চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ২৭ ও ২৮ জুন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, রোডমার্চ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ওই দুই দিন দেশের সকল জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।

২৭ জুন সকাল সকাল নয়টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হবে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ। এ সমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা ও মিছিল শেষে কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ করে ফেনীতে রাত্রি যাপন করা হবে। দ্বিতীয় দিন ২৮ জুন সকালে ফেনী থেকে যাত্রা করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এখতিয়ার–বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় নানা সংকট তৈরি করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ এবং অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। ভৌগোলিক কারণে এ বন্দরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল নিউমুরিং টার্মিনাল। বিদেশিদের কাছে এ টার্মিনাল ইজারা দেওয়া হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে দেশীয় কর্মসংস্থান কমবে, শ্রমিকেরা বেকার হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার রাখাইনে কথিত মানবিক করিডর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। সাম্রাজ্যবাদী ছায়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাবে।

বক্তারা আরও বলেন, এ সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টারলিংককে এ দেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে এবং ইতিমধ্যে তা চালু হয়েছে। এই মার্কিন কোম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই প্রদান করে না, সেই সঙ্গে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, ফিলিস্তিন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা-ইসরায়েলের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তিগত অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে এই ইন্টারনেট কোম্পানি।

এ ছাড়া সামরিক শিল্পের মতো স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণে এ সরকারের আহ্বানের পদক্ষেপও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন (নসু)। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য বেলাল চৌধুরী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র খ ইন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা হলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে’

‘‘প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে, কিন্তু পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেওয়া যাবে না।’’ 

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে পথসভায় এমন কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতারা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলের আগে শহরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়।

আরো পড়ুন:

গকসু নির্বাচন: যত্রতত্র প্রচারে বিরক্ত শিক্ষার্থীরা

চাকসু নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে চবি প্রশাসনের মতবিনিময়

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজশাহী  মহানগর ও জেলার উদ্যোগে আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন, দলটির রাজশাহী জেলার সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী, মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক তারিক উদ্দিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘‘গত ৫৪ বছরে যারা শাসক হিসেবে ছিলেন, তারা কখনোই শাসন করেননি, শোষণ করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ মুক্তির যে আশা করেছিল, এখন পর্যন্ত তা দেখতে পায়নি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশবাসী মুক্তির যে পথ দেখে ছিল, বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে একটি বিশেষ দলের চাপে সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া তাড়াতাড়ি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তা হতে দেওয়া হবে না।’’ 

তারা বলেন, ‘‘বর্তমানে একটি দল আবারো ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসনের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি ছাড়া তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাচ্ছে। দেশের সম্পদ লুটপাট করার জন্য তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। তারা পিআর বোঝেন না কিন্তু চাঁদাবাজি বোঝেন। আগে গণঅভ্যুত্থানের বিচার হবে, তারপর সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে, কিন্তু পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হবে না।’’ 

এর আগে জুমার নামাজের পর জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে সাহেববাজার বড়মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শহরের সাহেববাজার ও মনিচত্বর প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

এতে ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান মোজাহিদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি ফয়সাল হোসেন মনি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সভাপতি আবুল বাশার, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জেলার সভাপতি হাফেজ আবুল হাসান, ইসলামী যুব আন্দোলনের মহানগরের সভাপতি হাসিবুর রহমানসহ দলটির প্রায় ২০০ জন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা হলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে’