গাজা নগরীর ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী উচ্ছেদের শঙ্কা বাড়াচ্ছে
Published: 20th, September 2025 GMT
ফিলিস্তিনের ব্যাংক কর্মী শাদি সালামা আল-রাইয়েস টানা এক দশক ধরে ৯৩ হাজার ডলারের (প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা) একটি ফ্ল্যাট কেনার ঋণ পরিশোধ করে আসছিলেন। গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর অভিজাত এক এলাকায় সুউচ্চ আধুনিক ভবনের ওই ফ্ল্যাটেই ছিল তাঁর পরিবারের স্বপ্নের বসতি। কিন্তু এখন তিনি নিঃস্ব। কারণ, ইসরায়েলের এক ভয়াবহ হামলার পর তাঁকে পরিবারসহ পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের আবাসিক ভবনটি মুহূর্তেই ধসে পড়ে।
৫ সেপ্টেম্বর ১৫ তলা মুশতাহা টাওয়ারে ওই হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে গাজায় নতুন ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েলের সেনারা। গাজার বৃহত্তম ও প্রাচীনতম শহরটিতে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান শুরুর আগমুহূর্তে সেখানকার উচ্চ ভবনগুলো একের পর এক ধ্বংস করা হয়েছে। এখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ কেন্দ্রীয় শহরের দিকে এগোচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে তারা গাজা নগরীর অন্তত ২০টি সুউচ্চ ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, এসব ভবন হামাস ব্যবহার করত। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৫০টি ‘সন্ত্রাসী টাওয়ার’ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজা নগরীতে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সর্বাত্মক অভিযানে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। একই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী নগরীর জায়তুন, তুফফাহ, শুজাইয়া এবং শেখ আল-রিদওয়ানসহ একাধিক এলাকায় পুরো মহল্লা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেখ আল-রিদওয়ান এলাকায় আগস্ট থেকে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা স্যাটেলাইটে ধারণা করা ছবিতেও স্পষ্ট ধরা পড়েছে।
আল-রাইয়েসের আশঙ্কা, গাজা নগরীর বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ও (ওএইচসিএইচআর) একই মত দিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র থামিম আল-খিতান এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্থায়ী বাসিন্দাদের এভাবে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আসলে জাতিগত নিধনের (এথনিক ক্লিনজিং) শামিল।
গত বুধবার আল-রাইয়েস বলেন, ‘গাজা নগরী ছেড়ে চলে যেতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। কিন্তু বিস্ফোরণ থামছেই না। আমি সন্তানদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তাই যা পারি তা নিয়ে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছি।’ তবে স্বগতোক্তির সুরে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো পুরোপুরি গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাব না।’
মুশতাহা টাওয়ারের বাসিন্দা শাদি সালামা আল-রাইয়েস ইসরায়েলের হামলার কয়েক মিনিট আগে ফ্ল্যাট ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি পরিবার নিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর দেইর আল-বালাহে চলে এসেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গুলি বিনিময়, অস্ত্র উদ্ধার
খাগড়াছড়িতে সন্দেহভাজন এক সক্রিয় সদস্যের বাড়িতে অভিযানের সময় ইউপিডিএফ বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর গুলিবিনিময় হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলার পানছড়ি উপজেলার দুর্গম জগাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আরো পড়ুন:
সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আরো দুই মাস বাড়ল
ঝিনাইদহে ১টি বিদেশি রিভলবার উদ্ধার
সংস্থাটি জানায়, পাহাড়ি সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী দীর্ঘমেয়াদি অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের অংশ হিসাবে শনিবার সকালে টহল দল এলাকার ইউপিডিএফের এক সন্দেহভাজন সক্রিয় সদস্যের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায় সেনা সদস্যরা। এ সময় তার বাড়িতে তল্লাশি শুরু করলে এলাকায় উৎপেতে থাকা ইউপিডিএফের ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দলের সাথে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে সেনা সদস্যদের সঙ্গে টিকতে না পেরে দুর্গমতার সুযোগে সশস্ত্র দলটি পালিয়ে যায়।
পরে, তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল হতে ৮ রাউন্ড গুলিসহ ১টি রাশিয়ান পিস্তল, ২ টি ম্যাগাজিন, ২০০ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১টি ওয়াকিটকি সেট ও ইউনিফর্মসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনার সাথে জড়িত সশস্ত্র সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সব জাতিগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর এবং ভবিষ্যতেও সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ