অবহেলা, অযত্ন ও গাফিলতিতে সু-চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না দেশের প্রায় সোয়া চার কোটি মানসিক রোগী। তবে এই সব মানসিক রোগীদের সুচিকিৎসা ও গবেষণার জন্য যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য গত সোমবার (২০ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনেতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদনের খবরে পাবনার মানুষ খুশি হয়েছে। 

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর হবে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার হবে। সঙ্গে থাকবে গবেষণা, কেস স্টাডি ও মানসিক রোগীদের পুর্নবাসন। 

আরো পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে ড্রেন থেকে জীবিত নবজাতক উদ্ধার

৩ দিন বিদ্যুৎহীন মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিনের উদ্যোগে প্রায় দুই বছর আগে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। অজ্ঞাত কারণে একনেকে অনুমোদনের আগে তা স্তিমিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং একনেকে প্রকল্পটি উত্তোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশে জনসংখ্যার প্রতি চারজনে একজন মানসিক রোগী রয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে প্রায় সোয়া চার কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ছিল মূল ভরসা। ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার’। এই প্রতিপাদ্য ছিল স্তরে স্তরে উপেক্ষিত।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, এই সোয়া চার কোটি মানুষের মধ্যে নারী ও পুরুষ মিলে প্রাপ্ত বয়স্করা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং শিশু-কিশোররা ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী। পাবনা মানসিক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০০। এর মধ্যে ৩৫০টি জেনারেল বেড এবং ১৫০টি পেয়িং বেড। সব বেডে রোগীতে ভর্তি থাকে সারা বছর। দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসাও অপ্রতুল। ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ১০০ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারে। ফলে চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ রোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, একজন মানসিক রোগীর জন্য দিনে ১০ প্রকারের ঔষধ প্রয়োজন হয়। অর্থভাবে সেখানে মাত্র ৩ প্রকারের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। খাবার নিয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। নিম্নমানের খাবারের ফলে রোগীরা প্রোটিনের অভাবে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া অন্তত সাতজন রোগী সুস্থ হওয়ার পরও দীর্ঘ ৪০ থেকে ৫০ বছর হাসপাতালে রয়েছেন।

সারা দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে পাবনা শহরের অদূরে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা বৃদ্ধি করা হয় ৫০০ শয্যায়। শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকের পদ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগী দেখার সময় সীমা ও হাসপাতাল চত্বরের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।

বর্তমানে এই হাসপাতালে ৩১টি চিকিৎসকের পদে কর্মরত রয়েছেন ২২ জন। ১১৯টি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের বিপরীতে ৭২ জন আর ১৭০টি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৬১ জন।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সেলিম মোরশেদ বলেন, ‘‘একজন মানসিক রোগীর জন্য মেডিসিন, সেবা ও শারীরিক প্রোটিন অপরিহার্য। কিন্তু তা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। একনেকে এই প্রকল্প পাসের মাধ্যমে দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।’’ 

পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. এহিয়া কামাল বলেন, ‘‘হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১২০০ তে উন্নীত করার কথা থাকলেও ১০০০ শয্যা করা হয়েছে। এটাই সুখবর। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আরো বেশি মানসিক রোগী চিকিৎসা পাবে।’’ তবে শয্যা সংখ্যার পাশাপাশি যেন জনবলও সেই হারে বাড়ানো হয় সেই দাবি জানান তিনি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লেখেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ‘মানসিক হাসপাতাল, পাবনাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তর প্রকল্প’ আজ একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।’’ 

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই প্রকল্প অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে এই সরকার পাবনাবাসীর কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’ তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও শিমুল বিশ্বাসের চেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই প রকল প ট ট উট একন ক

এছাড়াও পড়ুন:

নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা অনুষ্ঠান ‘সবকিছুর আগে ভালো মানুষ হতে হবে’

প্রধান অতিথি হয়ে আসা কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়াসহ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসা অন্তত আটজন বক্তাসহ আরও ছয়জন বক্তব্য দিলেন। ১৪ বক্তার সবারই মূল উপদেশ-আগে ভালো মানুষ হতে হবে। শুধু ভালো লেখাপড়া বা ভালো ছাত্রছাত্রী হলেই চলবে না, মেধাবী হলেই চলবে না, সবাইকে দেশপ্রেমিক হতে হবে। মানবিক মানুষ হতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম ব্যাচে ভর্তি হওয়া স্নাতক প্রথম বর্ষের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্পোর্টস সেন্টারে এ অনুষ্ঠান হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মো. আশরাফুল মুনিম খান এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক সামিয়া জাহান ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ছহীহ শাফি। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রেজারার অধ্যাপক আনিছা পারভীন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অতিথি দিলীপ কুমার বড়ুয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে উচ্চমূল্যবোধ তৈরি ও নিজেকে প্রজ্বলিত করা। শুধু ভালো শিক্ষার্থী বা ফলাফল করলেই হবে না। তোমাদের সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হতে হবে।’

নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আশরাফুল মুনিম খান বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি আধুনিক ও গবেষণানির্ভর আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এই বিশালত্বের মধ্যে ভালো-মন্দ সবই আছে। তোমরা ভালোকে গ্রহণ কর। নিজেকে শুদ্ধ, মার্জিত, রুচিশীল ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।’

২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেখ হাসিনার নাম বাদ দিয়ে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। শহরের রাজুরবাজার এলাকায় ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর জমিতে স্থাপিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে রাজুরবাজার এলাকায় টিটিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছিল। সম্প্রতি নিজস্ব ক্যাম্পাসে দুটি ভবন উদ্বোধন হয়। বর্তমানে তিনটি অনুষদে চারটি বিভাগ চালু আছে। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩৭ জন, শিক্ষক ৩০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংখ্যা ৯০ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে বিজিবির গুলি, যুবক নিহত
  • একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ধর্ষণ করেছিলেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে: স্মৃতিকথায় দাবি
  • কেন বাংলাদেশে বেকারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের ৮১ বছরের স্যান্ড্রা
  • জাপানের প্রথম নারী প্রধামন্ত্রীকে কেন ‘কট্টর রক্ষণশীল’ বলা হয়
  • যেভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে চুরি হলো ফরাসি রাজপরিবারের মুকুট
  • ‘গিফট নিয়ে হয়ে গেলাম প্রতারক!’ শাড়ি বিতর্কে তানজিন তিশা
  • ‘কেউ যেন স্বজন হারা না হয়’
  • ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের তালিকা সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা অনুষ্ঠান ‘সবকিছুর আগে ভালো মানুষ হতে হবে’