টুকরো টুকরো প্লাস্টিক গড়ছে শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি
Published: 21st, June 2025 GMT
ভোরের আলোয় শুকিয়ে উঠছে কিছু ভেজা পলিথিন– রোদ, হাওয়া আর খাদিজা বেগমের নিরলস শ্রমে। এগুলো কুড়িয়ে আনা হয়েছে শহরের গলি থেকে, ডাস্টবিনের কোণ থেকে, কারও অবহেলার ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে; যেটি কারও কাছে ছিল ফেলনা, সেটিই কারও কাছে স্বর্ণের মতো মূল্যবান। সেই প্লাস্টিক বিক্রি করে কেনা হয় শিশুর স্কুলের টিফিন, বা চালিয়ে নেওয়া হয় বাসার এক বেলার খাবার।
চট্টগ্রামের প্রতিদিনের ব্যস্ত নগরজীবনে এমন হাজারো গল্প বয়ে চলে টুকরো টুকরো প্লাস্টিকের মধ্য দিয়ে; যেখানে ‘বর্জ্য’ শব্দটা শুধু দূষণ নয়; বরং হয়ে ওঠে কোনো কোনো পরিবারের টিকে থাকার কৌশল, শ্রমের গল্প এবং বিকশিত হওয়ার সংগ্রাম।
শহরজুড়ে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, যার একটি বড় অংশই সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক; একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়া হয়। ফেলে দিলেই তো সবকিছু শেষ হয় না। বরং ঠিক তখনই শুরু হয় অন্য কারও জীবনের সংগ্রাম, আর কারও সম্ভাবনার নতুন এক যাত্রা।
বন্দর নগরীর একটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রে দেখা যায় ৬০ বছর বয়সী এক নারী–রহিমা বেগম; সম্মাননাপ্রাপ্ত একজন ওয়েস্ট পিকার। প্রতিদিন ভোরে বের হন ময়লার স্তূপে প্লাস্টিক খুঁজতে। তিনি মাসে গড়ে প্রায় পাঁচ মণ প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন, যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ১০ হাজার টাকা। এই আয়ে চলে তাঁর পরিবারের খরচ। রহিমার মতো আরও অসংখ্য নারী ও পুরুষ প্রতিদিনই নামেন এই অদৃশ্য অথচ অমূল্য সংগ্রামে।
এই সংগ্রহ করা প্লাস্টিক পড়ে থাকে না অকেজো বস্তু হয়ে। বরং প্রক্রিয়াজাত হয়ে তা তৈরি হয় নতুন পণ্য–টাইলস তৈরির উপকরণ, নির্মাণসামগ্রী, ইনস্যুলেশন, এমনকি ঘর সাজানোর সামগ্রী। পুরোনো বোতল বা মোড়কের টুকরো থেকে তৈরি হচ্ছে চেয়ার, প্যাকেজিং বাক্স কিংবা শিল্প গ্রানুলস–যেগুলো দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে।
এটিই হলো ‘সার্কুলার ইকোনমি’– একটি অর্থনৈতিক মডেল; যেখানে ব্যবহারযোগ্য জিনিস একবার ব্যবহার করে ফেলে না দেওয়া হয়, বরং পুনর্ব্যবহার, মেরামত ও রূপান্তরের মাধ্যমে আবারও ব্যবহারচক্রে ফিরিয়ে আনা হয়। এই ব্যবস্থায় ‘বর্জ্য’ই হয়ে ওঠে সম্পদ। চট্টগ্রাম নগরী এখন এই ধারার এক উজ্জ্বল বাস্তব উদাহরণ; যেখানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক রূপ নিচ্ছে নতুন পণ্যে, তৈরি করছে কর্মসংস্থান এবং কমাচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ১,০০০টিরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী ভাঙারির দোকান বা ইউনিট সক্রিয় রয়েছে, যেখানে কাজ করছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এই দোকানগুলোই হয়ে উঠেছে পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থার মূল সেতুবন্ধ, প্রতিদিন প্লাস্টিক সংগ্রহ, বিক্রয় ও সরবরাহ হচ্ছে রিসাইক্লিং কারখানায়। একটি বোতল, এক টুকরো মোড়ক কিংবা একটি ব্যাগ– সবকিছুরই এখন আলাদা বাজারমূল্য রয়েছে।
২০২৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে রপ্তানি হওয়া রিসাইক্লিং পণ্যের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। ভারত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে এইসব সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে চলেছে। ফলে, এক সময়কার ‘ফেলনা প্লাস্টিক’ আজ দেশের অর্থনীতির এক সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হয়েছে।
এই পুরো পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একটি সমন্বিত উদ্যোগ। ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ একত্রে কাজ করছে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। তিন বছরে তারা ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি, তিন হাজারের বেশি ওয়েস্ট পিকারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছে দক্ষ জনবল, যারা এখন আরও নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম আজ বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত; যেখানে প্লাস্টিক মানেই দূষণ নয়, বরং সঠিক ব্যবস্থাপনায় তা হয়ে উঠতে পারে জীবিকার উৎস, রপ্তানিযোগ্য পণ্য এবং একটি সবুজ, টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি। এই শহর প্রমাণ করে দিয়েছে, যতই ফেলনা মনে হোক; টুকরো টুকরো প্লাস্টিকেও লুকিয়ে থাকতে পারে একটি পরিবারের আশ্রয়, একটি শহরের ভবিষ্যৎ, আর একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য পৃথিবীর স্বপ্ন।
শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ
ফরেস্ট্রি বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল স ট ক বর জ য র ব যবহ র ব যবস থ স গ রহ
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (২২ জুন ২০২৫)
হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন আজ। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে রাতে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ, প্রতিপক্ষ পাচুকা।
হেডিংলি টেস্ট: ৩য় দিনইংল্যান্ড-ভারত
বিকেল ৪টা, সনি স্পোর্টস ১ ও ৫
রিভার প্লেট-মন্তেরই
সকাল ৭টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
জুভেন্টাস-উইদাদ
রাত ১০টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
রিয়াল মাদ্রিদ-পাচুকা
রাত ১টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
সালজবুর্গ-আল হিলাল
পরের দিন ভোর ৪টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ