এখন আমি সরকারে আছি, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই: আসিফ মাহমুদ
Published: 27th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে, সবাই জনকল্যাণমুখী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকায় বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগরে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নই। এখন সরকারের দায়িত্বে আছি। এই সরকারের দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় রূপান্তরের যে দায়িত্বটা রয়েছে, সে কারণে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারব না। তবে আমার প্রত্যাশা থাকবে শুধু নতুন দল নয়, বাংলাদেশের যে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে, সবাই জনকল্যাণমুখী হবে, জনগণের জন্য কাজ করবে। জনগণই যেন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হয়।’
উপজেলার আকাবপুর হাজী ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ‘আকাবপুর ইউনিয়নবাসীর’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘উপজেলার সার্বিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথি ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। আকাবপুর আসিফ মাহমুদের নিজ গ্রাম। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজ উপজেলায় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো সফরে আসেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই সরকারের নানা উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন ইতিপূর্বে ছিনতাইয়ের সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছিল। তাই নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আপনারা দেখবেন ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাহিনীগুলো এখন অ্যাকটিভ (সক্রিয়) অবস্থায় আছে, আমরা আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে।’
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার কারণে মাদক এখানে একটি বড় সমস্যা। একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাইলে অবশ্যই যে তরুণ প্রজন্ম সামনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে, সেই তরুণ প্রজন্মকে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে হবে। তবে তরুণ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মাদক। তাই মুরাদনগরে মাদক ব্যবসা এবং মাদক চোরাচালান বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা হবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলে সারা দেশের যেসব জায়গা উন্নয়নবঞ্চিত ছিল, সেই অঞ্চলগুলোতে আমরা বিশেষভাবে কাজ করার লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবেই মুরাদনগরে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো.
এর আগে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা সদর ও আকাবপুর ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় দুটি সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এদিন রাতে তিনি উপজেলার সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরিফের বার্ষিক ইছালে সাওয়াব মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর সরক র র উপদ ষ ট উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস