রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ পরীক্ষা সম্পন্ন
Published: 6th, August 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের টারবাইনে বাষ্প সরবরাহকারী পাইপলাইনের ‘কোল্ড অ্যান্ড হট’ পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হয়েছে। পরীক্ষার পর টারবাইনে বাষ্প সরবরাহের জন্য পাইপলাইনগুলো কার্যকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আজ বুধবার বিকেলে রাশিয়ার পরমাণু সংস্থা রোসাটম একটি বেসরকারি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পে দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার আগে এ জাতীয় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে টারবাইন যন্ত্রপাতির নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়। দুই মেগাপ্যাসকেল চাপ ও ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পের সাহায্যে ব্লো-ডাউন প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করা হয়। নকশার চাহিদা অনুযায়ী প্যারামিটারগুলো নির্বাচন করা হয়। পাইপলাইনে কোনো ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ময়লা ও আবর্জনার কণা এবং আর্দ্রতা অবশিষ্ট থাকলে তা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ পরীক্ষা চলাকালে বায়ুমণ্ডলে সবেগে বাষ্প নির্গত হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ তৈরি হয়। বিষয়টি আগে থেকেই স্থানীয় জনগণকে জানানো হয়েছিল। পরবর্তী ধাপে বাষ্প সরবরাহকারী পাইপলাইনকে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করতে অধিক পরিমাণ বাষ্প ব্যবহার করে এই ব্লো-ডাউন প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করা হবে। এতে কার্যক্রম চলাকালে যে লোড পড়বে, তার প্রায় কাছাকাছি লোডে যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান এতমস্ত্রয় এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সি ডেইরি জানান, এ গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সম্পন্ন হওয়ায় রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু ও গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। সর্বাধুনিক রুশ ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টরভিত্তিক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটটি আগামী কয়েক দশক ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, যা বর্তমান চাহিদার মোটামুটি প্রায় ১০ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পপ র প প রকল প সরবর হ পর ক ষ ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।