চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন
Published: 20th, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ দুই পদ—সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকে (জিএস) ৯টি প্যানেল কোনো ছাত্রীকে মনোনয়ন দেয়নি। কেবল একটি প্যানেল জিএস পদে এক ছাত্রীকে প্রার্থী করেছে।
প্যানেলগুলো শীর্ষ পদে নারী প্রার্থী না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলছে, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ ও সাংগঠনিক দুর্বলতা। তবে ছাত্রীরা মনে করছেন, মূল সমস্যা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি এবং সব সময় নারীকে পিছিয়ে রাখার প্রবণতা।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে। তাদের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাসনীম জাহান শ্রাবণ। তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগতাসনীম জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না।’
আগামী ১২ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চাকসুর মোট ২৮ পদের মধ্যে নির্বাচিত হবেন ২৬ জন। পদাধিকারবলে সভাপতি থাকবেন উপাচার্য। আর কোষাধ্যক্ষ পদে সভাপতিই একজন শিক্ষককে মনোনীত করবেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ভোট হচ্ছে এ সংসদে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থাকা ছাত্রীরা শীর্ষ পদে প্রার্থী না হওয়ায় বিস্ময় তৈরি হয়েছে। চাকসু নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই বেশি। সংগঠনগুলো যদি নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিত, তবে নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন সুর শোনা যেত। এখন আলোচনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা নয়, বরং তাঁদের অনুপস্থিতিই বেশি আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১০টি প্যানেলের মধ্যে ২৬০ পদের মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৩৭ জন।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে।মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অন্তত দু-তিনটি প্যানেলে ভিপি বা জিএস পদে নারী থাকবে। শেষ পর্যন্ত কেবল এক প্যানেল রাখল। এটা হতাশাজনক।’
শীর্ষ পদে নারী না থাকার বিষয়ে বড় ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নারীদের এগিয়ে নিতে। এ কারণে দুজনকে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আর ভিপি ও জিএস পদে যাঁদের মনোনীত করা হয়েছে, তাঁদের আমরা বেশি যোগ্য মনে করেছি।’
ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে শীর্ষ একটি পদে একজন ছাত্রীকে মনোনয়ন করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান নাতাসনীম জাহানসাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে শীর্ষ পদে কোনো ছাত্রী রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান দ্রোহ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি জানান, সাংগঠনিকভাবে তাঁরা দুর্বল অবস্থায় আছেন। সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক ইসরাত হক সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন। এ কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।
নারীদের শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ত শ র ষ পদ দ র বল প রথম স গঠন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
এক অধ্যাপকের কাছেই অসহায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে সাম্প্রতিক অচলাবস্থা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এর জন্য দায়ি করা হচ্ছে বিভাগের বিএনপিপন্থি অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিনকে।
বিভাগটির চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিনের অসহনশীল আচরণ, আইনি নোটিশ এবং প্রশাসনের অস্থিরতা; সব মিলিয়ে নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। প্রশাসন এতটাই চাপে পড়েছে যে, বিভাগটিতে চেয়ারম্যান নিয়োগে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম রক্ষা না করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫-এর ১১(১০) ধারার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিভাগের বাইরে থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষকসহ ৩৯ জনকে শোকজ
গাইবান্ধায় নদীতে ভাসমান স্কুলশিক্ষিকার লাশ উদ্ধার
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভাগটিতে অধ্যাপক থাকতে একজনের আইনি হুমকির কাছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কেন এতটা অসহায়?
জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্যের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ১১ দিন পার হয়ে গেলেও নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে পারেনি প্রশাসন। এতে বিভাগে কার্যত প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থমকে যায়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ, থিসিস তত্ত্বাবধান ও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাজে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বিভাগে দায়িত্বশীল কেউ না থাকায় সমস্যা একের পর এক বেড়ে যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ এর ধারা ২৪-এ বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে। উপ-ধারা (২) অনুযায়ী- বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে ৩ বছর মেয়াদে উপাচার্য কর্তৃক বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, আইনে উল্লিখিত ‘পালাক্রমে’ শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে, অধ্যাপকগণ একজনের পর আরেকজন, ধারাবাহিকভাবে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে এমনভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন, যাতে সবাই পর্যায়ক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ারম্যান অথবা বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় একই আইন বিদ্যমান। তবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদবী পর্যন্ত চেয়ারম্যান অথবা বিভাগীয় প্রধান হওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।
তারা বলেন, আইনানুযায়ী দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের ‘পালা’ এখনো পাননি এমন যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকই উপাচার্য কর্তৃক চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। যদি সব যোগ্য শিক্ষক চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের পালা শেষ করার পরে আর কেউ অবশিষ্ট না থাকে, তখন বিভাগের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক তার দ্বিতীয় পালায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারেন।
তারা আরো বলেন, পদোন্নতি বা নতুন নিয়োগের মাধ্যমে যদি এক বা একাধিক যোগ্য শিক্ষক বিভাগে যোগদান করেন, যারা এখনো তার/ তাদের পালা শেষ করেননি, তাহলে তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম শিক্ষকই পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। তবে প্রথম পালা শেষ করেনি এমন যোগ্য শিক্ষক না থাকলে পূর্ববর্তী দায়িত্বপালনকারীগণ পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় পালায় নিযুক্ত হতে পারেন।
এদিকে, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে বিগত দিনে অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন মাত্র দুজনই। তারা হলেন ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য ও ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। অন্য অধ্যাপক না থাকায় এতদিন তারা রোটেশন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর মধ্যে ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য তিন মেয়াদে এবং ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে এ বিভাগে নতুন করে চারজন শিক্ষক যথাক্রমে ড. মো. আবু লায়েক, ড. মো. জুলফিকার মাহমুদ, ড. সেলিনা শারমীন ও ড. মো. মনোয়ারুল ইসলাম অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত পালাক্রম চর্চা অনুযায়ী, সর্বশেষ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর নতুন অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ড. মো. আবু লায়েকের বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা।
কিন্তু আগের চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই চেয়ারম্যানের পদ দাবি করে বসেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। এ নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপও প্রয়োগ করতে থাকেন। তার নানা চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়েছে। এতে আগের চেয়ারম্যানের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কয়েকদিন পরও বিভাগটিতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে পারেনি প্রশাসন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড পরিমল বালাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই পরিমল বালাকে আইনি নোটিশ পাঠান অধ্যাপক নাসির উদ্দিন। এতে বিব্রত হয়ে তিনিও চেয়ারম্যনের দায়িত্ব নিতে অপারগতা পোষণ করেন।
পরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫-এর ১১(১০) ধারা অনুযায়ী উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে জবি কোষাধ্যক্ষ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীনকে সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন।
এই ধারা অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে উপাচার্য যেকোনো ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন—এমনকি যদি তা প্রচলিত রেওয়াজ বা রোটেশন নিয়মের বাইরে গিয়েও হয়।
এ ধারা কার্যত ‘আপৎকালীন আইন’ হিসেবে বিবেচিত হলেও এটাকে অধ্যাপক নাসির উদ্দিন ‘কালো আইন’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগগুলোতে অধ্যাপক নিয়োগ ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সাধারণ রীতি অনুসরণ করা হয়; নতুন কেউ অধ্যাপক হলে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেমন, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞানসহ একাধিক বিভাগে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম নিজেও একই রীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করেছেন ও দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।
তারা বলেন, সিএসই বিভাগেও আগে এই রীতি মানা হয়েছে। বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য তিনবার এবং অধ্যাপক নাসির উদ্দিন দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু নতুন তিনজন অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার পরও তাদের কাউকে না করে নাসির উদ্দিনের পুনরায় দায়িত্ব দাবি অযৌক্তিক ও স্বার্থান্ধ।
জবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুরো সংকটের পেছনে রয়েছে রাজনীতি ও ব্যক্তিগত অবস্থান। অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বিএনপিপন্থি সাদা দলের সংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের পরিচালক। তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি চেয়ারম্যান পদে ফের আসতে চান।
তাদের মতে, প্রশাসন তার এই চাপ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই শেষ পর্যন্ত একটি বিতর্কিত আইন ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপেক্ষতা ও নিয়মনীতি ভেঙে পড়েছে।
এ বিষয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, “সিএসই বিভাগে আমি শুনেছি রোটেশন অনুযায়ী পরবর্তীজন দায়িত্ব পান। একজন একবার দায়িত্ব পালন করলে, পরেরবার দ্বিতীয়জন দায়িত্ব পান। এরপর দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে উপাচার্য চাইলে তৃতীয়জন অধ্যাপক আবু লায়েককে দায়িত্ব দিতে পারতেন। এতে কোনো সমস্যাই হত না।”
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় বিষয়টি অযথাই বেশি করা হয়েছে। একজন অধ্যাপক ইতোমধ্যে দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন অন্যজনকে দায়িত্ব দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল। অধ্যাপক পরিমলকে তো চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডিন হিসেবে। সেক্ষেত্রে তাকে নোটিশ দেওয়া যথাযথ হয়নি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, “আইনের ১১(১০) ধারায় উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা আছে। ইচ্ছা করলে যাকে খুশি নিয়োগ দিতে পারেন। এটা এক ধরনের কালো আইনের মতো। যেমন বিশেষ আইনে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করা যায়, এভাবেই নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিভাগে এখন নতুন তিনজন অধ্যাপক আছেন ঠিকই। কিন্তু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে চেয়ারম্যান হওয়ার অধিকার আমারই রয়েছে।”
অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন বলেন, “দুই অধ্যাপকের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য মহোদয়ই বলতে পারবেন, কেন অন্য চারজন অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।”
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “আইনটা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। আগের প্রশাসনও এর আগে নানা রকম ব্যাখ্যায় নিয়োগ দিয়েছে। আমি চাই বিষয়টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে সমাধান হোক। কারণ আইনি ব্যত্যয় হলে বিশ্ববিদ্যালয় বড় সমস্যায় পড়বে। ইতোমধ্যে এক অধ্যাপক উকিল নোটিশ পাঠিয়ে আমাদের বিব্রত করেছেন।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী