জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনে হামলায় জড়িত ১৮৯ জনকে সাজা
Published: 5th, August 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১৮৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১০ বর্তমান শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ৭৯ জন। তাঁদের আজীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক সনদ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৪ জুলাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে, ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলের সামনে এবং ওই রাতেই উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ২২৯ প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী জড়িত থাকার কথা বলা হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে সিন্ডিকেটের সভা শুরু হয়, শেষ হয় গভীর রাতে। পরে গতকাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। ৩৭ জনকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার, ৮ শিক্ষার্থীকে ১ বছর ও ৬ মাসের জন্য ১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে যাঁদের পড়াশোনা আগেই শেষ; কিন্তু হামলায় জড়িত ছিলেন, এমন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৩ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছে। আর ৬ শিক্ষার্থীর সনদ দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় ২০ বর্তমান শিক্ষার্থী ও ২০ প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়ছে।
আরও পড়ুনজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের ২৮৯ নেতা-কর্মী সাময়িক বহিষ্কার১৮ মার্চ ২০২৫উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান আরও বলেন, এসব ঘটনায় জড়িত বহিরাগত সন্ত্রাসী, পরিকল্পনাকারী ও ক্যাম্পাসে আগত পুলিশ সদস্যদের কার্যকলাপ শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের আওতায় পড়ে না। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনটি আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়া ৪০ শিক্ষার্থীর বিষয়ে অধিকতর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আবদুর রব বলেন, হামলার সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার ভিডিও, ছবি বা কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না মেলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও তাঁদের জড়িত থাকার কোনো সূত্র দেখা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথে ভাঙল ৩ দশকের অচলায়তন
দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তনের অবসান ঘটিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (১৮সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করান উপাচার্য ও জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
আরো পড়ুন:
অব্যবহৃত ও অতিরিক্ত ব্যালট ফেরত নেওয়া হয়েছে: জাকসু নির্বাচন কমিশন
জাকসুর ২৫ পদের ২০টিতেই শিবিরের জয়
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে প্রচেষ্টা ছিল সুষ্ঠু জাকসু বাস্তবায়নের। যারা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করছেন মিডিয়ায়, তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, আমাদের কাছে ভোটগ্রহণের সব ফুটেজ আছে। আমরা যে কাউকে তা দেখাতে প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, “যেকোনো ব্যক্তির সম্মানের চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বড়। আমি আশা করব, যদি কেউ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানির চেষ্টা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজন মিলে আমরা তা প্রতিহত করব।”
এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহসের অন্যতম সুষ্ঠু ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করে উপ-উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চার ধারা তৈরি হয়েছে। আমি আশাবাদী তোমাদের (নির্বাচিত প্রতিনিধিরা) ওপর য়ে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।”
শপথ গ্রহণ পরবর্তী বক্তব্যে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এই বিজয়ের দাবিদার আমাদের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা। যারা তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। জাকসু নির্বাচনের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর অবদান আছে। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। আমি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি জাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি অংশীজন উপকৃত হবেন।”
এসময় জাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি আবদুর রশিদ জিতু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা সব ধরনের চাপকে মোকাবেলা করে জাকসু নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছেন। ৩৩ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নির্বাচন বন্ধ ছিল না। কেবল ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ ছিল। তবে আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই আসুন আমরা সবাই মিলে জাহাঙ্গীরনগরের স্বার্থে কাজ করি।”
জাবি উপাচার্য ও জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র হারিয়ে গিয়েছিল। তার পুণরুদ্ধার শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে; জাকসু ও ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা এই নির্বাচন বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী