তিনি আমাদের দলের কেউ নন।’
সংস্কারের প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল আছে। কিছু নতুন, কিছু পুরোনো। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। সংস্কার কি খায়, না মাথায় দেয়। বাংলাদেশের সব কল্যাণকর সংস্কার করেছে বিএনপি। বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে, তার পুরোটাই সংস্কার কর্মসূচি। সংস্কারের প্রতিটা বিষয় ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।’
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর আবদুস সালাম নিজ জেলা টাঙ্গাইলে পৌঁছালে শহরের প্রবেশদ্বার নগর জলফৈ এলাকায় তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতা-কর্মীরা। বিকেলে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত সংবর্ধনাস্থলে তাঁকে দেখতে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
গণসংবর্ধনায় আবদুস সালাম বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। এক রাতে সারা রাত নির্যাতন করা হয়েছিল। সকালে আমাকে অর্ধমৃত অবস্থায় কোর্টে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। পাঁচ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অনেকে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন। ’১৮ সাল থেকে কনডেমড সেলে রাখা হয়েছিল। সেখানেও নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’
আবদুস সালাম বলেন, ‘আজ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল গড়তে চাই। স্বৈরাচারী সরকার আমাকে ফাঁসি দিয়েছিল। কোনো দিন ভাবিনি আপনাদের মধ্যে ফিরে আসব। টাঙ্গাইলের মানুষের দেখা পাব। আমার পরিবার আমাকে ফিরে পাবে। আজ যে সালাম পিন্টু বেঁচে আছে, তা শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আশীর্বাদ।’
জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের সঞ্চালনায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। এতে অন্যান্যের মধ্যে দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু), সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম খ ন আবদ স স ল ম ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোনও মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমির খসরু
কোনও মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনও মহামানব কোনও দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।