সিদ্ধিরগঞ্জে ৬শ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদক বিক্রয়ের নগদ ৭ হাজার টাকাসহ মাদক সম্রাট হাবিবুর রহমান (৩৯) ও তার সহযোগী ইয়াছিন (২৩) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

এরআগে সোমবার (৫ মে) দিবাগত রাত সোয়া ১০ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর বটতলা বেইলী ব্রীজ এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান।

গ্রেপ্তারকৃত মো.

হাবিবুর রহমান সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকার এন্তাজ মিয়ার ছেলে এবং মো. ইয়াছিন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার গুচ্ছগ্রাম এলাকার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে। সে সিদ্ধিরগঞ্জের আদর্শনগর এলাকার মনিরের বাড়ির ভাড়াটিয়া।

গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শাহীনুর আলম জানায়, গ্রেপ্তারকৃত হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২১টি মাদক মামলা রয়েছে।  সে মাদক সম্রাট হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জে চিহ্নিত। তাদেরকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। 
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

চব্বিশের অভ্যুত্থানে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি

পিতা চলে গেলেই পিতৃতান্ত্রিকতা যে বিদায় হয় তা নয়। পিতৃতান্ত্রিকতার অবসান ঘটানোর জন্য একটি সামাজিক বিপ্লব আবশ্যক। আমাদের দেশে সে বিপ্লব আজও ঘটেনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও যে সহসা ঘটবে এমন আশা নেই। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর নিশ্চয়তা-প্রাপ্তি দূরের সুখস্বপ্ন বটে। আর সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেহেতু ব্যক্তিমালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা ঘটেনি, তাই বৈষম্য উৎপাদনের প্রকৃত ক্ষেত্রটি অক্ষুণ্নই রয়ে গেছে। আর স্বাধীনতা? সেটা তো আমরা বারবার পাচ্ছি। সাতচল্লিশে পেলাম, পেলাম একাত্তরে, বলা হচ্ছে চব্বিশের ৫ আগস্টেও পেয়েছি। কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছি কি? 

আবারও স্মরণ করা যাক যে, প্রকৃত স্বাধীনতার নাম হচ্ছে মুক্তি। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই মুক্তি আশেপাশে কোথাও নেই। বৈষম্যের রাজত্বই সর্বত্রব্যপ্ত। ওই বৈষম্যের রক্ষক হচ্ছে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। ফ্যাসিবাদ পুঁজিবাদেরই নিকৃষ্টতম রূপ। 

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আওয়াজটা ছিল স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববঙ্গ প্রতিষ্ঠার। মনে হচ্ছিল তার প্রতিষ্ঠা বুঝি ঘটেই যাবে। কারণ অভ্যুত্থানে সমাজতন্ত্রীরাই ছিলেন প্রধান শক্তি। কিন্তু জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তো সম্ভব হয়নি; রাষ্ট্রক্ষমতা চলে গেছে বুর্জোয়াদের হাতেই। এবং এই বুর্জোয়ারা এতোই অধঃপতিত যে তাদের দেশপ্রেম ক্রমাগত নিচের দিকে নেমেছে, তরল পানি যেভাবে নামে। বুর্জোয়ারা ভূমি, নদী, বন, ব্যাংক যা কিছু দেখতে পেয়েছে সবকিছু লুণ্ঠন করে কিছুটা ব্যক্তিগত ভোগে বাকিটা বিদেশে পাচারের কাজে লাগিয়েছে। পুঁজিবাদী ধারায় তারা যে উন্নয়ন ঘটিয়েছে তাতে মেহনতি মানুষ, যাদের শ্রমে উন্নয়ন ঘটেছে তারা, কেবল বঞ্চিতই নয়, উন্নয়নের চাপে বিধ্বস্তও বটে। বাংলাদেশে বর্তমান যে সঙ্কট সেটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থার এবং তার শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা সৃষ্ট। রাষ্ট্রের এই শাসকেরা দেশপ্রেমবিবর্জিত এবং আত্মস্বার্থপুষ্টির সাধনায় লিপ্ত। সম্রাটদের গায়ে জামাকাপড় নেই। ভুক্তভোগী জনগণ সবই দেখে; কিন্তু কিছু বলতে পারে না; কারণ তাঁদের নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠেনি।  

আরো পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতি-সমাজ ও সংস্কৃতির আকাঙ্ক্ষা

শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আগের অভ্যুত্থানগুলোর থেকে বেশ কিছুটা ভিন্ন। অভ্যুত্থান ছাত্ররা শুরু করলেও এর যে শক্তি ও বেগ সেটা সৃষ্টি হয়েছে বিপুলসংখ্যক জনমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। উনসত্তরেও ছাত্ররাই আরম্ভ করেছিল, অংশ নিয়েছিলেন কর্মজীবীরা ও মেহনতিরা; কিন্তু অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তখন এমন ব্যাপকতা ও এতটা স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। এতো রক্তও ঝরেনি। উনসত্তরের অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে এগুচ্ছিল; কিন্তু থামিয়ে দিয়েছে বুর্জোয়ারা; তাদেরকে সামাজিক বিপ্লবের আতঙ্কে পেয়েছিল। এবারের অভ্যুত্থানের জমিনটাও কিন্তু হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি; একদিকে ছিল মানুষের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কাজ; অন্যদিকে, দু’য়ের বিপরীতে বিগত সরকারের অভাবনীয় সন্ত্রাস। জমিন তৈরি হচ্ছিল দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, কিন্তু তাঁর শাসন ছিল পুরোদস্তুর পিতৃতান্ত্রিক এবং তিনি দমনপীড়নের যে নজির রেখে গেলেন সে-কাজ স্বাধীন বাংলাদেশের অন্য কোনো শাসক করতে পারেননি। ওই কাজ তিনি আরও করতেন, সশস্ত্র বাহিনী যদি অসম্মত না হতো। 

হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ পনের বছর নয়, দশ বছরের অধিক তাঁর পিতৃতান্ত্রিক শাসন কায়েম রাখতে পারেননি। জনতার অভ্যুত্থানে ভূপাতিত হয়েছেন। তিনিও চেয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে, রক্তপাত ঘটিয়ে টিকে যেতে। সশস্ত্র বাহিনী সম্মত হয়নি বলেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। তবে তিনি পালাতে পারেননি; সদ্য-পতিত প্রধানমন্ত্রী যেমনটা পেরেছেন। শেষ মুহূর্তেও তাঁর ইচ্ছা ছিল সশস্ত্র বাহিনী আরও বেশি বলপ্রয়োগ করুক। কিন্তু বাহিনীর প্রধানরা সম্মত হননি। যে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য তাঁরা প্রতিপালিত তাঁদের রক্তেই মাতৃভূমিকে সয়লাব করে দেবেন এমন কাজে সায় দেওয়াটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ এবারকার অভ্যুত্থানের ব্যাপকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা দু’টোই ছিল অনেক বিস্তৃত ও গভীর; আর বৈষম্যবিরোধিতার যে আওয়াজ উঠেছিল সেটা ছিল প্রায় সর্বজনীন।

শিক্ষার্থীরা চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগের বৈষম্য মানবে না বলে ফুঁসে উঠেছিল, কিন্তু তাদের অভিভাবকদেরও অধিকাংশের বুকের ভেতর ছিল ওই একই আওয়াজ। কারণ তাঁরাও নানাভাবে এবং বহুরকমের বৈষম্যের দ্বারা ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। সমাবেশে ও মিছিলে যাঁরা এসেছেন তাঁরা বৈষম্য কী জিনিস সেটা মর্মে মর্মে জানেন। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের ‘সুদৃশ্য’ অট্টালিকাটি যে দাঁড়িয়ে আছে তার গোড়ায় রয়েছে বৈষম্য। যাদের শ্রমে এর নির্মাণ তাঁরা এই অট্টালিকার আরামদায়ক অভ্যন্তরে ঠাঁই পান না, তাঁরা থাকেন নির্মাণের ফলে তৈরি খানা-খন্দে। অসন্তুষ্ট ও অশ্রুসিক্ত বঞ্চিতদের কাঁধের ওপর ভর করেই গোটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা টিকে আছে, নিচের মানুষ নড়েচড়ে উঠলেই সর্বনাশের শঙ্কা। নিচের মানুষদের তাই দাবিয়ে রাখা হয়, ভয় দেখানো হয় যতো প্রকারে পারা যায়। 

যে কোনো অভ্যুত্থানেরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য মানুষের ভয় ভেঙে যাওয়া। এবারও সেটা ঘটেছে। ভয় ভেঙেছে একত্র হতে পারার কারণে। ভয় ভেঙেছে তারুণ্যের দরুন। তারুণ্যের অবিস্মরণীয় প্রতীক, আবারও স্মরণ করতে হয়, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের দুই হাত ছড়িয়ে বুক উঁচিয়ে পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানো। ওই ভাস্কর্যটি কেউ কখনো ভাঙতে পারবে না, কারণ ওটি তৈরি হয়েছে অভঙ্গুর উপাদানে এবং স্থান করে নিয়েছে আমাদের সমষ্টিগত ইতিহাসের পাতায়। 

রাষ্ট্র তারুণ্যকে ভয় করে, সমাজও যে তারুণ্যকে পছন্দ করে তা নয়। তারুণ্যকে দমিত করার সকল ব্যবস্থা রাষ্ট্র তার নিজের অভ্যাসবশতই করে থাকে, সমাজও তাতে যোগ দেয়। একটা ব্যাপার ছোট মনে হতে পারে কিন্তু মোটেই ছোট নয়; সেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন না-দেওয়া। সেখানে দুঃসহ একাধিপত্য চলে সরকারি দলের ছাত্রদের। গণতন্ত্রের প্রাথমিক শিক্ষাটা তরুণরা পেতে পারে শিক্ষায়তনিক ছাত্রসংসদ থেকেই। ছাত্রসংসদ আগে ছিল; এমনকি সামরিক শাসনের সময়েও ছাত্রসংসদকে বিলুপ্ত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ১৯৯১’তে, স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর থেকে ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারেরা যখন ক্ষমতায় আসা-যাওয়া শুরু করলো ঠিক তখন থেকেই ছাত্রসংসদ লুপ্ত হয়ে গেল, চললো সরকার দলীয় ছাত্র নামধারীদের স্বৈরাচার। এই যে ‘অগ্রগতি’ এর তাৎপর্যটা কী? তাৎপর্য হলো এটাই যে ইতিমধ্যে রাষ্ট্র আরও বেশি স্বৈরতান্ত্রিক হয়েছে, যাত্রা করেছে ফ্যাসিবাদের অভিমুখে, যার আপাত-চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল পতনপূর্বে বিগত সরকার প্রধানের জমিদারতন্ত্রে। তরুণরা গুন্ডা-বদমাশ হোক, মাদকের পাল্লায় পড়ুক, তারুণ্য গোল্লায় যাক, কিশোর গ্যাং গঠিত হোক- কোনো কিছুতেই আপত্তি তো নেই-ই, বরং সাগ্রহ অনুমতি আছে। কারণ তরুণ যতো তার তারুণ্য খোয়াবে শাসকদের গদি ততোই পোক্ত হবে। সোজা হিসাব!

বৈষম্যবিরোধিতার আওয়াজটা কিন্তু মোটেই নতুন নয়। এটি বঞ্চিতদের অতিপুরাতন রণধ্বনি; কিন্তু তাকে বারবার তুলতে হয়। কারণ বৈষম্য দূর হয় না, হবেও না যদি ব্যবস্থা না বদলায়। ব্যবস্থা না-বদলালে বৈষম্য বাড়তেই থাকবে, এবং বাড়ছেও। উনসত্তরের ব্যবস্থা-কাঁপানো ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পরে মওলানা ভাসানী তাঁর সেই অসামান্য তরুণ কণ্ঠে আওয়াজটা নতুন করে তুলেছিলেন; বলেছিলেন, “কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।” বিশ্ববরেণ্য এক কবিতার বুঝি প্রথম পঙ্‌ক্তি। ওই উনসত্তরেই ভাসানীপন্থি তরুণ আসাদ যখন পিতৃতান্ত্রিক স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তখন তাঁর সহযোদ্ধারা স্লোগান দিয়েছিলেন, “আসাদের মন্ত্র জনগণতন্ত্র”। একই আওয়াজ, ভিন্ন শব্দগুচ্ছে। আসাদের পূর্বসূরী বায়ান্নর শহীদ বরকতও ছিলেন একই রাজনৈতিক ধারার মানুষ। সে-ধারাও বৈষম্যবিরোধিতারই, রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। 

ওই ধারা জয়যুক্ত হয়নি। এবারও হয়নি। যে জন্য বারবার আমাদের আন্দোলনে যেতে হচ্ছে, ঘটাতে হচ্ছে নতুনতর অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থান জনগণই ঘটান, কিন্তু ক্ষমতায় রয়ে যান বুর্জোয়ারাই। নতুন পোশাকে, নতুন নামে, নতুন ভাষায় তাঁরাই আসেন, বারবার ফিরে ফিরে ঘুরে ঘুরে। পরের শাসক আগের শাসকের তুলনায় অধিকতর নির্মম হন। বুর্জোয়া শাসনের পতন কোনো কালেই ঘটবে না যদি না পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদায় নেয়। আমাদের দেশে রাজনীতিতে দল অনেক, কিন্তু ধারা মাত্র দু’টি। একটি বুর্জোয়াদের, অপরটি জনগণের। বুর্জোয়া ধারাটিই প্রধান। আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে শুরু করে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। অতিশয় ভদ্র উদারনৈতিকরা যেমন ভয়াবহ রকমের রক্ষণশীলরাও তেমনি এই ধারারই অন্তর্গত। বাইরে যা হোন না কেন, অন্তরে এঁরা সবাই ব্যক্তি মালিকানায় ও ব্যক্তিগত মুনাফায় বিশ্বাসী, এবং পুঁজিবাদের সমর্থক। এই ধারার বিপরীতে এবং সম্পূর্ণরূপে বিপক্ষে রয়েছে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক ধারাটি। সেটি সমাজতান্ত্রিক। ওই ধারার লক্ষ্য সম্পত্তিতে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা। 

আমাদের দেশের সমাজতন্ত্রীদের প্রধান দুর্বলতা ঐক্যের অভাব। পুঁজিবাদীদের জন্য কিন্তু সেই সমস্যাটা নেই; তাদের মধ্যে ঝগড়া আছে অবশ্যই, খুনোখুনিও ঘটে, বিষয় সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে পরিবারের মধ্যে যেমনটা ঘটে থাকে; কিন্তু আদর্শগত লক্ষ্যে তারা ঐক্যবদ্ধ, আর সে লক্ষ্যটা হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা সচল রাখা। এ ক্ষেত্রে তারা একাট্টা; এবং তাদের সকলের সুনির্দিষ্টি শত্রু হলো সমাজতন্ত্রীরা। সমাজতন্ত্রীরা চান সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিমালিকানার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে। সামাজিক সম্পর্কগুলোকে মানবিক করতে ও টিকিয়ে রাখতে। অর্থাৎ মানুষের মনুষ্যত্বকে বজায় রাখতে এবং বিকশিত করতে। বুর্জোয়াদের সাধনা শোষণ ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়ার। দ্বন্দ্বের ওই নাটকটা চলছে, অভ্যুত্থানও ঘটছে, কিন্তু বৈষম্য ঘুঁচছে না, ক্ষমতা রয়ে যাচ্ছে নিপীড়ক বুর্জোয়াদের হাতেই। হাতবদল ও হাতসাফাই-ই ঘটছে শুধু, খেলার তাসের মতো। এবং সেই ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়োজনেই বুর্জোয়ারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে দানবে পরিণত করতে চায়। নিষ্ঠুরতা বৃদ্ধি পায়, কারণ বিক্ষুব্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ে, তারা বিক্ষোভ করে, বিদ্রোহে অংশ নেয়, এবং সম্ভাবনা দেখা দেয় পুঁজিবাদবিরোধী সংগ্রামটা জোরদার হবার। 

আমাদের দেশের সমাজতন্ত্রীরা সকল গণঅভ্যুত্থানেই থেকেছেন, অভ্যুত্থানের চালিকা শক্তি হিসেবেও কাজও করেছেন; কিন্তু তাঁরা নেতৃত্ব দিতে পারেন না, বিভক্তি ও বিভ্রান্তির কারণে। আর এই সুযোগটি নিয়ে থাকে বুর্জোয়ারা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ