কেব্লস ব্যবসায় আসছে আকিজবশির গ্রুপ
Published: 7th, August 2025 GMT
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো আকিজবশির গ্রুপ। কেব্লস উৎপাদনে আসছে আকিজবশির গ্রুপ। এ জন্য এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস নামে একটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আকিজবশির গ্রুপ ও এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আকিজবশির গ্রুপ।
এই চুক্তির আওতায় আকিজবশির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘আকিজবশির এনার্জি লিমিটেড’ কেব্লস উৎপাদনে যুক্ত হবে। চলতি বছরের মধ্যেই বাজারে তাদের উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ শুরু হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আকিজবশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তসলিম মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বালু নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাঁধের কাজ বন্ধ
চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধের ৫০৪ কোটি টাকার নির্মাণকাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে ছয়টি কাজের মধ্যে তিনটি শুরু হয়নি। দুটি অংশে কাজ শুরু করলেও বালু, সিমেন্টসহ মালামাল সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বাধা পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালু, সিমেন্টসহ নির্মাণ উপকরণ সরবরাহ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। এর জেরে শ্রমিকদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ নামে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। আনোয়ারা অংশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হলেও বাধা এসেছে বাঁশখালী অংশে।
বাঁশখালী উপজেলায় চারটি এলাকায় নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা। চারটি এলাকাকে (সাধনপুর, খানখানাবাদ, বাহারছড়া ও ছনুয়া) ছয়টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একক ও যৌথভাবে ছয়টি কাজ পেয়েছে। বাঁশখালী অংশে রয়েছে ৬ দশমিক ৪১ কিলোমিটার বাঁধ ও ঢালু এবং ১ দশমিক ১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ।
গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৫ থেকে ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি ৩ শতাংশের কম।
পাউবোর প্রকল্পের নথিপত্রেও নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে স্থানীয় রাজনৈতিক সমস্যাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে পণ্য পরিবহনে সমস্যা, বালু উত্তোলনে বাধা ও লবণ চাষের কারণে ব্লক তৈরির মাঠ না পাওয়া।
বালু সরবরাহে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব
বাঁশখালী অংশের ছয়টি কাজের দুটি পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)। এগুলোর মধ্যে উপজেলার খানখানাবাদের ১ হাজার ৩০০ মিটার বাঁধ ও ঢাল সংরক্ষণের কাজ করছে যৌথভাবে ওয়েস্টার্ন-পিডিএল (প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড)। ছনুয়ার ২ হাজার ৮০০ মিটারের কাজ করছে পিডিএল-আরএফএল।
পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, দুটি অংশেই বাঁধের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিডিএল। ছনুয়ায় ব্লক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছিল।
কিন্তু রাতের আঁধারে তাঁদের মারধর করা হয়। খানখানাবাদের জন্য আনা শ্রমিকদের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর সব শ্রমিক চলে গেছেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসব ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
নির্মাণকাজে বড় বাধা এসেছে বালু সরবরাহ নিয়ে। এ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এর জের ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বালু সরবরাহ নিয়ে স্থানীয় মেসার্স থ্রি পয়েন্টের সঙ্গে তালুকদার ট্রেডিংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। থ্রি পয়েন্টের অংশীদারেরা হলেন চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফ ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম।
অভিযোগ রয়েছে তাঁদের পেছনে আছেন খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সিকদার। জানতে চাইলে থ্রি পয়েন্টের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
অপর পক্ষে তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী হিসেবে আছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ।
থ্রি পয়েন্টের অংশীদার সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম বলেন, বালু সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছেন। কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বালু সরবরাহ করছেন। কিন্তু কাইদুল ওয়াদুদ, আশরাফ ও শাহেদ নামের কয়েকজন ছেলে কার্যাদেশ না পাওয়ার পরও বালু নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজি হয়নি। এরপরও তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে বালু খালাস করতে চাওয়ায় অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে।
তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ বালু সরবরাহে কার্যাদেশ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক মাস ধরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বালু নিচ্ছিল, যা লবণপানি দিয়ে খালাস করা হচ্ছিল।
মানহীন পণ্য ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। তিনি প্রথম আলোকে লিখিতভাবে জানান, বাঁধ নির্মাণের বালু, পাথর, রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল খালাস করতে গেলে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কিছু সরবরাহকারী বালু ও ইট সরবরাহের কাজ নিলেও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে। মান উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও তা গ্রহণ করতে চাপ দিতে থাকে। এরপর বাইরের সরবরাহকারীদের কাজ দিলে স্থানীয় পক্ষটি আবার পণ্য খালাসে বাধা দিতে থাকে। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষের অন্তঃকোন্দলের কারণে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধান না হলে প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য হবে।
সরেজমিনে খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালুর বিশাল স্তূপ রাখা আছে এবং ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব লোকমান হাকিম বলেন, বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রাণের দাবি স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালীর ছয়টি কাজের মধ্যে বর্তমানে সাধনপুর অংশে কাজ চলমান রয়েছে। বাকি পাঁচটিতে কাজ হচ্ছে না।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাঁশখালী অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণে নিয়ে নানা ধরনের বাধা আসছে। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষ বালু, সিমেন্ট, শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। হুমকি দিচ্ছে। এসব কারণে কাজই শুরু করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণকাজের সময় পিছিয়ে যাবে।