আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির গতকাল মঙ্গলবারের কমিশন সভায় জরিমানার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভাশেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে এই জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানা করা হয় মূলত বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড–সংক্রান্ত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে। বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শ্রীপুর টাউনশিপের নামে ইস্যু করা দেড় হাজার কোটি টাকার অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর এই বন্ডের জামিনদার ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। আর বন্ডটির আয়োজক ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল আইএফআইসি ব্যাংকেরই সহযোগী মার্চেন্ট ব্যাংক আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস।

বিএসইসি বলছে, বন্ডটি বেক্সিমকো গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হওয়া সত্ত্বেও কিছু বিজ্ঞাপনে এই বন্ডের প্রচার করা হয় ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেন এই বন্ড আইএফআইসি ব্যাংকের ইস্যু করা। এর মাধ্যমে মূলত বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হয়। আর ওই সময় আইএফআইসি ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলম সারওয়ার। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে তাঁকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ জুলাই শ্রীপুর টাউনশিপের জন্য ইস্যু করা বন্ডের অনিয়মের জন্য বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে কারাবন্দি) সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, বন্ডটি ইস্যুকালীন সময়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ সায়ান এফ রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি বন্ডটি ইস্যুর সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসইসির সাবেক কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ ও বন্ডটির আয়োজক আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টসের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ৩০ জুলাইয়ের বিএসইসির সভায় এই বন্ডের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবারের সভায় আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডি শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসইস বন ড র

এছাড়াও পড়ুন:

সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিবারের আর্থপাচার তদন্তে বি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, তার পুত্র রাইয়ান কবির, পুত্রবধূ নুসরাত নাহার এবং এ কাজে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় এবং সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের আড়ালে ঋণ জালিয়াতি, সন্দেহজনক লেনদেনসহ বিবিধ অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করার অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে বিএসইসি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দেশনাসাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক রানা দাশ।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় এবং সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের আড়ালে ঋণ জালিয়াতি, সন্দেহজনক লেনদেনসহ বিবিধ অনিয়মের সঙ্গে আলমগীর কবির, তার ছেলে রাইয়ান কবির, পুত্রবধূ নুসরাত নাহার এবং উক্ত কাজে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। 

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধিবিধান লঙ্ঘন করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন। এ কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯-এর ধারা ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। 

তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে

বিএসইসির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত সাউথইস্ট ব্যাংকের অভিযুক্তরা কি পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছে সে বিষয়টির অনুসন্ধান ও তদন্ত করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ২০ জুলাই সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আলমগীর কবীর। ব্যক্তিগত ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে টানা ২০ বছর সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর কবির। ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পদে থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পর্ষদে যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এম এ কাশেম। তবে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আলমগীর কবির এতদিন ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ নভেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে আলমগীর কবিরকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। একই ঘটনায় তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগমকে পাঁচ কোটি টাকা ও জামাতা তুষার এল কে মিয়াকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। 

এ ছাড়া গত ১৪ জুলাই আলমগীর কবিরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিবারের আর্থপাচার তদন্তে বি