চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন
Published: 20th, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ দুই পদ—সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকে (জিএস) ৯টি প্যানেল কোনো ছাত্রীকে মনোনয়ন দেয়নি। কেবল একটি প্যানেল জিএস পদে এক ছাত্রীকে প্রার্থী করেছে।
প্যানেলগুলো শীর্ষ পদে নারী প্রার্থী না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলছে, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ ও সাংগঠনিক দুর্বলতা। তবে ছাত্রীরা মনে করছেন, মূল সমস্যা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি এবং সব সময় নারীকে পিছিয়ে রাখার প্রবণতা।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে। তাদের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাসনীম জাহান শ্রাবণ। তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগতাসনীম জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না।’
আগামী ১২ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চাকসুর মোট ২৮ পদের মধ্যে নির্বাচিত হবেন ২৬ জন। পদাধিকারবলে সভাপতি থাকবেন উপাচার্য। আর কোষাধ্যক্ষ পদে সভাপতিই একজন শিক্ষককে মনোনীত করবেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ভোট হচ্ছে এ সংসদে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থাকা ছাত্রীরা শীর্ষ পদে প্রার্থী না হওয়ায় বিস্ময় তৈরি হয়েছে। চাকসু নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই বেশি। সংগঠনগুলো যদি নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিত, তবে নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন সুর শোনা যেত। এখন আলোচনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা নয়, বরং তাঁদের অনুপস্থিতিই বেশি আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১০টি প্যানেলের মধ্যে ২৬০ পদের মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৩৭ জন।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে।মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অন্তত দু-তিনটি প্যানেলে ভিপি বা জিএস পদে নারী থাকবে। শেষ পর্যন্ত কেবল এক প্যানেল রাখল। এটা হতাশাজনক।’
শীর্ষ পদে নারী না থাকার বিষয়ে বড় ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নারীদের এগিয়ে নিতে। এ কারণে দুজনকে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আর ভিপি ও জিএস পদে যাঁদের মনোনীত করা হয়েছে, তাঁদের আমরা বেশি যোগ্য মনে করেছি।’
ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে শীর্ষ একটি পদে একজন ছাত্রীকে মনোনয়ন করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান নাতাসনীম জাহানসাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে শীর্ষ পদে কোনো ছাত্রী রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান দ্রোহ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি জানান, সাংগঠনিকভাবে তাঁরা দুর্বল অবস্থায় আছেন। সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক ইসরাত হক সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন। এ কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।
নারীদের শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ত শ র ষ পদ দ র বল প রথম স গঠন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।