যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণায় ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ
Published: 7th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। নতুন এ বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু উৎপাদন কার্যক্রম ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোগ্রাম’(এএমপি)।
ভারত বর্তমানে অ্যাপলের পণ্যের চূড়ান্ত সংযোজনের (অ্যাসেম্বল) অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর একটি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনটি আইফোনের একটি ভারতে তৈরি হয়। যদি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এর প্রভাব ভারতেও পড়তে পারে। ভারত ও অন্যান্য দেশে অ্যাপলের উৎপাদন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বক্তব্যের কারণে এ উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে।
ভারত থেকে আসা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর অ্যাপলের বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে এসেছে। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কারণ দেখিয়ে ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপ করেছেন।
ভারতের ওপর প্রভাবঅ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন বাড়াতে চায় এবং সেখানে ভালো মানের সরবরাহকারীদের একটি শক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়। বর্তমানে ভারতে অ্যাপলের কর্মযজ্ঞ মূলত শেষ ধাপে পণ্যের সংযোজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের বেশির ভাগ কাঁচামাল চীন ও তাইওয়ান থেকে আসে। তবে ভারত সরবরাহব্যবস্থাকে মজবুত করে সরবরাহকারীর সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। স্বল্প সময়ে অ্যাপলের এই পদক্ষেপ দেশটির পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের স্মার্টফোন রপ্তানি বেড়ে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে এই হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। একই সময়ে স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ধরে রাখা চীনের রপ্তানি ৮২ থেকে কমে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যমানের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হলো স্মার্টফোন। তবে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে ভারতে তৈরি অ্যাপল আইফোনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের মুঠোফোন রপ্তানির বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে এই আইফোন।
এপ্রিলে একাধিক দেশের ওপর পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মুঠোফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যকে শুল্কের বাইরে রাখে। তবে নতুন করে এসব পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র অ য পল র র ওপর আইফ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।