বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি, উৎপাদন এলাকাতেই মরিচের কেজি ৩০০ টাকা
Published: 12th, July 2025 GMT
মেহেরপুরে টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের খেতে পানি জমে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। উৎপাদন এলাকাতেই প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
আজ শনিবার সকালে মেহেরপুর শহরের কাঁচাবাজার, হোটেল বাজারের কাঁচা পট্টি, গাংনী পৌর শহরের তহবাজার ও মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তিন দিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। উৎপাদক কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে, ফলে খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে কৃষকেরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে, ফুল ঝরে পড়ছে। জমিতে পানি জমে থাকায় গাছ মারা যাচ্ছে। ফলে ফলন কমে গেছে, দাম বেশি হলেও তারা লোকসানে পড়েছেন।
গাংনী উপজেলার তহবাজারের ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, আজ সকালে কাচা মরিচ পাইকারি কিনতে হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে ৩০০ টাকা পড়বে। অতিমাত্রার বৃষ্টি হলে কাঁচা মরিচের গাছ মরে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মরিচের খেত প্যাপলব্লাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পাতা কুকড়িয়ে যায়। এতে সেসব জমিতে কাঁচা মরিচ ধরে না।
মেহেরপুর শহরের খুচরা ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচ ছিল ৫০ টাকা কেজি। এখন কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই, না হলে এতটা দাম বাড়ত না। পাইকারি ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঠে মরিচের বেশির ভাগ গাছ শুকিয়ে গেছে। যে কয়েকটি জায়গায় মরিচখেত এখনো টিকে আছে, সেগুলোর মরিচই বাজারে আসছে, তাই দাম বেশি।
গাংনী উপজেলার মাইলমারি গ্রামের কৃষক সরাফত হোসেন, ফকির মিয়া ও সুরাত মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে বেশির ভাগ কৃষকেরা ৩ থেকে ৪ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। টানা বৃষ্টির কারণে অনেক মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। এতে গাছের ফুল ঝরে যাচ্ছে। ফলে মরিচও কম ধরছে। এবার দাম কিছু বেশি হলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, কাঁচা মরিচ সাধারণত উঁচু জমিতে চাষ করতে হয়। তবে টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে থাকলে গাছ মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মরিচখেতে দ্রুত ছত্রাকনাশক প্রয়োগের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের চমক, চূড়ান্ত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী
প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুলনা-১ আসনে বড় চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটির হিন্দু শাখার নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা এমরান হোসাইন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের এ কৌশলের মধ্যে দিয়ে আসনটিতে নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি।
আরো পড়ুন:
‘আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি’
লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানার ওসি পদে রদবদল
এর আগে বুধবার বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে জেলার কর্মী সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
জামায়াতের হয়ে প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণ নন্দীও। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে এবারই প্রথম অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এক মাস ধরে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে অবশেষে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার ‘জামায়াতে ইসলাম সনাতনী‘র সভাপতি। এ উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রায় এক বছর ধরে গোলাম পরওয়ারের ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষ্ণ নন্দী বলেছেন, ‘আমাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের আমিরসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি তাদের নির্দেশনা পেয়েছি। এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করব।”
এর আগে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। তাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “বুধবার জামায়াতের আমির আমাদের দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আমার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন। জামায়াতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”
ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি এবং স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “কঠোরভাবে আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায় ও সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধি আনার দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে এটি করছি, হঠাৎ নয়।”
আগের সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন বলে অভিযোগ তার। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা এই এলাকায় তিনি জামায়াত করার কারণে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে খুলনা-১ আসনে মাওলানা মো. আবু ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জামায়াত।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “গত ১ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। পরে আগের প্রার্থী মাওলানা ইউসুফকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। মাওলানা ইউসুফও আমার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।”
খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম বলেন, “খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে সবাই দাঁড়িপাল্লার হয়ে কাজ করবেন।”
সাবেক প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণ নন্দীর বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। তার পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক