সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন ও শীতের ছুটি পেছানো নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এ পরিস্থিতে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপরীতমুখী অবস্থানে ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ নেই।

গত রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, শাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী কার্যক্রমও শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে ১৩ নভেম্বর রাতে শাকসু নির্বাচনের তারিখ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারণের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করেন একদল শিক্ষার্থী। পরদিন উপাচার্য নির্বাচন ১৭ ডিসেম্বর আয়োজনের ঘোষণা দেন। সেদিনই তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামেন ওই শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে নামেন ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মজলিস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও।

আরও পড়ুনপ্রার্থীদের লাগবে ডোপ টেস্ট, অনলাইনে ব্যক্তি আক্রমণ ও গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা১৭ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিন রাতে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। নির্বাচন এগিয়ে আনা হবে—এ আশ্বাসে তাঁরা ভোর পৌনে চারটার দিকে মুক্ত হন। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতের ছুটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৭ তারিখ ভোট গ্রহণ রেখেই গত রোববার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর প্রতিবাদে গত সোমবার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন ‘তারিখ এগিয়ে আনার দাবিতে’।

অন্যদিকে গত রোববার উপাচার্যকে দেওয়া স্মারকলিপিতে নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময়ের কথা পুনরায় বলেছেন শাবিপ্রবি ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘সহিংস সন্ত্রাসবাদী’ উল্লেখ করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল। অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠকেরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে ক্যাম্পাসে কার্যত দুটি পক্ষ দেখা যাচ্ছে। ছাত্রদলের দাবি নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, আর ছাত্রশিবিরসহ সমমনা অন্যদের দাবি ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের। দুই পক্ষের এই বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে তফসিল ঘোষিত হলেও কার্যত নির্বাচনী মাঠে তেমন আমেজ দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুনশাকসু নির্বাচনের তারিখ প্রত্যাখ্যান, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাকসু নির্বাচন আমরা যৌক্তিক সময়ে চেয়েছি। কারণ কোনো কোনো বিভাগে ফিল্ড ওয়ার্ক, কোনো বিভাগে পরীক্ষা চলছে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কিংবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আয়োজনের দাবি জানিয়েছি। যারা যৌক্তিক সময়ের আগে নির্বাচন চাইছে, তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। তারা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়।’

ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাসুদ রানা বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজন সব সাধারণ শিক্ষার্থীর দাবি। এরপর ছুটিতে বাসায় চলে যাবেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা চলে গেলে তো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এরপর নির্বাচন আয়োজন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।’

দুই সংগঠনের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে শাকসু নির্বাচন আয়োজনের শঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোমিন উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের মূল ফোকাসটিই যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধি বাছাই করা। সে ক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সময় নির্ধারণ হওয়া উচিত। নয়তো নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার জায়গাটিই সত্য হবে।’

জানতে চাইলে শাকসুর নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী নিয়মিত কাজ করছি। আমরা আশাবাদী সব ছাত্রছাত্রী, সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো শঙ্কা আমরা দেখছি না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ড স ম বর ছ ত রদল অবস থ ন ম বর র প রথম গ রহণ তফস ল

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে গ্যারেজে থাকা বাসে আগুন দিল সন্ত্রাসীরা

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ইটেরপোল এলাকার একটি গ্যারেজে মেরামতের জন্য রাখা নিপু পরিবহনের বাসে আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্যারেজ মালিক দিদারসহ তিনজনকে আটক করেছে। 

গাড়ির মালিক মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন বলেন, “কয়েকদিন ধরে দিদারের গ্যারেজে মেরামত কাজ চলছিল বাসটির। আজ ভোরে কে বা কারা আমার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে যন্ত্রাংশসহ প্রায় ৯৫ শতাংশ মালামাল পুড়ে গেছে। আগুনে ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।” 

আরো পড়ুন:

ছাতকে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

নেত্রকোণায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই

তিনি বলেন, “এই বাসটি ছিল আমার একমাত্র আয়ের অবলম্বন। বাস চালিয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতাম। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন পথে বসার উপক্রম। আমি ন্যায়বিচার চাই। যারা আমার সর্বনাশ করেছে, তাদের শাস্তি দাবি করছি। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করছি।”

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, “বাসে আগুন দেওয়ার পেছনে কারা জড়িত এবং এটি পরিকল্পিত নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়িটি পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা উৎঘাটন ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ