পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি হল সংসদ নেতাসহ ৬ শিক্ষার্থী
Published: 20th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সর্বশেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী।
এদের মধ্যে রয়েছেন, বিজয় একাত্তর হল সংসদের সংস্কৃতি সম্পাদক, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বাঁধনের নেতাও।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পোষ্য কোটা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতি
কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
সম্প্রতি রাইজিংবিডির অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে আসে। তবে নকল ধরার ১ মাস পেরিয়ে গেলেও দোষীদের বিরুদ্ধে আজো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট ৩০৮ নম্বর ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ ২’ কোর্সের পরীক্ষা চলাকালীন মো.
হাসিকুল ২০২১-২২ সেশনের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী। তিনি জিয়াউর রহমান হল বাঁধনের সভাপতি এবং জিয়া হলের পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) আর্মি উইংয়ের ক্যাডেট কর্পোরাল।
অভিযুক্ত জিয়া হল বাঁধনের সভাপতি হাসিকুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমি ভুল করে পকেটে করে মোবাইল ফোন পরীক্ষার হলে নিয়ে চলে গেছিলাম। পরীক্ষার হলে স্যার যখন সার্চ করতে আসেন, তখন আমি নিজেই মোবাইল ফোন বের করে দিয়ে দিয়েছি।”
একই দিন একই পরীক্ষার হলে মোবাইলসহ ২০২১-২২ সেশনের আরো দুই শিক্ষার্থীকে ধরে ফেলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম সিদ্দিকুর রহমান নিজামী। ওই দুই শিক্ষার্থী হচ্ছে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মো. মিফতাহুর রহমান ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী শরিফ আহমেদ। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিজয় ৭১ হল সংসদ নির্বাচনে শরিফ সংস্কৃতি সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
২৬ জুলাই চতুর্থ সেমিস্টারের ২০৬ নম্বর কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষায় নকল করার সময় পরিদর্শকের নিকট হাতেনাতে ধরা পড়েন ২০২২-২৩ সেশনের জসিম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান রিদম। রিদম বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও ক্রীড়া সেলের সহ-সম্পাদক।
সহপাঠীদের অভিযোগ, রিদম মোবাইল ফোন ব্যবহার করে উত্তর লিখছিলেন। এ সময় পরিদর্শক তার কাছ থেকে মোবাইল ও উত্তরপত্র জব্দ করেন। এ ঘটনায় গত ১০ আগস্ট ‘মোবাইল দেখে পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি বাগছাস নেতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডটকম।
২০ জুলাই সেমিস্টারের প্রথম পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে মোবাইলসহ নকল করার সময় পরিদর্শকের নিকট ধরা পড়েন ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী ও সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মো. রমজান আলী।
পরীক্ষার হলে বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জুবায়ের মোহাম্মদ ইহসানুল হকের নিকট শিটসহ ধরা পড়েন ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম তাহসিন।
জব্দ করা মোবাইলগুলো বিভাগের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে প্রক্টর অফিসে জমা দেওয়া হয় এবং অভিযুক্তরা এখনো তাদের মোবাইল ফেরত পাননি বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বাগছাস নেতা রিদম বলেন, “খাতা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তবে ফোন ব্যবহার করে নকল করার ঘটনা ঘটেনি। স্যার সন্দেহ করেছিলেন যে আমি নকল করেছি। পরে তিনি আমার খাতা নিয়ে কিছুক্ষণ আটকে রাখেন, এরপর আবার ফিরিয়ে দেন।”
রিদমের ঘটনাটি সত্য হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাগছাসের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের।
অভিযুক্ত জিয়া হল বাঁধনের সভাপতি মো. হাসিকুল ইসলামের বিষয়ে বাঁধনের সাংগঠনিক অবস্থান কী হবে এ বিষয়ে বাঁধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জোনের সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নুল আবেদিন বলেন, “আমরা পুরোটাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নকলের বিষয়ে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুবায়ের মোহাম্মদ ইহসানুল হক বলেন, “এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “তারা যে পরীক্ষার হলে মোবাইলসহ ধরা পড়েছে তার একমাত্র প্রমাণ হচ্ছে ওই জব্দকৃত মোবাইলগুলো। এ বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আমরা মোবাইল গুলো ফেরত না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হল র শ ক ষ র থ পর ক ষ র হল ক ল ইসল ম ব যবস থ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক