কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে প্রতিদিন ২০–২৫ মিলিয়ন লিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর পানির স্তর ৪ থেকে ১২ মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। একসময় যেখানে ৮০-৯০ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত, এখন ১ হাজার ফুট গভীরে গিয়েও বিশুদ্ধ পানির নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি নলকূপগুলোতে ৬৫ শতাংশে লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের অরুণোদয় স্কুলের অডিটরিয়ামে বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে অংশীজনদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন। মতবিনিময় সভায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, লবণের আগ্রাসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, উখিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অজিত দাস প্রমুখ।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। কক্সবাজার শহরে বৈজ্ঞানিক ও পদ্ধতিগতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা জরুরি। পচনশীল বর্জ্য সার হিসেবে এবং অপচনশীল বর্জ্য রিসাইকেল করে অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

কক্সবাজার শহরসহ উখিয়া ও টেকনাফে সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে বলে জানান কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সুপেয় পানির বিকল্প ব্যবস্থা, স্থায়ীভাবে বর্জ্য শোধনাগার তৈরি জরুরি।

রোহিঙ্গা আগমনের কারণে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প–সংলগ্ন এলাকায় কয়েক শ চাষি আবাদি জমি হারিয়েছেন বলে জানান উখিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অজিত দাস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের কারণে চাষিরা কয়েক বছর ধরে জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। যেহেতু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, সেহেতু বর্জ্য অপসারণ করে চাষিদের জমি চাষাবাদ উপযোগী করে দিতে হবে, নতুবা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হস্তক্ষেপ জরুরি।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহম্মেদ বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের আশপাশে ৯ লাখ রোহিঙ্গার ২৫টি আশ্রয়শিবির রয়েছে। ভূগর্ভ থেকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পানি তুলতে গিয়ে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জের ঘরবাড়ির নলকূপগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে ৭০-৮০ ফুট নিচে নলকূপ বসিয়ে সুপেয় পানি পাওয়া যেত, এখন ৭০০-৯০০ ফুট নিচে গিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু নলকূপে পানি এলেও তাতে লবণমিশ্রিত, খাওয়ার অযোগ্য। লবণমিশ্রিত পানি খেয়ে গ্রামের লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কক্সবাজারের পরিবেশগত বিপর্যয় ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান নারীনেত্রী ও আইনজীবী সাকি এ কাওসার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত আট বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত এক বছরে আরও দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের পানির চাহিদা মেটাতে নাফ নদীর পানি পরিশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ন র স তর ব যবস থ বর জ য নলক প

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

সভায় ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংকের গতি ধীর করা এবং যে নম্বর বা এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবা) অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাচাইয়ের পর এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে। তবে ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি (গ্রাহকের পরিচয় যাচাই) সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন

কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধে বিটিআরসি থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল দেওয়া শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাদের ওয়েব ব্রাউজার ও এডসেন্স সেটআপ করবে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভেটিং শেষে তা সংশ্লিষ্ট সব গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা অনুমোদনের পর প্রকাশ করা হবে।

সভায় তিনি আরও জানান, অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় ৫ হাজার এমএফএস হিসাব ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সরকার এখন একটি কমন ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম ও অপারেটরদের সমন্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারি করা হবে।

সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করলে জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে যারা জুয়া খেলছে, তাদের শনাক্ত করাও জরুরি।

সভায় অনলাইন স্ক্যাম ও জুয়া প্রতিরোধে মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়।

সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ