জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ।

বাকি চার আসামি হলেন ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো.

রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান, রামপুরা থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।

পাঁচ আসামির মধ্যে শুধু চঞ্চল গ্রেপ্তার আছেন। বাকি চার আসামি পলাতক।

আরও পড়ুনডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল১৭ ঘণ্টা আগে

গতকাল বুধবার প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ছাত্রকে গুলি করা, একটি শিশুর মাথায় গুলি লাগা এবং শিশুটির দাদি নিহতের ঘটনায় মামলাটি হয়। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে।

আজ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করল প্রসিকিউশন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের খাতায় নাম তাঁর রাবেয়া, কারাগারে মর্তুজা

ইয়াবাসহ এক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে চালাকি করে পুলিশের কাছে নিজের পরিচয় গোপন করেন ওই নারী, দেন ভুল নাম-ঠিকানা। পুলিশও সেই নাম-ঠিকানা অনুযায়ী মামলা করে। মাদক মামলাটিতে কারাগারে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় ওই নারী জামিনে মুক্তি পান। এরই মধ্যে মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য আসামির নাম-ঠিকানা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠান তদন্ত কর্মকর্তা। তবে সেখান থেকে জানানো হয়, ঠিকানাটিতে ওই নামের কোনো নারীই নেই।

গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া গোলচত্বর এলাকায় ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ৩১০টি ইয়াবাসহ ওই নারী গ্রেপ্তার হন। মামলার এজাহারে তাঁর নাম লেখা হয়েছে রাবেয়া বেগম, বাবার নাম ফরিদুল আলম, বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামু থানার হোয়াইগারকাটা গ্রামে। মামলার বাদী বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কিশোর মজুমদার।

এদিকে পুলিশ খুঁজে না পেলেও কারাগারে নেওয়া আঙুলের ছাপে ওই নারীর আসল পরিচয় উঠে আসে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) অনুযায়ী, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ওই নারীর নাম বেগম মর্তুজা হোসাইন। তিনি কক্সবাজারের সদর উপজেলার দক্ষিণ মুহুরীপাড়ার নুর হোসেনের স্ত্রী। তাঁর বাবার নাম মাহবুবুল আলম।

প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করেন ওই নারী। সেখানে নামঞ্জুর হলে গত ২৭ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। সেখানেও জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে গত সোমবার একই আদালত তাঁকে জামিন দেন। সেদিনই কারাগার থেকে বেরিয়ে যান ওই নারী।

কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পরদিন ২০ আগস্ট মাদক মামলার আসামি ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করেন ওই নারী। সেখানে নামঞ্জুর হলে ২৭ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। সেখানেও জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে গত সোমবার একই আদালত তাঁকে জামিন দেন। সেদিনই কারাগার থেকে বেরিয়ে যান ওই নারী।

ভুল নাম-ঠিকানা দিয়ে ওই নারীকে আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কিশোর মজুমদারের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আটকের পর আসামি যে নাম-ঠিকানা বলেছেন, সেই অনুযায়ী এজাহারে লেখা হয়েছে। আসামি সঠিকভাবে নাম-ঠিকানা দিয়েছেন কি না কীভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে কিশোর মজুমদার বলেন, আসামিকে আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠানোর তাগিদ থাকায় দ্রুত এজাহার দিয়ে দেওয়া হয়।

মামলাটির তদন্ত করছেন বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক ফরহাদ মকিম। জানতে চাইলে ফরহাদ মকিম প্রথম আলোকে বলেন, ওই আসামির প্রকৃত নাম-ঠিকানা তিনি জানেন না। এজাহারে থাকা ঠিকানা সঠিক নয় বলে সংশ্লিষ্ট থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাই মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে ওই নারীর ঠিকানা বের করার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। কারাগারে আঙুলের ছাপে ওই নারীর প্রকৃত পরিচয় উঠে আসার বিষয়টিও জানা নেই বলে জানান ফরহাদ হাকিম।

আসামি স্বীকার করেছেন জামিনে বেরিয়ে যাতে আর ধরা না পড়েন, সে জন্য আসল পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়েছেন।—মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার।

কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৭ জনকে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আসা অন্য নতুন আসামির মতো বন্দী রাবেয়া বেগমেরও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভিন্ন নাম-ঠিকানা আসে। তাঁর প্রকৃত নাম পাওয়া যায় বেগম মর্তুজা হোসাইন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে ২৮ আগস্ট আদালতকে জানানো হয়েছে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, আসামি স্বীকার করেছেন জামিনে বেরিয়ে যাতে আর ধরা না পড়েন, সে জন্য আসল পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামি যে নাম-ঠিকানা দেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা চৌকিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচাই-বাছাই করা উচিত। ভুয়া ঠিকানায় আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা গেলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া আসামির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর নিয়ে সঠিক নাম-ঠিকানা দেওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, এজাহারে নাম-ঠিকানা লেখার আগে পুলিশকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। একই সঙ্গে গাফিলতিকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিদেশে সম্পদের নথি খুঁজতে দুদকের অভিযান, ২৩ বস্তা কাগজপত্র জব্দ
  • ভাঙ্গায় সহিংসতার ঘটনায় এবার ২১ জনের নামে হাইওয়ে থানায় মামলা
  • পুলিশের খাতায় নাম তাঁর রাবেয়া, কারাগারে মর্তুজা