মহালয়া উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ, মন্দিরে ভক্তদের ভিড়
Published: 21st, September 2025 GMT
পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের শুরু। আজ রবিবার মহালয়া। আর মহালয়া মানেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়া।মহালয়া দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। মহালয়া মানেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানানো। মন্দিরে-মন্দিরে পূজা দেওয়ার ভিড় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
এদিন স্থাপন করা হয় ঘট, করা হয় বিশেষ পূজা। অন্যদিকে, পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে-ঘাটে চলে তর্পণ। তর্পণের জন্য রবিবার সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ ভিড় জমেছে গঙ্গাসহ এপার বাংলার বিভিন্ন নদীর ঘাটগুলোতে।
আরো পড়ুন:
তামান্না কী আধ্যাত্মিক মানুষ?
স্যামসনের ফিফটিতে ওমানকে ১৮৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
‘মহালয়া’ শব্দটির অর্থ- মহান যে আলয় বা আশ্রয়। দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয় বা আশ্রয়। এদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপূজা শুরু হয়। কথিত আছে, মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। একই সঙ্গে শাস্ত্রমতে, এদিনই দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা। অপেক্ষা করেন উত্তরসূরিদের কাছ থেকে জল পাওয়ার জন্য। মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জলদানই তর্পণ।
কলকাতার দক্ষিণেশ্বর থেকে বাগবাজার, কুমারটুলি, আহিরিটোলা কিংবা বাবুঘাট- সকাল থেকেই ভিড় জমেছে কলকাতার বিভিন্ন ঘাটে। বিভিন্ন জেলার ঘাটগুলোর চিত্রও একই রকম। কোনো কোনো ঘাটে সকাল থেকেই তর্পণের জন্য পড়েছে লম্বা লাইন।
তর্পনের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নদীপথে চলছে টলহদারি, প্রস্তুত রাখা হয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদেরও।
এদিকে, মহালয়ার আগের দিনই পূজা উদ্বোধনে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তিনি শ্রীভূমি, টালা প্রত্যয়, হাতিবাগান সর্বজনীন সহ একাধিক বড় মণ্ডপের উদ্বোধন করেন। সূচনা হয়েছিল ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের হাতিবাগান সর্বজনীন থেকে। তবে মহালয়ার আগেই মণ্ডপ উদ্বোধন করা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, মাতৃমূর্তির উদ্বোধন তিনি তর্পণের আগে করেন না।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
ইয়াও ওয়েন আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।’
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভের ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বদা ‘ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে’। তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, থিংকট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞসহ ছয় শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিকস ও ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সংগীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।