হামজাদের ম্যাচ দেখতে জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকদের ঢল
Published: 10th, June 2025 GMT
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায়; কিন্তু ম্যাচ শুরুর ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামমুখি জনতার ঢল নামে। স্টেডিয়ামের চারপাশে প্রবেশপথগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করে। স্টেডিয়ামের গেট খোলার আগেই হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী সেখানে উপস্থিত হয়ে স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে লম্বা সারি তৈরি করেন।
বাফুফে ঘোষণা করেছিল, বেলা ২টায় স্টেডিয়ামের গেট খুলবে। কিন্তু তাও স্টেডিয়ামের বাইরে ভক্তদের জমায়েত ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গেট খুলে দেওয়ার পর ভক্তরা গ্যালারিতে প্রবেশ করতে শুরু করেন, এবং এক ঘণ্টার মধ্যে গ্যালারির অর্ধেক আসন পূর্ণ হয়ে যায়। প্রখর রোদে বসে তারা ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন। বিকাল ৪টার দিকে আকস্মিক বৃষ্টি হয় এক পশলা। এতে যারা গ্যালারিতে প্রবেশের লাইনে ছিলেন তারা পুরোপুরি ভিজে গেছেন।
বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ বাংলাদেশের পতাকা হাতে, কেউ মাথায় পতাকা বাঁধে স্টেডিয়ামে আসেন। তাদের মধ্যে এক ভক্ত হামজা, শমিত ও ফাহামিদুলের নাম নিয়ে কবিতা লিখে নিয়ে এসেছিলেন—‘হামজা-শামিত-ফাহামিদুল, গোল দিতে করিও না ভুল।’
এছাড়া, দর্শকদের মধ্যে একটি তরুণ হামজা চৌধুরীর হালকা স্টাইল অনুকরণ করে চুল কেটেছিলেন। তারা এমনকি ‘হামজা-শমিত-ফাহামিদুলের ঠিকানা; পদ্মা মেঘনা যমুনা’ লেখা প্ল্যাকার্ডও বহন করেছিলেন।
স্টেডিয়ামের গেট খুললেও বিকেল ৫টার পর আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা এবং আয়োজনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। ফলে, আগেভাগে গেটের সামনে লম্বা সারিতে অপেক্ষা করা দর্শকরা তাদের আসন নিশ্চিত করেন।
ফুটবলপ্রেমীরা এমন একটা উন্মাদনা নিয়ে স্টেডিয়ামে আসছেন, যা ৮০-৯০-এর দশকে ছিল। সেই সময়ে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ দেখার জন্য স্টেডিয়াম পূর্ণ হয়ে যেত। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এটি সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ।
এবার দেশের ফুটবলে আগমন ঘটেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এমন বড় তারকার আগমন এটি প্রথম, এবং সেই সঙ্গে শামিত সোম, ফাহামিদুল ইসলামের উপস্থিতি বাড়িয়েছে দর্শকদের আগ্রহ। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে খেলার সুবর্ণ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাননি ফুটবলপ্রেমীরা।
ম্যাচের টিকিটের জন্য সারা দেশে তুমুল প্রতিযোগিতা হয়েছিল। বাফুফে ছেড়েছিল ১৮,৩০০ টিকিট এবং সেগুলো মুহূর্তেই 'সোল্ড আউট' হয়ে যায়। ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিজিটাল লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও অনেকেই টিকিট পায়নি।
যারা স্টেডিয়ামে জায়গা পাননি, তাদের জন্য রয়েছে বড় পর্দায় খেলা দেখার সুযোগ। টি স্পোর্টস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখানো হবে। সেগুলোর মধ্যে ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলা পরিষদ চত্বর, রাজশাহীর নানকিং বাজার, সিলেটের জিরো পয়েন্ট, খুলনার শিববাড়ি মোড় ও বরিশালের বেল’স পার্ক রয়েছে।
এছাড়া, রূপনগর-পল্লবী এলাকায় ১২টি স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন করেছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে ঘরোয়া মোড়, দোরেন মোড়, শহীদ আসিফ চত্বর, মুসলিম বাজার ঈদগাহ মাঠ, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ মোড়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
২০২৭ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়ান কাপের ১৯তম আসর। সেখানেই শিরোপার জন্য লড়বে ২৪টি দল, এবং বাংলাদেশও সেই ২৪ দলের একটি হতে চায়। তাই আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং পুরো দেশ আশা করছে জয় দিয়ে বাছাইপর্ব শুরু করবে হামজা-শমিত-ফাহামিদুলরা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেনার অভিযোগে ব্রাজিল ফুটবলপ্রধানের অফিস ও বাসায় তল্লাশি
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের শহর রোরাইমায় ভোটে অনিয়ম তদন্তে বুধবার ‘অপারেশন কাইজা প্রেতা’ (ব্ল্যাক বক্স) শুরু করেছে দেশটির পুলিশ। ইএসপিএন ব্রাজিল জানিয়েছে, এই তদন্তে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) সভাপতি সামির সাউদ অন্যতম সন্দেহভাজন।
২০২৪ সালে রোরাইমা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট ক্রয়ের অভিযোগের তদন্তে নেমেছে ব্রাজিলের পুলিশ। সেখানকার ফেডারেল ডেপুটি হেলেনা লিমা এই তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু, যা শুরু হয় গত বছর। তাঁর স্বামী ও ব্যবসায়ী রেইনালদো লিমা রোরাইমায় পৌরসভা নির্বাচনের আগে ৫ লাখ ব্রাজিলিয়ান রিয়ালসহ গ্রেপ্তার হন। সাউদ হেলেনা লিমার সহযোগী এবং তাঁরা একই রাজনৈতিক (এমডিবি) দলের সদস্য।
আরও পড়ুনরোনালদোর যে ‘খিদে কখনো কমে না’২ ঘণ্টা আগেসামির সাউদ, হেলেনা লিমা, রেইনালদো লিমা ও রোরাইমার যোগাযোগ অবকাঠামোর (ডিএনআইটি) সুপারিনটেনডেন্ট ইগো ব্রাসিল ছাড়াও আরও ৬ জন পুলিশের এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু। সিবিএফ সদর দপ্তর ছাড়াও সাউদের বাসায়ও অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
সিবিএফ নিশ্চিত করেছে, ‘সকাল ৬টা ২৪ মিনিট থেকে ৬টা ৫২ মিনিটের মধ্যে সদর দপ্তরে পুলিশ এসেছে এবং এই অভিযান রোরাইমা নির্বাচনী আদালতের নির্দেশে শুরু হওয়া তদন্তের অংশ।’ সিবিএফ এটাও নিশ্চিত করেছে, ‘এই অভিযানের সঙ্গে সিবিএফ ও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের কোনো সম্পর্ক নেই।’ পাশাপাশি ‘সভাপতি সামির সাউদ তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু নন’—এই কথাও জানানো হয়েছে সিবিএফের পক্ষ থেকে।
সিবিএফ সদরদপ্তরেও অভিযান চালায় ব্রাজিলের পুলিশ