চট্টগ্রাম বন্দরের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বা আরএসজিটি চিটাগংয়ের (সাবেক নাম পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল) বহরে কনটেইনার রাখার নতুন একটি ইয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদনের পর সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড নামের নতুন চত্বরটির ব্যবহারও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আবার কনটেইনার খুলে পণ্য সরবরাহের নতুন শেড বা ছাউনি যুক্ত হয়েছে। নতুন করে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর যন্ত্রপাতিও ধারাবাহিকভাবে যুক্ত হচ্ছে। এতে টার্মিনালটির সক্ষমতা বাড়ছে। সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় টার্মিনালটির সেবার আওতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে এটির পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরের জুনে এই টার্মিনাল সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরএসজিটির হাতে দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম টার্মিনাল, যেটি প্রথমবার সরকারি–বেসরকারি অংশীদারির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে পরিচালনার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে টার্মিনালটির সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাতে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর হারও ছিল কম। এখন নতুন সুবিধা যুক্ত হওয়ায় টার্মিনালটি ব্যবহার করে পণ্য ওঠানো–নামানোর হার বাড়ছে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, টার্মিনালটির পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি শুধু জাহাজে রপ্তানি কনটেইনার বোঝাই করে আসছিল। স্ক্যানার মেশিন বসানোর পর গত মে মাস থেকে জাহাজের আমদানি কনটেইনার নামানো শুরু হয়। আবার টার্মিনালটিতে কনটেইনার রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খুব বেশিসংখ্যক জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছিল না। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী, সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড সময়মতো বুঝে পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

তবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত মাসে সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড ব্যবহারের সুযোগ পায় প্রতিষ্ঠানটি। এটিতে একসঙ্গে পাঁচ হাজার একক কনটেইনার রাখার জায়গা রয়েছে। এই চত্বর চালু হওয়ার পর টার্মিনালটি ব্যবহার করে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর হারও বেড়েছে। গত বুধবার টার্মিনালটির দুটি জেটিতে দুটি কনটেইনার জাহাজ ছিল। এসব জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো–নামানোর কাজ চলছিল।

আরএসজিটির তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে টার্মিনালটিতে ২৪ হাজার ৬০৭ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ওঠানো–নামানো হয়েছিল ৬ হাজার ৬৮১ একক কনটেইনার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় টার্মিনালটিতে কনটেইনার ওঠানো–নামানো বেড়েছে প্রায় ২৬৮ শতাংশ।

আরএসজিটি জানায়, ‘এলসিএল’ কনটেইনারের (এক কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য আছে এমন কনটেইনার) ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে টার্মিনালটিতে। একসঙ্গে ২৫০ একক এলসিএল কনটেইনার ব্যবস্থাপনার নতুন শেড বা ছাউনি যুক্ত হয়েছে টার্মিনালটির সঙ্গে। তাতে সবমিলিয়ে টার্মিনালটিতে একসঙ্গে ৩৫০ একক এলসিএল কনটেইনারের পণ্য রাখার সুবিধা তৈরি হয়েছে।

আরএসজিটি চিটাগং টার্মিনালে এখন সনাতন পদ্ধতিতে, অর্থাৎ জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হচ্ছে। কারণ, জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর অত্যাধুনিক চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তা সরবরাহ করতে ন্যূনতম দেড় বছর সময় লাগে। আরএসজিটি জানিয়েছে, এই অত্যাধুনিক গ্যান্ট্রি ক্রেন চারটি আগামী বছরের মার্চে টার্মিনালের বহরে যুক্ত হবে।

গ্যান্ট্রি ক্রেন আসার আগে কনটেইনার রাখার চত্বরে পরিচালন কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি বা আরটিজি ক্রেন যুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আরএসজিটি জানিয়েছে, চারটি আরটিজি ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে। আগামী মাসে এই চার ক্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপে অক্টোবরে আরও ১০টি আরটিজি আসবে, যা চালু হবে নভেম্বরে। সবমিলিয়ে ধাপে ধাপে আগামী মে মাসের মধ্যে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি যুক্ত হবে। এসব যন্ত্রপাতি সংযোজনে প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

সার্বিক বিষয়ে আরএসজিটি চট্টগ্রামের বাণিজ্য ও জনসংযোগ প্রধান সৈয়দ আরেফ সরওয়ার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘আমরা শুধু একটি টার্মিনাল গড়ে তুলছি না, গড়ে তুলছি আস্থা, দক্ষতা এবং বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য ভবিষ্যৎমুখী লজিস্টিকস হাব। টার্মিনালে দ্রুত বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বিশ্বমানের সেবা প্রদান করতে চাই। বন্দরের দক্ষতার নতুন নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে এ টার্মিনাল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক ত হয় ছ ব যবহ র র নত ন সরক র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

সভায় ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংকের গতি ধীর করা এবং যে নম্বর বা এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবা) অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাচাইয়ের পর এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে। তবে ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি (গ্রাহকের পরিচয় যাচাই) সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন

কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধে বিটিআরসি থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল দেওয়া শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাদের ওয়েব ব্রাউজার ও এডসেন্স সেটআপ করবে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভেটিং শেষে তা সংশ্লিষ্ট সব গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা অনুমোদনের পর প্রকাশ করা হবে।

সভায় তিনি আরও জানান, অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় ৫ হাজার এমএফএস হিসাব ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সরকার এখন একটি কমন ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম ও অপারেটরদের সমন্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারি করা হবে।

সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করলে জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে যারা জুয়া খেলছে, তাদের শনাক্ত করাও জরুরি।

সভায় অনলাইন স্ক্যাম ও জুয়া প্রতিরোধে মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়।

সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ