তরুণদের রাস্তায় বিক্ষোভ আবার প্রাণ ফেরাচ্ছে ধুঁকতে থাকা প্রগতিশীল দলগুলোর মধ্যে। এই মডেল সব জায়গায় কাজে লাগতে পারে।

টানা ২২ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা এবং তুর্কি জনগণকে ইসলামিক ফ্যাসিবাদের অনুগত বানানোর চেষ্টা—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াচ্ছে তুরস্ক। দেশজুড়ে, এমনকি সরকারপন্থী এলাকাগুলোতেও, এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে।

এই প্রতিবাদের আগুন আরও বেড়েছে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর। গ্রেপ্তারের কয়েক দিনের মধ্যেই আন্দোলন আরও বড় আকার নেয়। গণতন্ত্র, সম্মান আর স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। অনেকের কাছে এটি ২০১৩ সালের আন্দোলনের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। তবে এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। এরদোয়ানের শাসনে বেড়ে ওঠা তরুণেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে একসময় হতাশ ছিলেন। তাঁরা এখন রাস্তায় নেমেছেন। পুলিশের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন আর জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তাঁরা ঝুঁকি নিচ্ছেন।

একটি পোস্টারে লেখা স্লোগান পুরো পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছে—‘আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে’। বিক্ষোভে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-রসিকতা থাকলেও, সবাই জানে, এটি মজা করে লেখা নয়। তুরস্ক এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে ফিরে যাওয়ার পথ নেই। যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। হয় এরদোয়ান পিছু হটবেন, নাহলে.

..। সেই ‘নাহলে’ কী হতে পারে, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। তবে ভয় ভাঙার এই জেদ নজিরবিহীন। আর এবারের ঘটনা ২০১৩ সালের আন্দোলনের মতো নয়। প্রধান বিরোধী দলও এই রাজনৈতিক প্রতিরোধকে আশ্রয় দিচ্ছে; অন্তত চেষ্টা করছে।

ইমামোগলু শুধু ইস্তাম্বুলের মেয়র নন, তিনি এরদোয়ানের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীও। গ্রেপ্তার হওয়ার ঠিক আগে তিনি ঘোষণা করতে যাচ্ছিলেন যে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ইমামোগলুর জনপ্রিয়তা এরদোয়ানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনা ছিল ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিরোধী দল পরিচালনার জন্য একজন সরকারি লোককে বসানো। এভাবেই এরদোয়ান বছরের পর বছর ধরে বিরোধীদের দমন করে আসছেন। আগেও বহু বিরোধী মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এবার জনগণ জানত যে ইমামোগলুর পালা আসবে।

ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এরদ য় ন

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ