সচরাচর এমন করে কেউ বলে না। নাথান ক‌্যালি শুধু বললেনই না, সাহস দেখালেন। স্পষ্ট করে বললেন, দেশের ক্রিকেটারদের ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ঘাটতির বড় কারণ ভালোমানের ট্রেনারের অভাব।

বাংলাদেশের স্ট্রেন্থ অ‌্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান ক‌্যালি ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশে যুক্ত। জাতীয় দলের সঙ্গেই কেবল কাজ করছেন। তবে স্থানীয় ট্রেনারদের নিয়ে তার সুস্পষ্ট ধারনা হয়ে গেছে এরই মধ‌্যে।

ক্রিকেটারদের যারা ট্রেনিং করাবেন, আন্তর্জাতিক মানের করে তুলবেন তাদের সংখ‌্যাটা খুব বেশি নয়। ফলে উঠতি ক্রিকেটার, জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা ক্রিকেটার এবং বয়সভিত্তিক দলের ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার পথটা মসৃণ নয় তা আঙুল তুলে দেখালেন অস্ট্রেলিয়ান এই ট্রেনার।

আরো পড়ুন:

ক্রিকেটের উন্নতির দিকেই নয়, ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশ

‘হাজার কোটি টাকা থাকলে বিপিএলে আসা উচিত’

মিরপুরে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ক‌্যালি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে আমাদের অ্যাথলেটিসিজম উন্নতি করার পথে মূল চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে… আমার মনে হয়, এখন আমাদের সম্ভবত তিনজন খুব উঁচু মানের স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ আছেন, যারা বিসিবির চাকরিতে আছেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে হয়তো এমন ট্রেনারের সংখ্যা ২০-৩০ জন।”

সার্বিক উন্নতির জন‌্য ট্রেনারদের তাড়না, অধ‌্যবসায়ের ঘাটতি দেখেন না তিনি। তবে দেশের ক্রিকেটের সংস্কৃতি, প্রক্রিয়া, এগিয়ে যাওয়ার ধরন নিয়ে তার মনেও প্রশ্ন আছে। তবে দিনকে দিন উন্নতি হচ্ছে সেই আশাও দেখালেন তিনি—

“আমাদের এখানে স্থানীয় অনেক ট্রেনার আছেন, যাদের তাড়না অনেক ও কঠোর পরিশ্রম করছে। আমার বড় দায়িত্ব হলো তাদের স্কিল গড়ে তোলায় সহায়তা করা। তবে দিনশেষে, এটা তো গোটা সিস্টেমের ব্যাপার। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের ট্রেনাররা এমনিতে ভালো কাজ করেন। কিন্তু এটা প্রতিনিয়ত উন্নতির ব্যাপার, সেটা শুধু ক্রিকেটারদের নয়, গোটা ক্রিকেট সিস্টেমেরই। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বছরজুড়ে কঠোর পরিশ্রম করা ও শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখা নিশ্চিত করতে একটি সিস্টেম গড়ে তোলার পথে আমার মনে হয় আমরা বেশ উন্নতি করেছি।”

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এবারও কি হযবরল বিপিএলই হবে

শুরু থেকেই বিতর্ক সওয়ার হয়ে থাকায় বিপিএলের স্লোগান হতে পারে—‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। এবারও তার ব্যতিক্রম না হওয়ারই শঙ্কা। ৩০ নভেম্বর খেলোয়াড় নিলাম, তার চার দিন আগেও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে নাই–বা কেন!

গভর্নিং কাউন্সিলের শর্ত পূরণ করে যে আজ পর্যন্ত টাকাপয়সার নিশ্চয়তাই পুরোপুরি দিতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাই খোদ গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান বলতে বাধ্য হচ্ছেন, ‘আমরা ফায়ার ফাইট করছি।’

বিপিএলের দ্বাদশ আসর শুরু হবে ১৯ ডিসেম্বর। এবার শুরুতে খেলা হবে সিলেটে। তার আগে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন ইফতেখার। তবে মিনিট চল্লিশেকের সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে পরিষ্কার হয়েছে, বিপিএল নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর তাঁর নিজের কাছেই নেই। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি তা স্বীকারও করেছেন। শেষে এমন প্রশ্নও উঠেছে—এ রকম হযবরল অবস্থায় টুর্নামেন্ট আয়োজন ঝুঁকিপূর্ণ কি না? ইফতেখার অকপটে বলেছেন, ‘আমি আপনার প্রশ্নের সঙ্গে সহমত পোষণ করি।’

২০১২ সাল থেকে বোর্ডের অধীন যখন বিপিএল হয়েছে, প্রায়ই দেখা গেছে, বিসিবি কঠোর সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না। আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকলেও ফিক্সিংয়ের বিষবাষ্প ছড়ানোর আশঙ্কা থাকলেও স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতেও ছাড় দিয়েছে বোর্ড। এবারও একই লক্ষণ।

পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম আগেই ঘোষণা হয়েছিল। পরে সময় পেরিয়ে নেওয়া হলো নোয়াখালী এক্সপ্রেস নামের ষষ্ঠ ফ্র্যাঞ্চাইজি। ইফতেখার জানিয়েছেন, কোয়াবের অনুরোধে আরও বেশি ক্রিকেটারকে সুযোগ দিতেই একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনিই আবার বলছেন, নবাগত নোয়াখালী এক্সপ্রেসসহ দু-তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনো বিসিবির সব আর্থিক শর্ত পূরণ করেনি।

শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে এই মৌসুমে ২ কোটি টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ছাড়াও ১০ কোটি টাকা করে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। উদ্দেশ্য, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটারদের টাকা না দিলে যেন সেখান থেকে বিসিবি তা নিশ্চিত করতে পারে।

আরও পড়ুনফ্র্যাঞ্চাইজি সংকটে পিছিয়ে গেল বিপিএল নিলামের তারিখ১৯ নভেম্বর ২০২৫

কিন্তু সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়নি। কেউ নগদ চেক দিয়েছে, কেউ পে-অর্ডার, কেউ দিয়েছে আংশিক। গভর্নিং কাউন্সিলও যা পাচ্ছে, তা–ই নিচ্ছে। কেন নিচ্ছে? ইফতেখার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে পারছে না। তাহলে প্রশ্ন, বিসিবি এমন শর্তই–বা দিল কেন, যা মানা যাবে না বলে তারা নিজেরাই জানে!

বিপিএলের সব ক্ষেত্রে বরাবরই বিশ্বাসের অভাব, এবারও সেই ধারা অব্যাহত। টাকাপয়সার ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ওপর আস্থা দেখাতে পারেননি ইফতেখার। তাই জানিয়ে রেখেছেন, কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি সময়মতো (সময়টা কখন শেষ হবে, তা অবশ্য বলেননি) সব টাকা না দিলে ৩০ নভেম্বর তাদের নিলামের টেবিলে বসতে দেওয়া হবে না।

তাহলে কি দল কমে যাবে? না, গভর্নিং কাউন্সিল নাকি বিকল্পও ভেবে রেখেছে। মালিক না পাওয়া দল হলে চালাবে বিসিবি নিজেই। আরও বিস্ময়কর তথ্য—৬টি ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে ২ থেকে ৩টির দায়িত্ব নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও নাকি রাখা আছে বিসিবির!

আরও পড়ুনতড়িঘড়ির বিপিএলে আবারও বিপদের শঙ্কা০৭ নভেম্বর ২০২৫

আগের মতো ইফতেখার আজও বলেছেন, ভালো প্রতিষ্ঠানকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের আর্থিক অবস্থা যাচাই করা হয়েছে। কেউ ফিক্সিং বা অন্য কোনো কারণে সন্দেহভাজন কি না, তা যাচাই করতে আইসিসি ও দেশের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। সবাই নাকি সব দিক দিয়ে ‘ক্লিয়ার’।কিন্তু আর্থিক অবস্থা এত ভালো হলে বিসিবির শর্ত তারা মানতে পারছে না কেন? ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে’ খোঁজ নিয়ে লাভই-বা হলো কী!

ইফতেখারের কথায় অসহায়ত্ব, ‘আমাদের যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে তো সব ঠিক আছে...।’

গত বিপিএলে ওঠা ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করে বিসিবি গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত সন্দেহভাজন খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের খেলা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

কিন্তু বিসিবি সেই পরামর্শও মানছে না। অভিযুক্তরা থাকছেন এবারের বিপিএলেও, যাতে মনে হতে বাধ্য—বিপিএলে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে ইফতেখার অবশ্য ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণা নেই’ বলে হাতই গুটিয়ে নিলেন।

আরও পড়ুনবিপিএলের নিলাম হবে কীভাবে, কীভাবে বাড়বে ক্রিকেটারদের দাম১১ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ