ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব: শুধু বাইক রাইডিং নয়, জীবনকে ছুঁয়ে যাওয়ার যাত্রা
Published: 21st, June 2025 GMT
বছরটা ছিল ২০১৭, শহরের অলিগলি আর মহাসড়কের প্রান্তে কিছু স্বপ্নবান ইয়ামাহাপ্রেমী তরুণের দেখা হয়েছিল। তাঁদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট, তবে শুধু বাইক চালানোর জন্য নয়, বরং একসঙ্গে পথচলার জন্য; গল্প তৈরি করার জন্য। সেই ছোট্ট শুরুটাই পরবর্তী সময়ে জন্ম দেয় ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব—ওয়াইআরসি। সময়ের সঙ্গে এ যেন আরেকটা পরিবারের নাম হয়ে ওঠে, যেখানে বাইকের শব্দের চেয়েও জোরালো হয়ে বাজে ভালোবাসা, বন্ধন আর সহমর্মিতার সুর।
ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব কখনোই শুধু একটি ‘বাইক রাইডিং ক্লাব’ হয়ে থাকেনি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিন্ন পেশার, ভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন, একটিমাত্র মিল—তাঁরা সবাই ইয়ামাহার প্রতি ভালোবাসায় বাঁধা। ক্লাবটির মূলমন্ত্র—কানেকশন (সংযোগ), প্যাশন (আবেগ) ও প্রাইড (গর্ব)। তাঁরা বিশ্বাস করে, এই তিনের সমন্বয়ে তাঁরা সমাজকে বদলে দেবে। কেউ একজন অসহায়ের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেউ হয়তো অন্যের বিপদের দিনে নিজের ছুটির দিনটা উৎসর্গ করেছে। সহমর্মিতার এই গল্পগুলো নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
বর্তমানে ক্লাবের ১৬ হাজারের বেশি সক্রিয় সদস্য আছেন, যাঁরা শুধু বাইক চালান না, ভাগাভাগি করেন জীবনের গল্পও। তাঁদের ফেসবুক গ্রুপে প্রায় ১ লাখ মানুষের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আর অফিশিয়াল পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। সংখ্যার চেয়ে এখানে বড় যে অনুভূতিটা—এটা একধরনের আত্মার বন্ধন।
এই ক্লাবের সদস্যদের কাছে বাইক চালানো কোনো শখ নয়, এটা একধরনের জীবনদর্শন। রাস্তায় বাইক চালানোর সময় তাঁরা যেমন শৃঙ্খলিত, তেমনি বাইকের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা যেন মিশে আছে প্রতিটি যাত্রায়। প্রতিটি গন্তব্যে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে জমা হয় একেকটা নতুন অভিজ্ঞতা, একেকটা নতুন গল্প।
তবে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের গল্প থেমে থাকে না শুধু রাইডে; বরং ক্লাবের আসল শক্তি ফুটে ওঠে তাঁদের মানবিক উদ্যোগে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ভয়াবহ বন্যার সময়, দেশের দুর্গম এলাকা পেরিয়ে তাঁরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষের হাতে। পবিত্র ঈদ কিংবা শীতের দিনে তাঁরা ছুটে গেছেন এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম কিংবা পথশিশুদের কাছে—হাতে তুলে দিয়েছেন খাবার, পোশাক আর একটু ভালোবাসা। ছয় হাজারের বেশি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই গল্প ক্লাবের সবার জন্য আজীবনের গর্ব।
চট্টগ্রাম ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য তানভীর হাসান বিপ্লব বলেন, ‘ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব শুধু একটি বাইকিং সংগঠন নয়। বাইকিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি আমরা। এই সংগঠন করোনাকালীন অসহায় মানুষদের খাদ্য বিতরণ, অক্সিজেন ও মেডিসিন বিতরণ, মশা নিধন, ইফতার বিতরণ, অসুস্থ মানুষের পাশে থাকা, অসহায় ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে শুরু করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়া অসহায় মানুষের পাশে থেকেছে সব সময়। এই ক্লাবের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত।’
শুধু নগরী নয়, ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব পৌঁছে গেছে দেশের বিভিন্ন গ্রামেও.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঘরের চালে ঢিল ছোড়া নিয়ে বিরোধ, মীমাংসার পর মারামারিতে প্রাণ গেল একজনের
বসতঘরের চালে ঢিল ছোড়া নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু। আজ শুক্রবার সকালে দুই পক্ষের এ বিরোধ মীমাংসায় বসেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ সদস্যরা। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরের দিকে মারামারিতে জড়ায় উভয় পক্ষ। এতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিনজন।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে আজ দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম সেজাউল ইসলাম ওরফে কালা মিয়া (৩৫)। তিনি গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আবদুল মতিনের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। উভয় পরিবারের ঘর পাশাপাশি। সপ্তাহখানেক আগে থেকে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে, রাতের বেলা এক পক্ষ আরেক পক্ষের ঘরে চালে ঢিল ছুড়ছে। স্থানীয় লোকজন এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে। বিষয়টি থানার পুলিশকেও জানানো হয়। পরে আজ সকালে এ বিরোধ মীমাংসায় বসেন গ্রামটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মালিক। তিনি জানান, তুচ্ছ একটি বিষয় নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। আজ সকালে তাদের নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। তখন থানা থেকে তিনজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তাঁরা উপজেলা সদরে চলে আসেন। পরে জেনেছেন, উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে একজন মারাও গেছেন।
নিহত সেজাউল ইসলাম কামরুল ইসলামের ভাই বলে জানিয়েছেন জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে।