জি-৭ ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ—কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।

এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৫০–এ দাঁড়াবে। প্রশ্ন উঠছে, এ স্বীকৃতির বাস্তবিক অর্থ কী? এতে আসলে ফিলিস্তিনের কতটুকু লাভ হবে? এর আগে ১৪৭টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তা ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিন একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।

বহু দেশের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিন কিংবা গাজা উপত্যকার নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন কখনোই থামেনি। এমনকি বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সৃষ্ট চলমান অবরোধ সেখানে দুর্ভিক্ষ রূপ লাভ করেছে। ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি সহায়তা সেখানে পৌঁছানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আজ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় হাজার শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিন নামের ক্ষতকে পৃথিবী আর আড়াল করতে পারবে না ৩১ অক্টোবর ২০২৪

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরে গাজায় অন্তত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ইসরায়েলের নৃশংসতায় প্রায় দেড় লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষকে হতে হয়েছে পঙ্গু আহত ও উদ্বাস্তু। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি হয়েছেন শরণার্থী।

বিশ্লেষকের মতে, জি-৭ ভুক্ত উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই কূটনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তবে সেটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, ফিলিস্তিনির পক্ষে স্বীকৃতি দেওয়া আগের ১৪৭ দেশের মতো এই তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও একধরনের প্রতীকী। এ প্রতীকী স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত স্বাধীনতা কতটুকু আনতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

ফিলিস্তিনের পক্ষে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা দিন দিন হয়তো আরও বাড়বে, তবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যর ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য এ স্বীকৃতি অনেকটা ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটের পেছনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক নীতি এবং সমর্থনই মূলভাবে দায়ী।

অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ও ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতা

ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের (১২৯৯-১৯২২) একটি প্রদেশ। শত শত বছর ধরে খ্রিষ্টান জনগণ ও মুসলমানরা ফিলিস্তিনে পাশাপাশি বসবাস করতেন। সেখানে ছোট একটি ইহুদি গোষ্ঠীও বাস করত।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে মিত্রশক্তির টার্গেটে পরিণত হয়। এ সময়ে অটোমানদের আরব প্রদেশগুলোতে ধীরে ধীরে আরব জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।

আরবরা অনুভব করে তুর্কিরা তাদের ওপর শাসন করছে এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষা উপেক্ষা করছে। সুযোগটি ব্রিটিশরা কাজে লাগায় এবং আরব ও তুর্কিদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে।

ব্রিটিশরা আরবদের স্বপ্ন দেখায়, আরবরা অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে যুদ্ধ শেষে আরবদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেন সহায়তা করবে {ম্যাকমোহন-হুসেইন চিঠিপত্র (১৯১৫-১৬)}। আরবরা ব্রিটিশদের এই ফাঁদে পা দেয়। ঠিক একই সময়ে ব্রিটেন ফ্রান্সের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি করে, ইতিহাসে যেটি সাইক্স-পিকো চুক্তি (১৯১৬) হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুনফ্রান্স কেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, আসল কারণ কী২৯ জুলাই ২০২৫

অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ চুক্তি সম্পন্ন হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ঐকমত্যে পৌঁছে যে যুদ্ধোত্তর অটোমান ভূখণ্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। ব্রিটেন পাবে ইরাক ও ফিলিস্তিন আর ফ্রান্স পাবে সিরিয়া, লেবানন, দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া (তুরস্ক) ও মসুলের (ইরাক) কিছু অংশ।

এ চুক্তিতে রাশিয়া পরে যুক্ত হয় এবং তারা পায় কনস্টান্টিনেপল (ইস্তাম্বুল), আর্মেনিয়া ও কুর্দিস্তানের কিছু অংশ। সাইক্স-পিকো চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও তা পরে ব্রিটেন দখল করে নেয়।

রাশিয়া পরে এ চুক্তির বিষয় ফাঁস করে দিলে বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আসে। ওই বছরেই আরবরা ব্রিটিশদের সহায়তায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আরবরা মক্কা, জেদ্দা, দামেস্ক ও অন্যান্য শহর দখল করে নেয়।

এর পরের বছর ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব আর্থার বেলফোর ঘোষণা দেন যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ‘ইহুদি জনগণের একটি জাতীয় আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম হয়।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

সভায় ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংকের গতি ধীর করা এবং যে নম্বর বা এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবা) অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাচাইয়ের পর এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে। তবে ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি (গ্রাহকের পরিচয় যাচাই) সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন

কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধে বিটিআরসি থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল দেওয়া শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাদের ওয়েব ব্রাউজার ও এডসেন্স সেটআপ করবে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভেটিং শেষে তা সংশ্লিষ্ট সব গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা অনুমোদনের পর প্রকাশ করা হবে।

সভায় তিনি আরও জানান, অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় ৫ হাজার এমএফএস হিসাব ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সরকার এখন একটি কমন ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম ও অপারেটরদের সমন্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারি করা হবে।

সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করলে জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে যারা জুয়া খেলছে, তাদের শনাক্ত করাও জরুরি।

সভায় অনলাইন স্ক্যাম ও জুয়া প্রতিরোধে মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়।

সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ