রাশিয়া কেন নিষিদ্ধ, ইসরায়েল কেন নয়—সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলকে সব ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানোর পর থেকে বিতর্ক আরও বেড়েছে। স্পেনের সরকার মনে করে, গাজায় অভিযানের নামে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

কিন্তু আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) জানিয়েছে, ইসরায়েল অলিম্পিক সনদ মেনে চলে। এ কারণে ইসরায়েলি খেলোয়াড়েরা এখনো অলিম্পিক, বিশ্ব অ্যাথলেটিকস, ফুটবলসহ প্রায় সব প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতে পারছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এটিকে মেলানো যাবে না। যদিও রাশিয়ার খেলোয়াড়দের নিরপেক্ষ পতাকা নিয়ে ২০২৬ শীতকালীন অলিম্পিকে খেলার অনুমতি দিয়েছে আইওসি।

অলিম্পিক সনদ কী বলে

অলিম্পিক সনদ হলো আইওসি ও প্রতিটি দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার নিয়মাবলি। সনদের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি জাতীয় অলিম্পিক কমিটি শুধু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের ভেতরেই কর্তৃত্ব চালাতে পারবে (যুদ্ধ করতে পারবে)।

২০২২ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালান। রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটি ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর (যেমন দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খারকিভ, খেরসন ইত্যাদি) ক্রীড়া ফেডারেশনকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সীমান্ত পরিবর্তিত হয় এবং সনদ ভঙ্গ হয়।

অন্যদিকে ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় নতুন করে হামলা চালানোর পর তাদের অলিম্পিক কমিটি কখনো ফিলিস্তিনের ক্রীড়া ফেডারেশনকে নিজেদের অধীন দাবি করেনি বা নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেনি। অর্থাৎ ইসরায়েল অলিম্পিক সনদ মেনে চলছে।

রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের চার দিন পর আইওসি ঘোষণা দেয়, রাশিয়া ও তাদের মিত্র বেলারুশকে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না। যদিও দেশ দুটির খেলোয়াড়েরা জাতীয় পতাকা, সংগীত ও প্রতীক বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ পতাকা ব্যবহার করে খেলে যাচ্ছেন। তবে সেটা শুধু টেনিসে।

রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়েরা অলিম্পিক, বিশ্বকাপ, ইউরোর মতো বড় আসরে খেলতে পারছেন না। দেশ দুটির ক্লাবগুলোকেও চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগে নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা।

রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও কলকাঠি নেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ রাশিয়ার ওপর কঠোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

পাশাপাশি আইওসি অভিযোগ তুলেছিল, বেইজিংয়ে ২০২২ সালে শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালে কার্যকর থাকা অলিম্পিক যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে রাশিয়া।

ইসরায়েলের ক্ষেত্রে

গাজায় বর্বরতা চালানোর কারণে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হলেও আইওসি বলছে, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে তারা কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেনি।

আইওসি মনে করে, ইসরায়েলকে বাদ দেওয়া হলে সেটা বিপজ্জনক উদাহরণ হবে। তাদের মতে, অলিম্পিক গেমস হলো শান্তির জায়গা, যেখানে সংঘাতে জড়ানো দেশগুলোও একসঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

আইওসির সদস্য হুয়ান আন্তোনিও সামারাঞ্চ বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে, নয়তো টিকে থাকতে পারব না।’ আইওসির নতুন সভাপতি ক্রিস্টি কভেন্ট্রি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা অলিম্পিক চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে আইওসি যে যুক্তিই তুলে ধরুক, রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা ও ইসরায়েলকে খেলতে দেওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই দ্বিচারিতা মনে করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইসর য় ল দ ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে