বন্দর লিজ ও রাখাইনে করিডরের উদ্যোগ বাতিলের দাবিতে ২৭-২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ
Published: 21st, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ২৭ ও ২৮ জুন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, রোডমার্চ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ওই দুই দিন দেশের সকল জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
২৭ জুন সকাল সকাল নয়টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হবে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ। এ সমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা ও মিছিল শেষে কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ করে ফেনীতে রাত্রি যাপন করা হবে। দ্বিতীয় দিন ২৮ জুন সকালে ফেনী থেকে যাত্রা করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এখতিয়ার–বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় নানা সংকট তৈরি করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ এবং অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। ভৌগোলিক কারণে এ বন্দরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল নিউমুরিং টার্মিনাল। বিদেশিদের কাছে এ টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে দেশীয় কর্মসংস্থান কমবে, শ্রমিকেরা বেকার হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার রাখাইনে কথিত মানবিক করিডর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। সাম্রাজ্যবাদী ছায়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে।
বক্তারা আরও বলেন, এ সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংককে এ দেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে এবং ইতিমধ্যে তা চালু হয়েছে। এই মার্কিন কোম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই প্রদান করে না, সেই সঙ্গে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, ফিলিস্তিন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা-ইসরায়েলের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তিগত অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে এই ইন্টারনেট কোম্পানি।
এ ছাড়া সামরিক শিল্পের মতো স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণে এ সরকারের আহ্বানের পদক্ষেপও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন (নসু)। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য বেলাল চৌধুরী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ জেলার তারুণ্যের বিজয় যাত্রা অনুষ্ঠিত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ জেলার তারুণ্যের বিজয় যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) শহরের প্রাণকেন্দ্রে খানপুর হাসপাতাল মোড় থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে আবারও খানপুর হাসপাতাল মোড়ে এসে পদযাত্রাটি শেষ হয়।
ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী রাকিবুল ইসলাম ইফতি'র সভাপতিত্বে উক্ত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক - সুজন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থা'র সভাপতি সনু রানী দাস, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ জেলার উপদেষ্টা মোহাম্মদ জারিফ অনন্ত, বুবলী যুব কল্যান সংস্থার সভাপতি বুবলী আক্তার, সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া আফরিন তমা এবং ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিটের ইউনিট কো-অর্ডিনেটর এবং সদস্যগণ।
পদযাত্রা শেষে একটি সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পথসভায় বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান মালিকানা এদেশের ছাত্র ও জনতা সবার। অভ্যুত্থানকালীন অনেক মানুষ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে গেছে, কিন্তু কোন প্রকার ক্রেডিটবাজি করার চেষ্টা করেনি।
কিন্তু এই আমরা দেখতে পাচ্ছি এক শ্রেণির মানুষ আজ জুলাই অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্ব দাবি করে বসে আছে। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের কোন একক স্টেকহোল্ডার নেই, এই অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডার আপামর জনসাধারণ।
জনগণের অবদানকে অস্বীকার করার এই অপচেষ্টার জন্যই আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইনি, নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারিনি।
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সুবুদ্ধির উদয় হবে, তারা অভ্যুত্থানে জনগণের মালিকানাকে যোগ্য মূল্যায়ন করবে এবং জনগণও তাদের অভ্যুত্থানের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিবে এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে অবদান রাখবে।