মুরগির শেডে হাঁস পালনে সফল কামরুন নাহার
Published: 20th, June 2025 GMT
ফরিদপুরের কোমরপুর গ্রামের উদ্যোক্তা কামরুন নাহার মুরগির শেডে হাঁস পালন করে সাফল্যের নতুন গল্প রচনা করছেন। বিদেশি ‘পিকিং স্টার ১৩’ জাতের হাঁস পালন করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এই হাঁস পানি ছাড়াই খাঁচায় সহজে পালন করা যায়। মাত্র ৪৫ দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি হয় এ হাঁসের ওজন। প্রতি কেজি হাঁস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন কামরুন নাহার। বাজারে এ হাঁসের ব্যাপক চাহিদা তার ব্যবসাকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে।
কামরুন নাহারের এ যাত্রা শুরু হয় প্রতিকূলতা কাটিয়ে। তিনি আগে মুরগি পালন করতেন। কিন্তু, রোগ-ব্যাধির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। এ সময় সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাকে ‘পিকিং স্টার ১৩’ হাঁস পালনের পরামর্শ দেয়।
এসডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা.
কামরুন নাহার রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেছেন, “মুরগি পালনে ক্ষতির পর আমি ভেবেছিলাম, সব শেষ। এসডিসির সহায়তায় পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালন শুরু করি। এই হাঁস পালন সহজ, কম খরচে লাভ বেশি। এখন ফরিদপুরের হোটেল থেকে শুরু করে অন্য জেলাতেও আমার হাঁস সরবরাহ হচ্ছে। আমি শিগগিরই ৫০০ থেকে ১ হাজার হাঁস পালনের পরিকল্পনা করছি।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “কামরুন নাহারের পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা তাকে পরামর্শ, ওষুধ সরবরাহ এবং বাজারজাত করতে সহায়তা দিচ্ছি। তার হাঁস স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে সরবরাহের জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছি। এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের স্বনির্ভরতার পথকে শক্তিশালী করছে।”
কামরুন নাহারের প্রতিবেশীরা তার খামারের প্রতি আকৃষ্ট। তারা বলেন, “কেন দূরে গিয়ে বাড়তি খরচ করব? আমাদের গ্রামেই কামরুন নাহারের আধুনিক খামার থেকে তাজা ও স্বাস্থ্যকর হাঁস সহজে কিনে নিতে পারি।” এই সুবিধা তাকে স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
এছাড়া, হাঁস পালনের পাশাপাশি খামারের বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে অতিরিক্ত আয় করছেন কামরুন নাহার, যা তার উদ্যোগের বহুমুখী সাফল্যের প্রমাণ।
ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত আরো বলেছেন, “ফরিদপুরের পাঁচটি উপজেলায় আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। কামরুন নাহারের সাফল্য অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।”
কামরুন নাহারের সাফল্য এলাকার অনেককে পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালনে উৎসাহিত করেছে। তার এই অদম্য উদ্যোগ শুধু নিজের জীবনই বদলায়নি, বরং অন্যদের জন্যও স্বনির্ভরতার নতুন পথ দেখিয়েছে, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট র ১৩ বল ছ ন স ফল য র জন য করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গরুর দুধ সঙ্কট, চাঁদপুরে ব্যাহত মিষ্টান্ন উৎপাদন
গরুর দুধ সঙ্কটে চাঁদপুরে মিষ্টিজাত বিভিন্ন দুদ্ধজাত খাবার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দুধ সঙ্কটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় খাবার পণ্যের দামও বাড়ছে। তবে দুধ সঙ্কটের বিষয়ে দ্বীমত প্রকাশ করেছেন জেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের সুপ্রাচীন মিষ্টির দোকান ‘কৃষ্ট ক্যাফে’র পরিচালক সুমন রায় বলেন, “আমাদের দোকানে দিনে কমপক্ষে চার মণ গরুর দুধ লাগে। যা দিয়ে সাত জন কর্মচারীসহ আমরা দধি, মিষ্টি, রসমলাই, মালাইকারী, চমচম তৈরি করি। খাবার গুণগত মান ভালো রাখলেও এখন দুধ সঙ্কটে অনেক অর্ডার পেলেও সরবরাহ দিতে পারছি না। তাই কেজি প্রতি মালাইকারী ৫৫০ টাকা, চমচম ৩২০ টাকা, রসগোল্লা ২৮০, রসমালাই ৪০০, ঘি ১৮০০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দুধের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।”
জেলা শহরের অপর সুপরিচিত মিষ্টির দোকান ‘ওয়ান মিনিট’-এর মালিক সম্পদ সাহা বলেন, “আমাদের দোকানে দিনে গরুর দুধের প্রয়োজন অন্তত ২৫ মণ। চর থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা মণ হিসেবে দুধ সংগ্রহ করি। কিন্তু মৌসুমি সমস্যায় এখন দুধ আসে কম। আবার শহরাঞ্চলের গরুর দুধ কিনে পোষানো যায় না। তাই গরুর দুধ সঙ্কটে ক্ষীর ও রসমালাই উৎপাদন এখন বন্ধ রেখেছি। তবে মিষ্টি ও দই সীমিত পরিসরে উৎপাদন করছি। সব মিলিয়ে চাহিদানুযায়ী উৎপাদন সীমিত হলেও পণ্যের দাম সামঞ্জস্যতা রাখতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, তিনটি গাভী হিসেবে একটি খামার ধরা হলে জেলায় মোট দুদ্ধ খামার ৩৭২৩টি। যেখানে ১ লাখ ৫ হাজার গাভী রয়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম দিচ্ছেন প্রায় ৪২ হাজার দুদ্ধ খামারি। এর ভিত্তিতে জেলায় গরুর দুধের চাহিদা ২.৩ মেট্রিক টন অর্থাৎ ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক হলেও উৎপাদন হচ্ছে ১.৮ মেট্রিক টন। এতে দুধের সঙ্কটের তথ্যের প্রমাণ মিলছে।
চাঁদপুর শহরের গবাদীপশু খামারি মহসীন গাজী বলেন, “মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে দুধ না নিয়ে চর এলাকার খামারিদের থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। কারণ আমাদের গরু লালন পালনে ঘাস সঙ্কটে বেশি দাম দিয়ে হলেও খড়, ভূষি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। কাজেই গোখাদ্যের খরচ পোষাতে আমাদেরকে গরুর দুধের দাম কিছুটা বেশি রাখতে হয়। কিন্তু চরে প্রচুর চারণভূমি থাকায় এবং ঘাস সঙ্কট না থাকায় গরু লালন পালন সহজ ও খরচও অনেকটা কম। তাই চরাঞ্চলের মানুষ গরুর দুধের দাম আমাদের থেকে কিছুটা কম রাখায় মিষ্টির দোকানিরা ওখান থেকেই দুধ সংগ্রহ করেন। এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ায় দুধ উৎপাদন কিছুটা কম তবে সামনে দুধের সঙ্কট কেটে যাবে আশা করছি।”
ভোজন রসিক মিজানুর রহমান বলেন, “মিষ্টির দাম আকাশচুম্বী। অথচ মিষ্টির মানের দিকে অনেকেরই নজরদারি কম। অধিকাংশ মিষ্টির দোকানের তৈরিকৃত মিষ্টির ভিতরে আটা, ময়দার শক্ত গোল্লা পাওয়া যায়। আবার তারা গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে পাউডার দুধও ব্যবহার করছে। অথচ দাম নিচ্ছে গরুর দুধের বানানো মিষ্টির দামই। এগুলো মনিটরিং জরুরি।”
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য দিনে যতটুকু দুধের প্রয়োজন তা এ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুধের সঙ্কট নেই। হয়তো মানুষের গড় হিসেবে দুধ কিছুটা সঙ্কট দেখা দিলেও মিষ্টি উৎপাদনে দুধ সঙ্কট এই তথ্য ঠিক নয়। কেননা প্রতিটি মিষ্টির দোকানিই নির্দিষ্ট খামারিদের সাথে সংযুক্ত থাকেন। আর তারাই সারাবছর দোকানের চাহিদানুযায়ী গরুর দুধ সরবরাহ করে থাকেন। বরং মিষ্টিজাত পণ্যের দাম বাড়াতে তারাই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। অথচ মিষ্টির মানের কোন বালাই নেই।”
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “আমরা নিয়মিত মিষ্টির দোকানসহ বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কোথাও কোন অসঙ্গতি নজরে এলেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঢাকা/এস