বছরটা ছিল ২০১৭, শহরের অলিগলি আর মহাসড়কের প্রান্তে কিছু স্বপ্নবান ইয়ামাহাপ্রেমী তরুণের দেখা হয়েছিল। তাঁদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট, তবে শুধু বাইক চালানোর জন্য নয়, বরং একসঙ্গে পথচলার জন্য; গল্প তৈরি করার জন্য। সেই ছোট্ট শুরুটাই পরবর্তী সময়ে জন্ম দেয় ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব—ওয়াইআরসি। সময়ের সঙ্গে এ যেন আরেকটা পরিবারের নাম হয়ে ওঠে, যেখানে বাইকের শব্দের চেয়েও জোরালো হয়ে বাজে ভালোবাসা, বন্ধন আর সহমর্মিতার সুর।

ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব কখনোই শুধু একটি ‘বাইক রাইডিং ক্লাব’ হয়ে থাকেনি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিন্ন পেশার, ভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন, একটিমাত্র মিল—তাঁরা সবাই ইয়ামাহার প্রতি ভালোবাসায় বাঁধা। ক্লাবটির মূলমন্ত্র—কানেকশন (সংযোগ), প্যাশন (আবেগ) ও প্রাইড (গর্ব)। তাঁরা বিশ্বাস করে, এই তিনের সমন্বয়ে তাঁরা সমাজকে বদলে দেবে। কেউ একজন অসহায়ের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেউ হয়তো অন্যের বিপদের দিনে নিজের ছুটির দিনটা উৎসর্গ করেছে। সহমর্মিতার এই গল্পগুলো নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

বর্তমানে ক্লাবের ১৬ হাজারের বেশি সক্রিয় সদস্য আছেন, যাঁরা শুধু বাইক চালান না, ভাগাভাগি করেন জীবনের গল্পও। তাঁদের ফেসবুক গ্রুপে প্রায় ১ লাখ মানুষের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আর অফিশিয়াল পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। সংখ্যার চেয়ে এখানে বড় যে অনুভূতিটা—এটা একধরনের আত্মার বন্ধন।

এই ক্লাবের সদস্যদের কাছে বাইক চালানো কোনো শখ নয়, এটা একধরনের জীবনদর্শন। রাস্তায় বাইক চালানোর সময় তাঁরা যেমন শৃঙ্খলিত, তেমনি বাইকের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা যেন মিশে আছে প্রতিটি যাত্রায়। প্রতিটি গন্তব্যে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে জমা হয় একেকটা নতুন অভিজ্ঞতা, একেকটা নতুন গল্প।

তবে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের গল্প থেমে থাকে না শুধু রাইডে; বরং ক্লাবের আসল শক্তি ফুটে ওঠে তাঁদের মানবিক উদ্যোগে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ভয়াবহ বন্যার সময়, দেশের দুর্গম এলাকা পেরিয়ে তাঁরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষের হাতে। পবিত্র ঈদ কিংবা শীতের দিনে তাঁরা ছুটে গেছেন এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম কিংবা পথশিশুদের কাছে—হাতে তুলে দিয়েছেন খাবার, পোশাক আর একটু ভালোবাসা। ছয় হাজারের বেশি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই গল্প ক্লাবের সবার জন্য আজীবনের গর্ব।

চট্টগ্রাম ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য তানভীর হাসান বিপ্লব বলেন, ‘ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব শুধু একটি বাইকিং সংগঠন নয়। বাইকিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি আমরা। এই সংগঠন করোনাকালীন অসহায় মানুষদের খাদ্য বিতরণ, অক্সিজেন ও মেডিসিন বিতরণ, মশা নিধন, ইফতার বিতরণ, অসুস্থ মানুষের পাশে থাকা, অসহায় ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে শুরু করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়া অসহায় মানুষের পাশে থেকেছে সব সময়। এই ক্লাবের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত।’

শুধু নগরী নয়, ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব পৌঁছে গেছে দেশের বিভিন্ন গ্রামেও.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

গতকাল রোববার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই দাবি করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম।

এর আগে গতকাল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিচয়ের সংকট) থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সাদিক কায়েম এমন কয়েকজনকে বাঁচাতে তদবির করেন বলে অভিযোগ তোলেন আবদুল কাদের।

আরও পড়ুনছাত্রলীগ পরিচয়ে নির্যাতনের অংশীদার হতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়১৪ ঘণ্টা আগে

আবদুল কাদেরের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

১. বিপ্লবের পর দুইটি কনসার্ন ছিল। প্রথমটি ছিল অপরাধের বিচার। দ্বিতীয়টি ছিল বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া।

সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানান যে ‘তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশবশত মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।’

স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ, তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্যগুলো ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ভেরিফাই করাটা জরুরি ছিল। তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে আমি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের এক সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি অধিকতর তদন্তের জন্য।

তাদের বলেছি, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না, এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।

২. এনসিপি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই সে সময় এ রকম বিভিন্ন সুপারিশ পেয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন ভেরিফাই করার জন্য।

আবদুল কাদের নিজেই উল্লেখ করেছেন, মামলার তালিকাগুলো আমরা পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করেছি। এখন, নিজেদের মধ্যে কথা না বললে কীভাবে জানব—আসলে কেউ অপরাধী, নাকি তাকে হয়রানি করা হচ্ছে?

৩. স্ক্রিনশটে যাদের নাম যুক্ত আছে, তারা কেউই শিবিরের কেউ না। ৫ আগস্টের পর থেকেও তারা শিবিরের কোনো পদে বা কর্মসূচিতে ছিলেন না।

ফলে, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

৪. সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে আমি নাকি বিভিন্ন জায়গায় কল করেছি—এটাও একটি মিথ্যা।

সাঈদী অপরাধী, এবং তাকে বাঁচানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।

৫. মুহসিন হলের একজনের সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত শাহাদাতকে আমি চিনিই না।

তা ছাড়া, কাদের লিখেছে, ‘চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ওই পোস্টদাতার সাথে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।’

আচ্ছা, আমি যদি ফোন দিতেই চাইতাম, তাহলে তো সেটা মামলা হওয়ার আগেই দেওয়ার কথা ছিল। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেই পোস্টদাতাকে ফোন দেওয়ার কী দরকার!

এলাকায় থাকতে কোনো সময় শিবির করেছে, তামিরুল মিল্লাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবিরের কোনো আয়োজনে অংশ নিয়েছে, শিবিরের নেতা হিসেবে বা শিবির কানেকশন ব্যবহার করে জুলাইয়ের বড় নেতাও হয়েছে—কিন্তু এখন উগ্র শিবিরবিদ্বেষী—এমন মানুষের সংখ্যাও কম না।

যদি জীবনের কোনো এক ধাপে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিবিরের সাথে যোগাযোগ রাখে, পরবর্তীতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরবিরোধী ভূমিকা নেয় অথবা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়—এবং, এমন নরপশুদের কর্তৃক ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা নিয়মিত ভিক্টিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার যদি শিবিরকে নিতে হয়, তাহলে শিবির ছেড়ে বাগছাস-এনসিপিতে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের কৃতিত্ব, দুর্নীতিসহ অন্যান্য নেতিবাচক ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায়ভারও তো শিবিরকে নিতে হবে!

সেটা কি যৌক্তিক হবে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • আছে তো হাতখানি...