রাজশাহীর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের ও খাওয়ার অনুপযোগী চাল ঢুকিয়ে পরে তা পাল্টে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এ কাজে জড়িত আছেন গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই। তাঁদের যোগসাজশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে চাল সরবরাহ ও পাল্টানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল শনিবার সকালে জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে চাল পাল্টানোর ঘটনা।

নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তা চুক্তিবদ্ধ মিলারদের মাধ্যমে চাল বানিয়ে সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ আছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ধান না কিনেই সরাসরি নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ধান ছাঁটাই, পরিবহন ব্যয়সহ ভালো চালের খরচ দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগসাজশ করে অসাধু কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করেছেন।

আরও পড়ুনগুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৪ সেপ্টেম্বর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম খাদ্যগুদামে অভিযান চালান। তিনি সেখানে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার অনুপযোগী চাল পান এবং তিনটি গুদাম সিলগালা করে দেন। পরে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর আগে ২৬ আগস্ট জেলার দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিনও স্থানীয় খাদ্যগুদামে অভিযান চালিয়ে অনুপযোগী চাল উদ্ধার করেছিলেন। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই গুদাম থেকে ৮০ মেট্রিক টন চাল সরানো হয়।

দুর্গাপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাগমারার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদাম থেকে ২০০ মেট্রিক টন চাল দুর্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেই চাল খারাপ হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

সূত্রমতে, এবার বোরো মৌসুমে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ২ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়। ধান থেকে চাল করার জন্য জেলার বিভিন্ন চালকলের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তির তালিকায় আছে—বাগমারার কনক চালকল, আরাফাত চালকল ও ভাই ভাই চালকল, তানোরের আবদুস সাত্তার চালকল, হড়গ্রামের বাদশা রাইস মিল, মোহনপুরের নুরজাহান চালকল, মাহফুজ চালকল ও মোল্লা চালকল। এ আটটি চালকল থেকে ১ হাজার ২১১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী নিম্নমানের চাল সরবরাহের জন্য অভিযুক্ত চালকল কালোতালিকাভুক্ত হতে পারে, তাদের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। নিজ দায়িত্বে নিম্নমানের চাল পাল্টে দেবে তারা।

কোন চালকল থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে—তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরও অনিয়মের তথ্য। মোহনপুর উপজেলার লালইস গ্রামের মেসার্স মাহফুজুর রহমান চালকলের নামে দেখা যায়, তারা ৪৮০ মেট্রিক টন ধান ভাঙিয়ে ৩১২ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছে। কিন্তু মাহফুজুর রহমান বলেন, তিনি ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদাম থেকে কোনো ধান নেননি। চালও দেননি। তাঁর বাবা মিল চালাতেন। সম্প্রতি বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি দিশাহারা হয়ে গেছেন।

ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে নিয়মবহির্ভূতভাবে জেলার বাইরে থেকে চাল এনে ঢোকানো হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ট র ক টন চ ল চ ল সরবর হ কর মকর ত ন চ লকল ব গম র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে

বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’

মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’

তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’

আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।

সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেঁয়াজের দামবৃদ্ধিতে কার পকেট ভারী?
  • ধামরাইয়ের বাজারে বাড়ছে সবজির সরবরাহ, দাম অপরিবর্তিত 
  • বালু নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাঁধের কাজ বন্ধ
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের দামে সেঞ্চুরি
  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
  • মধ্যস্থতা নিয়ে আদানির প্রস্তাবে রাজি নয় পিডিবি
  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে