সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজমুল হোসেন শান্তকে তুলাধুনা করা হচ্ছিল গল টেস্ট ড্র মেনে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই। সমর্থকদের কাছে মনে হয়েছে, পঞ্চম দিন সকালে শান্ত মন্থর ব্যাটিং করায় আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ম্যাচ জয়ের চিন্তা না করে রক্ষণাত্মক কৌশল নেন নিরাপদ ড্রয়ের লক্ষ্যে। এটিও বলা হয়েছে, অধিনায়কের উদ্দেশ্য ছিল সেঞ্চুরি করা। প্রত্যাশা পূরণ না হলে সমর্থকরা কখনও কখনও হয়ে ওঠেন সমালোচক। গল টেস্ট ড্র করা নিয়ে তাদের সেই আক্ষেপ। অনেক যদি, কিন্তু মেলানো গেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট ম্যাচটি হয়তো শেষ দুই সেশনে জয়ের জন্য খেলা সম্ভব হতো। শান্তরা সেই যদি, কিন্তু মেলাতে পারেননি মূলত পঞ্চম দিন সকালে এক ঘণ্টা ব্যাটিং করার পর বৃষ্টির কারণে তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায়। সকালের বৃষ্টিই বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন থেকে ছিটকে দেয়। জয়ের সমীকরণ না মেলার আক্ষেপ থাকলেও ড্র টেস্টও প্রাপ্তিতে ভরপুর। শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, নাঈম হাসানের পাঁচ উইকেট অর্জনে গল থেকে আত্মবিশ্বাসের বাতাসে ফুসফুস ভরে নেওয়া গেছে কলম্বোর সিরিজ নির্ধারণী টেস্টের জন্য। ২৫ জুন সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
স্কিল, ফিটনেসের সঙ্গে সাহস দেখাতে পারাও ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে সাহসী লোকের ভীষণ অভাব এ মুহূর্তে। টি২০ বিশ্বকাপ থেকেই এই দুর্বলতা বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে। সেমিফাইনালের সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো তুখোড় বুদ্ধিমান কোচও। গল টেস্টে ফিল সিমন্স, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ড্রেসিংরুমে থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে ইনিংস ঘোষণা করার বার্তা দেওয়ার সাহস করেননি; বরং টেস্ট ম্যাচটি ড্র করার পরিকল্পনায় শান্তকে মন্থর ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করার সুযোগ করে দেন তারা। অথচ অধিনায়ক সেঞ্চুরি না করে লিড দেড়শ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে জয়ের লক্ষ্যে বোলিং করতে পারতেন। আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং-ফিল্ডিং করে গেলে ম্যাচের শেষটা উত্তাপ ছড়ানো রোমাঞ্চকর হতে পারত। এই জায়গাতেই মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
১০ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষ করে ৫৭ ওভার খেলে ৩ উইকেটে ১৭৭ রানে। ১৮৭ রানের লিড নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন ব্যাট করতে নামেন অপরাজিত জুটি মুশফিক-শান্ত। প্রথম থেকে মন্থর ব্যাটিং করতে থাকেন দু’জন। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১৯ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন তারা। বৃষ্টির কারণে বেলা ১১টা ৬ মিনিটে খেলা হওয়া ম্যাচ তিন ঘণ্টা পর আবার শুরু হয় দুপুর ২টা ৮ মিনিটে। শান্তরা ১১ ওভার না খেলে চাইলে দুই ওভার পরই ইনিংস ঘোষণা করতে পারতেন। তখনও ২৫৫ রানের লক্ষ্য দেওয়া যেত শ্রীলঙ্কাকে। এ ক্ষেত্রে শান্তর সেঞ্চুরি মিস হলেও বোলাররা জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারতেন। সেটি না করে বৃষ্টির পর ১১ ওভার খেলে ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে পৌঁছে ইনিংস ঘোষণা করেন তিনি। শান্তর সেঞ্চুরি করতে লেগেছে ১৯০টি বল। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২৫ রানে।
টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডবুকে নতুন করে নাম তোলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দেশের পর বিদেশেও এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরিয়ান তিনি। শান্ত প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি করেন ২০২৩ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। বিদেশের মাটিতে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি তিনি। টেস্ট ম্যাচে দুবার জোড়া সেঞ্চুরি করা দেশের একমাত্র ব্যাটার হলেন শান্ত। তবে দেশের প্রথম জোড়া সেঞ্চুরিয়ান হলেন মুমিনুল হক। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে শতক পেয়েছিলেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। গল টেস্টের সেরা খেলোয়াড় শান্ত জোড়া সেঞ্চুরিতে ২৪৮ রান করেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য এটি রেকর্ড। ২০১৩ সালে এই গলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুশফিকের ২০০ রানই ছিল অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এদিক থেকে গল টেস্টকে শান্তর টেস্টও বলা যেতে পারে। অধিনায়কের প্রাপ্তির টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন ৪ পয়েন্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের মতো চতুর্থ আসরও পয়েন্ট অর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু করা গেছে। এই প্রাপ্তি দেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল ট স ট র জন য শ ন তর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে এ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আপ বাংলাদেশের মুখ্য সংগঠক রাফে সালমান রিফাত।
ছাত্রশক্তি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, শিবির তাদের কীভাবে অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা করেছিল, ২০১৮ সালের দুটি আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকা, জুলাই অভ্যুত্থানের শিবিরের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ওই পোস্টে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঐতিহাসিক জুলাইয়ের কারণে আমরা একটি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী: ঢাবি উপাচার্য
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
তবে রিফাতের পোস্টের কিছুক্ষণ পরই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন আব্দুল কাদের। তাদের ফেসবুক পোস্টটি দুটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি, সাদিক কায়েম সেক্রেটারি। ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের কয়েকদিন আগে আখতার আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করি, কী বিষয়? বলে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারোর রাজনীতি নাই, নতুন একটা সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।”
তিনি বলেন, “তার মাস দুয়েক আগেই ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়। আসিফের নেতৃত্বে কমিটির সবাই একযোগে পদত্যাগ করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ এনে। তারপর পেইজের নাম বদলানো সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঁদা ছোড়াছুড়িও করে কেউ কেউ। যাইহোক, আমাদের সাথে দেখা করতে আসে আখতার, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ আর আহনাফ সাঈদ। হাতিরপুলের এক রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। আমাদের তরফে ছিলাম আমি আর সাদিক। তখনও সম্ভবত ছাত্রশক্তির নাম ফাইনাল হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রায় ৩ ঘণ্টা সবকিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রথমে আখতার খুব সংক্ষিপ্ত একটা ব্রিফিং দেয়। বুঝলাম যে, দলনেতা আখতার। এরপর আমি প্রশ্ন করা শুরু করি। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করেছি নানা বিষয়ে। ফিলোসফি, স্ট্র্যাটেজি, ফিউচার প্ল্যান, গোল, ন্যারেটিভ, সাপোর্ট বেইজ ইত্যাদি প্রায় সবকিছু নিয়ে। থট প্রভোকিং সব আলাপ। আমার সামনেই বসা ছিল আখতার। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আখতার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না। প্রায় সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে মাহফুজ। মাঝেমধ্যে দুই একটা বিষয় অ্যাড করেছে নাহিদ। বাকি দুইজন তথা আসিফ এবং আহনাফ ছিল শুধুই নিরব শ্রোতা।”
বিফাত বলেন, “বুঝলাম, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রায় পুরোটাই মাহফুজের ব্রেইন চাইল্ড। মাহফুজ এখানে মূল আইডিওলোগ। এই উদ্যোগের থট প্রসেস ডেভেলপ করছে সে। বাকিরা এখনও চিন্তাগতভাবে অনেক পেছনে। বিশেষত আখতার ওখানে পিওর সামনের ফেইস মাত্র। যেহেতু, ডাকসুর কারণে তার একটা পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাই তাকে সামনে রেখেই সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির নতুন পথচলা শুরু আরকি। আমাদের কাছ থেকে তারা দোয়া, সমর্থন এবং সার্বিক সহযোগিতা চাইলো। ক্যাম্পাস একটিভিজমের তখনকার যে চিরাচরিত নিয়ম, সেটির অংশ হিসেবেই সম্ভবত।”
“উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির সাংগঠনিকভাবে রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। যেকোনো কর্মসূচীতে মুহুর্তের মধ্যে একটা সংগঠিত শক্তিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে মোবিলাইজ করার ক্যাপাসিটি তৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল শিবিরের। ফলে ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠের কর্মী বাহিনি হিসেবে শিবিরের ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট এবং আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা গ্রহণ একটা ওপেন সিক্রেট বিষয় ছিল সবার মধ্যে। আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা শুধু শিবির একাই করতো তা না, আরও অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল যারা পেছনে থেকে সহযোগিতা করতো নিয়মিত,” যুক্ত করেন রিফাত।
রিফাত আরো বলেন, “সেই আঠারোর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই ব্যাপারটা ছাত্র অধিকার পরিষদের অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার ছিল। জিনিসটা সমন্বয় করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক। যেমন: আঠারো সালের দুইটা আন্দোলনে পেছনের ব্রেইন হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলো শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক শামীম রেজায়ীসহ বেশ কয়েকজন। যাইহোক, আমি ওদেরকে সাহস দিলাম। সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতে বললাম। কয়েকদিন পর ওদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। আখতারকে আহবায়ক, নাহিদকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় বডি এবং আসিফকে আহবায়ক ও বাকেরকে সদস্য সচিব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রস্তুত করা হলো।”
তিনি বলেন, “বিধিবাম হলো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর। মাহফুজ আচানক আখতার, নাহিদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বসলো। আমি তখনও জানতাম না, ঝামেলা কী নিয়ে। পরে কিছু কিছু জিনিস জেনেছি বিভিন্নজনের কাছ থেকে। এরপরে ক্যাম্পাস এক্টিভিজমে বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই গেছে। অক্টোবরেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তা ঠিক করা নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা গেছে। মানব পতাকা তৈরীর কর্মসূচী ফ্লপের কাহিনি হয়েছে। পরের বছর মার্চে প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে হামলা কেন্দ্রিক গণ-ইফতার কর্মসূচী, তারপর জুনে নতুন করে আবার কোটা আন্দোলন।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে সকল সংগঠনকে ছাপিয়ে নতুন ব্যানার তৈরী হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, যেখানে সামনের ফেইস হিসেবে ছাত্রশক্তি, শিবির (যদিও শিবির তখনো প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে ছিল না), ছাত্র ফেডারেশন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ডিবেট সার্কিটের পোলাপান, সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট সবাই ছিল। সেখানে কোনো হায়ারার্কি ছিল না। মূখ্য সমন্বয়ক বলে কেউ ছিল না। কোনো একক নেতৃত্বই ছিল না। সবাই ছিল স্রেফ সমন্বয়ক। শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক ব্যক্তি ছিল, কিন্তু সাদিক কায়েম বা ফরহাদের মতো নেতৃস্থানীয় কেউ ছিল না। এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে পর্যন্তও সমন্বয়ক লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা বলেন, “যদিও প্রথম সমন্বয়ক তালিকা ঘোষিত হয় ৮ জুলাই। পরে ১৭ জুলাই আখতারকে গ্রেফতার করা হয়। আমার ধারণা, আব্দুল কাদেরকেও তখন শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করতো ইন্সটিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথী এবং জনশক্তি হিসেবে। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা আরো বলেন, “ছাত্রশক্তি তার সেই সংক্ষিপ্ত নয় মাসের জার্নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নানাবিধ অ্যাক্টিভিটিতে শিবিরের সাথে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও প্রচ্ছন্ন সমন্বয় করে চলেছে। সেই সমন্বয় ও সম্পর্কে জোয়ার-ভাটা থাকলেও কখনও তা শত্রুতায় রূপ নেয় নাই। কাঁদা ছোড়াছুড়ি তো অনেক দূরের বিষয়। আজকে অবশ্য সবাই পলিটিক্স শিখে গেছে। এমন ভাব যেন তখন তারা শিবিরের কাউকে চিনতো না। নিজের সাবেক দায়িত্বশীল/নেতাকেও কামড় মারতে কারো তর সইছে না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুন্দর।”
পাল্টা জবাবে আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি যখন সত্য প্রকাশ করলাম, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অপকর্ম, অপরাজনীতি তুলে ধরলাম; তখন আমার যুক্তিকে খণ্ডন না করে ওরা প্রচার করতে লাগলো, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, আমি নাকি ছাত্রলীগ, আমি নাকি ডাকসুর জন্য এমন করি! সত্যকে মোকাবিলা করার সৎ সাহস যাদের নাই, তারাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে নিয়ে এসে ঘায়েল করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। গত ৫ বছরের জার্নিতে হাসিনা রেজিমও এইভাবে সত্যকে মোকাবিলা করতো না। তবে যে যা-ই বলেন, সত্য প্রকাশে এক চুলও পিছপা হবো না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই, সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।”
তিনি বলেন, “হাসিনার আমলে হলে থাকতে পারি নাই, বাহিরে দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছি, হামলা-মামলার শিকার হইছি, জেল খাটছি, জেলে যাওয়ার কারণে একাডেমিক ইয়ার লস হইছে। এতোকিছুর পরেও একটা দিনের জন্যও লড়াই থেকে পিছু হটি নাই। সকালে মাইর খাইছি, বিকেলে আবার রাজপথে ফিরে আসছি। আর্থিক অনটনও আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারো কাছে একটাবারের জন্যও হাত পাতি নাই। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নানান কথা ছড়ান। আমার আল্লাহ জানে, আমি আমার আর্থিক এবং উদ্দেশ্যের জায়গায় কতটুকু সৎ। যতদিন আমার ভেতরে সত্য থাকবে; ততদিন আমার বাহিরে ভয় নাই এবং ততোদিন-ই সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে...।”
এর আগে, রবিবার (৩ আগস্ট) আব্দুল কাদের এক ফেসবুক পোস্টে ঢাবি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম ঢাবিতে ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন এমন একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন হামলাকারী নেতাকে শিবির বলে দাবি করেন।
তবে পরবর্তীতে সাদিক কায়েম তার ফেসবুক প্রোফাইলে পাল্টা পোস্টে আব্দুল কাদেরের দাবি করা ছাত্রলীগ নেতারা কখনো শিবির করতেন না বা ৫ আগস্টের পরে শিবিরের কোন কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে হওয়া ব্যক্তিগত আলাপের স্ক্রিনশট আব্দুল কাদের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে নিন্দা জানান তিনি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী