পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টি এ সময় আলোচনা হয়েছে।এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

আরো পড়ুন:

বিএসইসিকে প্রযুক্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেবে এএসআইসি

সূচক ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো.

আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বেলা সাড়ে ১২টায় বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপদেষ্টা আহসান উল্লাহসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এদিকে, বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অনুষ্ঠিত বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টি এ সময় আলোচনা হয়েছে।

এ সময় কিভাবে ও কোন পদ্ধতিতে বা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে পুঁজি সরবরাহ করা যেতে পারে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।

একই সাথে উক্ত বিষয়গুলোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনের বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

এতে আরো বলা হয়, সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করে দেশের পুঁজিবাজারের সাথে সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব হবে। সর্বোপরি, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে উক্ত বৈঠকে ফলপ্রসু এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সভাপতিত্বে গত ১১ মে রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজারের সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং উন্নয়নে করণীয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা প্রদান করেন যার মধ্যে 'দেশের বৃহৎ কোম্পানিসমূহ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ' শীর্ষক নির্দেশনা অন্যতম। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম শুরু করেছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

গোল্ডেন হারভেস্টের নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ

পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্টের অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শন করে বেশ কিছু গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা ও জাল তথ্য উপস্থানের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল ও অসত্য তথ্য শনাক্ত না করে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে কোম্পানির নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও এর অংশীদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে (এফআরসি) অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে প্রাইম ফাইন্যান্স কোম্পানি

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে খান ব্রাদার্স

সম্প্রতি কমিশন থেকে এফআরসির চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কোম্পানির সম্পর্কিত এবং অ-সম্পর্কিত উভয় ধরনের পক্ষের সঙ্গে কিছু লেনদেন দেখিয়েছে, যেগুলো বাস্তবে ঘটেনি বা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদের চেয়ে বেশি বা বিভ্রান্তিকর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা দিতে পারে। একই সঙ্গে এসব মারাত্মক ধরনের ভুল ও জালিয়াতি শনাক্ত করা ও আপত্তি তোলার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক তা শনাক্ত পারেননি বা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানি ও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানি ও নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি তার নিয়ন্ত্রক কার্যাবলী বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণ, হিসাবের বই এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সশরীরে পরিদর্শন করেছে। এ পরিদর্শন কার্যক্রেমে কোম্পানির গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য শনাক্ত করেছে, যা কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীর নির্ভরযোগ্যতায় বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

যেসব তথ্য মিথ্যা বলে জানা গেছে সেগুলো হলো-কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত এবং সম্পর্কহীন উভয় পক্ষের সাথে মিথ্যা এবং জাল লেনদেনের তথ্য দিয়েছে। এছাড়া আর্থিক বিবরণীতে বিভ্রান্তিকর সম্পদ অবস্থান প্রদর্শন করা হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইনানুগ নিয়োজিত করা হলে আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ অসত্য তথ্য সনাক্ত করা ও আপত্তি জানাতে নিরীক্ষক ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধরনের অনিয়ম কেবল নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুন্ন করে না বরং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর রুলস ১৪(৫) অনুসারে, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের পরিদর্শন প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি এবং আর্থিক প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযুক্ত করে পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের গুরুত্ব বিবেচনা করে গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণের পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলোও পর্যালোচনা করুন। পর্যালোচনায় যদি সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা তাদের অংশীদারদের কাজে অবহেলা বা সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তবে প্রযোজ্য আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে নিরীক্ষকরা যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে বাজারে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।

বিএসইসি বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ কারণে বিষয়টি এফআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে বিএসইসি
  • গোল্ডেন হারভেস্টের নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ