মিক্সড মার্শাল আর্টে নামছেন রোনালদো
Published: 1st, December 2025 GMT
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বয়স এখন ৪০ বছর। আগামী বছর যে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা খেলবেন, সেটা পরিষ্কার করে বলেছেন গত মাসেই। সিএনএন উপস্থাপককে তখন রোনালদো নিজের অবসরের সময়টাও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেন। পর্তুগিজ কিংবদন্তি কিছুদিন আগে থেকেই বলছিলেন, শিগগির অবসর নেবেন। সিএনএন উপস্থাপককে রোনালদোর ব্যাখ্যা ছিল, ‘শিগগিরই বলতে আমি এক–দুই বছরের কথা বলেছি।’
আচ্ছা, অবসর নেওয়ার পর রোনালদো কিসে মজতে পারেন? আল নাসর তারকার মাঠের বাইরে তো ব্যবসা–বাণিজ্যের অভাব নেই। হোটেল, জিম, ফ্যাশন, সিনেমা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ আছে তাঁর। কিন্তু রোনালদো যে ধরনের মানুষ, অবসর নেওয়ার পর তাঁর এসব ব্যবসায় পূর্ণ মনোযোগ না দেওয়ার সম্ভাবনা হয়তো বেশি। নিজে যেহেতু খেলোয়াড়, তাই খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছুতে হয়তো বেশি মনোযোগ দিতে পারেন। আর সেটা হতে পারে সম্ভবত মিক্সড মার্শাল আর্ট (এমএমএ) লড়াইয়ের জগৎ।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার অপেক্ষায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারকে টেকসই সমাধান বের করতে হবে
ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাকে মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। অথচ দশকের পর দশক ধরে আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা খাত গৌণ বিষয় হিসেবেই থেকে গেছে। এর একটা চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত হতে পারে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর–সুবিধা পেতে ভোগান্তি বাড়ার ঘটনাটি। শিক্ষকেরা সারা জীবন ধরে পড়ান, সমাজের নানা জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন, অথচ অবসরের পর তাঁদেরকেই প্রাপ্য সুবিধার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়—এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবসর ও কল্যাণসুবিধা পান। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের অবসর–সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই সুবিধা পেতে তিন–চার বছর সময় লেগে যায়। স্কুলপর্যায়ের ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন, তাঁরা সুবিধা পেয়েছেন। কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। অবসর–সুবিধার জন্য নিষ্পত্তি না হওয়া আবেদনের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৭৫। আর কল্যাণ ট্রাস্টের ক্ষেত্রে ৪৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অপেক্ষায় আছে। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরাই এখান থেকে টাকা পেয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে যে অবসরে যাওয়ার পর অবসর–সুবিধা পেতে শিক্ষকদের তিন–চার বছর পার হয়ে যাচ্ছে। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ–সুবিধা কম। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরও শোচনীয়। ফলে বেশির ভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষককে নিম্ন বেতনে কষ্ট করেই জীবন চালাতে হয়। অবসরের পর সময়মতো অবসর ভাতা না পাওয়ায় তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা ও বিয়ে, হজ ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্রত পালনে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতেই জানা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষক অবসর–সুবিধার টাকা পাওয়ার আগেই মারা যান।
এই ট্র্যাজিক বাস্তবতা সৃষ্টির কারণ হলো তহবিল–সংকট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবসর–সুবিধার জন্য ৭ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তহবিলের ঘাটতিটা এত বড় অঙ্কের হলো কীভাবে? শিক্ষক–কর্মচারীদের অবসর–সুবিধার টাকাটা কীভাবে আসবে, তার একটা উপায় ঠিক করা আছে। অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা মিলিয়ে প্রতি মাসে শিক্ষকদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এ ছাড়া প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। বাকি টাকা সরকারের থোক বরাদ্দ ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা অবসরের পর যে সুবিধাটা পান, এর বেশির ভাগটাই নিজেদের অর্থ।
শিক্ষকদের অবসর–সুবিধার ক্ষেত্রে তহবিলের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বন্ড করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা অপ্রতুল। শিক্ষকেরা অবসরের পর ছয় মাসের মধ্যেই যাতে তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধাগুলো বুঝে পান, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা আশা করি, অবসরে যাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষককেরা প্রতিদিন যেসব রূঢ় ও দুঃসহ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন, সরকার অনুধাবন করে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেবে। তবে মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ এ ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নয়। সরকারকে অবশ্যই টেকসই সমাধান বের করতে হবে।