আমাদের সুযোগ দিলে একদিন ভালো হবে: মিরাজ
Published: 9th, July 2025 GMT
পালাবদলের সময় চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিগ ফাইভ যাদের বলা হয়, তাদের ছাড়া এবারই প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ।
মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক আগের থেকেই দলের সঙ্গে নেই। তামিম ইকবাল অবসর নিয়েছেন। সরে গেছেন মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহও। সাকিব আল হাসান অবসর নেননি তবে খেলার অবস্থাতে নেই। ২০ বছর পর তাদের একজনও নেই।
প্রথম সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হার। যেনতেন পরাজয় নয়। স্রেফ আত্মসমর্পণ। নতুন অধিনায়ক, একাধিক তরুণ ক্রিকেটার, অনভিজ্ঞ দল…বিষয়গুলোকে সামনে এনে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সময় চাইলেন। অভয় দিলেন, এই দলই একদিন বড় হয়ে উঠবে।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মিরাজ বলেছেন, ‘‘আমাদের দল তরুণ; তাদের সময় প্রয়োজন। সুযোগ দিলে, একদিন ভালো হবে।’’
কলম্বোতে ৭৭ রানে হেরে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে ফেরায় সমতা। গতকাল ক্যান্ডিতে দুই দলের চ্যালেঞ্জ ছিল সিরিজ জয়ের। লঙ্কানরা সেই চ্যালেঞ্জ জিতে যায় সহজে। বাংলাদেশ আরেকটি হতশ্রী পারফরম্যান্সে ম্যাচ হেরে যায়।
বোলিং ভালো হলেও ব্যাটিং আবার ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। ২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ ৩৯.
নিজেদের বোলিং নিয়ে মিরাজ তৃপ্তির কথাই শোনালেন। বিশেষ করে তিনশর নিচে তাদেরকে আটকে রাখতে পারাকে বড় করেই দেখছেন তিনি, ‘‘আমি মনে করি আমরা শেষ ১০ ওভারে ভালো বোলিং করেছি। যদিও এখানে বোলিং করা সহজ ছিল। উইকেট অসাধারণ ছিল। তাসকিন, মোস্তাফিজুর ও স্পিনাররা ভালো করেছে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বঞ্চিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্য অন্যায়ভাবে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিগত সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চাকরিতে বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও প্রতিহিংসার শিকার হওয়া অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এ সময় কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ, কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ শফিউল আজম এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মুহাম্মদ শাফকাত আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক উপস্থিত ছিলেন।
কতজনের জন্য কী কী সুপারিশপ্রেস উইং জানায়, কমিটি মোট ৭৩৩টি আবেদন পায়। যাচাই-বাছাই করে ১৪৫টি আবেদনের ব্যাপারে সুপারিশ করে। তাঁদের স্বাভাবিক অবসর দেওয়া, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১১৪ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর দেওয়া, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। এর মধ্যে চারজনকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
নৌবাহিনীর ১৯ জন কর্মকর্তাকে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
এ ছাড়া বিমানবাহিনীর ১২ জন কর্মকর্তাকে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
যা বললেন প্রধান উপদেষ্টাপ্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আপনাদের এই কাজটি করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল সামান্য কিছু অনিয়ম হয়তো হয়েছে, কিন্তু আপনারা যে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে এনেছেন, তা রীতিমতো ভয়াবহ। এটা কল্পনার একেবারে বাইরে।’
এ সময় কমিটির প্রধান আবদুল হাফিজ জানান, আবেদনপত্র পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি গত ১৯ আগস্ট প্রথম সভা আহ্বান করে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সেন্ট্রাল অফিসার্স রেকর্ড অফিস, আইএসপিআর, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়। নিজ নিজ বাহিনী গঠিত বোর্ড যাঁদের বিষয়ে সুপারিশ করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো নৈতিক স্খলনজনিত শাস্তি কিংবা অভিযোগ ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ ছিল না।
এই কমিটি নিজ নিজ বাহিনী গঠিত বোর্ডের সুপারিশ আমলে নিয়ে সেগুলোর বাইরেও বিবেচনা উপযুক্ত আবেদনগুলোয় প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং আবেদনকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সুপারিশ করেছে।
কমিটির অনুসন্ধানপ্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, আবেদনকারীদের মধ্যে ছয়জন কর্মকর্তাকে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অপবাদ দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিভিন্ন মেয়াদে (১ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত) গুম করে রাখা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এমনকি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, পরে ওই কর্মকর্তার স্ত্রীকে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এক বছরের শিশুসহ বিনা বিচারে দুই দফায় দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের নারকীয় ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে একটি ভুয়া ঘটনা (ব্যারিস্টার তাপস হত্যা প্রচেষ্টা মামলা) সাজিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে। পাঁচজন কর্মকর্তা ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইতে কর্মরত থাকাকালে তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে কিংবা বিনা অভিযোগে চাকির থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিছু কর্মকর্তা বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে প্রশ্ন করার জন্য সেনাসদর কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একপর্যায়ে ওই দরবারে ব্যাপক হইচই ও হট্টগোল হওয়ায় পাঁচজন কর্মকর্তাকে অযথা দায়ী করা হয় এবং তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চারজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (লেফটেন্যান্ট পদবির) ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার কারণে তাঁদের কোনো একটি দলের অনুসারী হিসেবে অথবা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় বলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে।