১৮ জালে ধরা পড়ল মাত্র সাড়ে ৪ কেজি, সন্দ্বীপ চ্যানেলে যে কারণে কমছে ইলিশ
Published: 21st, September 2025 GMT
‘কোনো জালে একটি বা দুটি ইলিশ, আবার কোনো জাল খালি। এভাবে ১৮টি জাল মিলিয়ে ধরা পড়েছে মাত্র সাড়ে ৪ কেজি ইলিশ। অথচ ইলিশ ধরতে গিয়ে খরচ হচ্ছে দামের চেয়ে কয়েক গুণ।’ হতাশ হয়ে ঘাটে ফিরে কথাগুলো বলেন জেলে বিপ্লব জলদাস।
গতকাল শনিবার বেলা দুইটার দিকে কুমিরা ঘাটে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর জেলেপাড়ায়। মৌসুম শুরু হওয়ায় গত জুনের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জাল বসিয়েছিলেন তিনি। বিপ্লব জলদাস বলেন, ইলিশের মৌসুম শেষ পর্যায়ে। আর চার থেকে পাঁচ দিন ইলিশ পাওয়া যেতে পারে। এরপর সাগরের ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। অন্য বছর এ সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত, তবে এ বছর ইলিশ নেই বললেই চলে।
নিজের হতাশার কথা উল্লেখ করে বিপ্লব জলদাস বলেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একবার যাওয়া–আসায় তাঁর জ্বালানি তেল খরচ হয় পাঁচ লিটার। দিনে চারবার জালের কাছে যেতে হয়। তাঁর সঙ্গে চারজন শ্রমিক থাকেন। প্রতি শ্রমিকের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে দিতে হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর দিনের খরচ ছয় হাজার টাকা। কিন্তু ইলিশ বিক্রি করে কখনো দুই হাজার, কখনো তিন হাজার পান। যে সাড়ে চার কেজি ইলিশ তিনি পেয়েছেন, তা আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
‘৩৫ বছর ধরে জেলেদের থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছি। দীর্ঘ এ ব্যবসায়ী জীবনে এত কম ইলিশ দেখিনি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’—ইলিশের পাইকার নুরুল আমিন।অবশ্য শুধু বিপ্লব জলদাস নয়, সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলের অন্য জেলেদের অবস্থাও তাঁর মতো। গতকাল দুপুরে সরেজমিন কুমিরা ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারেরা বড় ছাতার অস্থায়ী ছাউনি নিয়ে ঘাটে অবস্থান নিয়েছেন। জেলেরাও ছোট খাঁচায় ইলিশ নিয়ে পাইকারের কাছে ফিরছেন। তাঁদের একজন জেলে কালাবাশি জলদাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ২১টি জাল বসাতে তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, তবে এক টাকাও শোধ করতে পারেননি। মাছ বিক্রির টাকা তেল আর শ্রমিকের খরচেই চলে যাচ্ছে।
পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা আকারভেদে ইলিশকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো ক্যানা (প্রতিটি ইলিশের ওজন ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম), মনা (২০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম), চেলি (সাড়ে ৩৫০ গ্রাম থেকে ৫৫০ গ্রাম), মাঝারি (৫৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম), বড় (৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম) ও গ্রেট (১ হাজার ২০০ গ্রামের বেশি)। এর মধ্যে মণপ্রতি ক্যানা ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় ইলিশ কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার ও গ্রেট ইলিশ এরও বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ঘাটে বড় ও গ্রেট ইলিশ হাতে গোনা কয়েকটি আসছে।
জানতে চাইলে পাইকার নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৩৫ বছর ধরে জেলেদের থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। দীর্ঘ এ ব্যবসায়ী জীবনে এত কম ইলিশ দেখেননি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
ইলিশ কিনতে ঘাটে ভিড় করছেন পাইকারেরা। তবে চাহিদার তুলনায় ইলিশ ধরা পড়ছে কম। গতকাল বেলা দুইটায় সীতাকুণ্ডে কুমিরা ঘাটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।