‘গাড়িটা নৌকার মতো ভাসতেছিল, ড্রাইভাররে বললাম দরজার লক খুলে দিতে’
Published: 6th, August 2025 GMT
ঘরে রাখা সাতটি লাশ ঘিরে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। তবে বিছানায় শুয়ে থাকা বৃদ্ধ আবদুর রহিমের কোনো সাড়াশব্দ নেই। কেবল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল পানি। স্ত্রী, শাশুড়ি, তিন নাতনি ও দুই পুত্রবধূকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
আজ বুধবার সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপালী এলাকার কাসারি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। এর আগে ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের পূর্ব জগদীশপুর এলাকায় একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস খালে পড়ে আবদুর রহিমের পরিবারের সাত সদস্য নিহত হন। রহিমের ওমানপ্রবাসী ছেলে আবদুল বাহারকে নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা।
খালে পড়ে গাড়িটা নৌকার মতো ভাসতেছিল, ড্রাইভাররে বললাম দরজার লক খুলে দিতে। সে লক খুলে দিলে সবাই সাঁতার কেটে বের হতে পারতাম। কিন্তু ড্রাইভার লক না খুলে নিজে একটা জানালা দিয়া বের হইয়া গেছে। আমরা কয়েকজন পরে জানালা ভেঙে বের হইছি। আমার মা-মেয়েসহ বাকিরা গাড়িতেই শেষ।আবদুল বাহার, ওমানপ্রবাসীনিহত ব্যক্তিরা হলেন—আবদুর রহিমের শাশুড়ি ফয়জুন নেসা (৮০), স্ত্রী খুরশিদা বেগম (৫৫), পুত্রবধূ কবিতা বেগম (৩০) ও লাবনী বেগম (৩০) এবং নাতনি রেশমি আক্তার (১০), মীম আক্তার (২) ও লামিয়া আক্তার (৯)।
চৌপালী এলাকার কাসারি বাড়িতে পাশাপাশি সাতটি ঘর। একপাশে চৌচালা একটি টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস আবদুর রহিমের। সরেজমিনে বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সাত সদস্য নিহতের খবর পেয়ে ঘরটিতে কয়েক শ মানুষ ভিড় করেছেন। উঠানেও মানুষের জটলা। ঘরে লাশগুলো ঘিরে বেশ কিছু নারী-পুরুষ আহাজারি করছেন। বিছানায় শুয়ে থাকা আবদুর রহিমকে অনেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কোনো জবাব নেই তাঁর। একপর্যায়ে বিছানা থেকে কোলে করে তাঁকে উঠানে নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে দেন কয়েকজন স্বজন।
উঠানে কান্না করতে দেখা যায় আবদুর রহিমের ওমানপ্রবাসী ছেলে বাহারকে। স্বজনদের নিজের দেশে ফেরার দিনে এমন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তিনি। বাহার বলেন, ‘আমি ফিরে আসছিলাম সবাইরে বুকে জড়িয়ে ধরতে, অথচ চোখের সামনে সবাইরে হারাই ফেললাম। কারে ছেড়ে কারে বাঁচাব বুঝতে পারি নাই, আমি এখন কারে নিয়ে বাঁচব।’
সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যুর খবরে ভিড় করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা। আজ সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপালী এলাকার কাসারি বাড়িতে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুতে শিবিরের ইশতেহার, ১২ মাসের ২৪ প্রস্তাবনা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। প্রতি মাসে দুইটি করে দফা বাস্তবায়ন করতে চায় প্যানেলটি।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
তাদের ইশতেহারের বিষয় গুলো হলো- জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন, মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংস্কার, শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারেপ, লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সম্প্রসারণ ও সংস্কার, শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকীকরণ, প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন, চিকিৎসা কেন্দ্রর আধুনিকীকরণ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা, নিরাপদ ক্যাম্পস, পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণ, নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা, টিচার্স ইভ্যালুয়েশন, তথ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, অন ক্যাম্পস জব, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষা, সংস্কৃতির বৈচিত্র্যায়ন, হাইজেনিক স্যানিটাইজেশন, ক্রীড়া উন্নয়ন, সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠন, ক্লিন অ্যান্ড গ্রীন ক্যাম্পাস এবং অপরাধ দমন।
এছাড়া ইশতেহারে সাতটি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলে জোর দিয়েছে প্যানেলটি। সেগুলো হলো, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, আবাসন সংকট নিরসন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, তথ্যসেবা ও আধুনিকায়ন, সকল অংশীজনের মাঝে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি, সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ।
অন্যদিকে সাতটি বিষয়কে ‘না’ বলেছে এই প্যানেল। সেগুলো হলো- ৫০ টাকা হল ফি, হল দখল ও সিট-বাণিজ্য, ট্যাগিং ও ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি, ফ্লাটশেমিং-সাইবার বুলিং ও শারীরিক নির্যাতন, ধর্মীয় বিদ্বেষ, মাদক ও ছিনতাই, সন্ত্রাস ও সহিংসতা।
এ সময় সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “আমরা যেই ইশতেহারটা দিয়েছি তার একটি চার্ট আমরা ক্যাম্পাসে টানিয়ে দিব। প্রতি মাসে যেই দুইটা ইশতেহার পূরণ করা হবে, সেখানে আমরা টিক চিহ্ন দিয়ে দিব। আমরা কথা দিয়ে কথা রাখতে চাই। এটি আকাশ কুসুম কোনো প্রস্তাবনা নয় । আমরা এই সংস্কার বাস্তবায়ন করবো। এছাড়া এর জবাবদিহিতার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকবো।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী