কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির আরও সম্পৃক্ততা চান অর্থ উপদেষ্টা
Published: 8th, May 2025 GMT
শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশের কর প্রশাসনের আধুনিকায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সম্পৃক্ততা ‘আরও গভীর’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ইতালির মিলানে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এমন প্রস্তাব দেন তিনি। অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে এ বৈঠক হওয়ার কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তুলে ধরে কিছু ক্ষেত্রে এডিবির সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার প্রস্তাব দেন। যার মধ্যে রয়েছে- সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা, কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ।
এতে আরও বলা হয়, সালেহউদ্দিন আহমেদ জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এডিবির মোট ঋণ ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ২৯৪ কোটি ডলার। যা উভয় পক্ষের দৃঢ় সহযোগিতার প্রতিফলন।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকায় অর্থ উপদেষ্টা এডিবির সহায়তা যেন দেশের পরিবর্তনশীল উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়- এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই রূপান্তরের মুহূর্তটি একটি ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও সংস্কার ভিত্তিক সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গেও চিহ্নিত। এই প্রেক্ষাপটে তিনি শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও জনসেবার মানোন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের সাহসী সংস্কার কর্মসূচিতে এডিবিকে সমর্থনের আহ্বান জানান।
অর্থ উপদেষ্টা টেকসই নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এডিবির জরুরি সহায়তার বিষয়টিও তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট ও জলবায়ু সহনশীল শহর, উন্নত পৌর সেবা এবং আঞ্চলিক নগর অবকাঠামো। জ্বালানি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে এডিবির সহায়তাও চান তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিধারা অব্যাহত রাখতে এডিবির বর্ধিত রেয়াতি সহায়তা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, কার্যকর জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এডিবির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সহনশীলতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই এডিবি বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বছর এডিবির বার্ষিক সভায় যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন মাসাতো কান্দা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
গায়ক জুবিনের প্রেম জীবন
২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ইয়া আলি’ গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান ‘কিং অব হামিং’খ্যাত এই গায়ক। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন জুবিনের স্ত্রী গরিমা। তার বুকফাটা আর্তনাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। ফলে, চর্চায় পরিণত হয়েছে—জুবিন-গরিমার প্রেমজীবন।
জুবিনের জন্মকথা
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরা শহরে অসমীয়া একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন গার্গ। তার বাবার নাম মোহনী মোহন ববঠাকুর, মায়ের নাম ইলি ববঠাকুর। প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক জুবিন মেহতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোহন-এলি দম্পতি পুত্রের নাম রাখেন জুবিন ববঠাকুর। কিন্তু পিতা-মাতার পদবি ‘ববঠাকুর’ বহন না করে, তিনি তার ব্রাহ্মণ গাত্রের (গোত্র) উপাধি ‘গার্গ’ গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তার একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি হয়—যা বিশ্বজোড়া অনুপ্রেরণার সঙ্গে অসমীয় ঐতিহ্যের ভারসাম্য রক্ষা করে।
আরো পড়ুন:
মাইনাস ১০ ডিগ্রিতে শুটিং, আহত সালমান
জুবিনের কফিন জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী
জুবিনের বাবা মোহিনী মোহন ববঠাকুর ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ‘কপিল ঠাকুর’ ছদ্মনামে কবিতা ও গান রচনা করতেন। গীতিকার ও কবি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে তাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করতে হয়েছে। ফলে জুবিনকে তার শৈশবের অনেকটা সময় বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়। জুবিনের মা ইলি ববঠাকুর ছিলেন একজন সংগীতশিল্পী।
জুবিনের জীবনে প্রেম
জুবিন গার্গ তার যৌবনে বহু প্রেম এসেছে। বলা যায়, রঙিন ছিল তার প্রেমজীবন। স্কুল-কলেজে তার একাধিক প্রেম ছিল। এ তালিকায় রয়েছে—জুনমনি, রুনঝুন। পরবর্তীতে জুবিন তার গানে ও শিল্পে এ সব প্রেম প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি, তার অ্যালবাম ‘জুনমনি রুমঝুম’ এর নামকরণও এই প্রেমের স্মৃতি থেকে এসেছে।
একটি চিঠি বদলে দেয় সব
একটি চিঠির মাধ্যমে জুবিনের জীবনে আগমন ঘটে গরিমা সাইকিয়ার। আসামের গোলাঘাটের তরুণী গরিমা। মুম্বাইয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে পড়ার সময় জুবিনের ‘অনামিকা’ ও ‘মায়া’ অ্যালবামের গান শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হন গরিমা। ঘরছাড়া, মন খারাপের মুহূর্তে গায়ককে একটি চিঠি লেখেন এই তরুণী। গরিমার এই চিঠি প্রশংসা ও আবেগে ভরা ছিল। আর সেই অচেনা অনুরাগী গরিমার চিঠি পৌঁছায় জুবিনের কাছে। সাধারণত, অনুরাগীদের চিঠির জবাব দিতেন না জুবিন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, গরিমার সেই চিঠির জবাব দেন জুবিন। সেই একমাত্র যোগাযোগ ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। একটি সাধারণ চিঠি যে দুটি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, জুবিন-গরিমার গল্প তার জীবন্ত উদাহরণ।
জুবিনের প্রেমে খলনায়ক শ্বশুর
প্রেম গাঢ় হতেই জুবিন গরিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের এই প্রেমের পথ সহজ ছিল না। গরিমার পরিবার, বিশেষত তার বাবা, এই সম্পর্ক মেনে নেননি। অন্যদিকে, জুবিনের অস্থির ও খামখেয়ালি স্বভাবও গরিমাকে বিচলিত করত। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে একসময় গরিমা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময় জুবিনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
অন্ধকার কাটিয়ে জুবিন-গরিমার বিয়ে
প্রকৃত ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আবার কাছাকাছি আসেন। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, বলিউডে জুবিনের বড় ব্রেকের আগেই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গরিমা শুধুই স্ত্রী নন, হয়ে ওঠেন জুবিনের জীবনের স্থিতিশীল এক আশ্রয়। একদিকে, গরিমা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, অন্যদিকে, ছায়াসঙ্গী হন জুবিনের সৃষ্টিশীল পথচলায়। আসামের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হয়ে ওঠেন তারা।
২০০৬ সালে ‘ইয়া আলী’ গানটি জুবিনকে ভারতের জাতীয় স্তরে পরিচিতি এনে দেয়। কিন্তু গরিমার সঙ্গে প্রেম ও সাময়িকা বিচ্ছেদ জুবিনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনে বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন জুবিন। এ গায়ক তার অনেক গানে সেই যন্ত্রণার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বলেও অনেকে মনে করেন।
ঢাকা/শান্ত